আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ভারতে লোকসভা নির্বাচনের ফল সামনে চলে এসেছে। দেশটিতে সরকার গঠনের ন্যূনতম ২৭২ আসনের প্রয়োজন হয়।তবে ক্ষমতাসীন বিজেপি একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি।এখন পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে, বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার এবং অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টির সমর্থন পেলে তবেই বিজেপি সরকার গড়তে পারবে।তবে ওই দুই নেতা এখন বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোটে থাকলেও দুজনই রাজনৈতিক কৌশল আর জোট বদল করতে সিদ্ধহস্ত।বিহারের মুখ্যমন্ত্রী তথা জনতা দলের (ইউনাইটেড) প্রধান নীতীশ কুমার এক সময়ে বিজেপির জোট সঙ্গী থাকলেও তিনি কয়েক বছর আগে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন। বিজেপি-বিরোধী দলগুলোকে নিয়ে ‘ইন্ডিয়া’ জোট গঠনের অন্যতম কারিগরও ছিলেন তিনি।তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে আবারও জোট বদল করে এনডিএ-তে যোগ দেন তিনি। বিহারে এখন এনডিএ-র সঙ্গে সরকার চালাচ্ছেন তিনি। লোকসভা নির্বাচনেও এ জোটে ছিল তার দল। জেডি (ইউ) বিহারে ১২টি আসন জিতেছে। আবার বিজেপিও সে রাজ্যে ১২টি আসন পেয়েছে।এনডিএর অন্য সঙ্গীদের মধ্যে এলজেপি (রাম বিলাস) পাঁচটি এবং জিতন রাম মাজির দল একটি আসন পেয়েছে। অর্থাৎ বিহারে এনডিএ পেয়েছে মোট ৩০টি আসন। পূর্ণিয়ায় নির্দল প্রার্থী পাপ্পু যাদব একটি আসনে জয়ী হয়েছেন।অন্যদিকে অন্ধ্রপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী চন্দ্রবাবু নাইডুর তেলুগু দেশম পার্টি বা টিডিপি পেয়েছে ১৬টি আসন। লোকসভা নির্বাচনের পাশাপাশি ওই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হয়েছিল। টিডিপি বিধানসভার ১৭৫টি আসনের মধ্যে ১৩৫টিতে জিতে বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে। টিডিপি আগে থেকেই এনডিএর শরিক।ঘটনাক্রমে নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডু দুজনই কিছুদিন আগ পর্যন্তও মোদী সরকার-বিরোধী অবস্থানে ছিলেন। এ কারণেই এনডিএ জোটে তারা এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছেন।সরকার গঠন করতে হলে মোদী ও বিজেপিকে এখন পুরনো এ জোটসঙ্গীদের সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে চলতে হবে। মোদীর সামনে এখন নতুন চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরনোর পরে নীতীশ-নাইডু এখন ‘কিংমেকার’। প্রবীণ সাংবাদিক সঞ্জীব শ্রীবাস্তব বলছেন, নীতীশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুর ক্রাচ ছাড়া এ সরকার চলতে পারবে না এবং নীতীশ কুমার তো বাতাসের দিক বদলের মতো জোট বদলে ফেলেন।তিনি বলছেন, তারা দুজনই পুরানো ওস্তাদ খেলোয়ার এবং অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। দুজনেরই নির্দিষ্ট রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা রয়েছে। এ ক্ষমতার সমীকরণে তারা নিজেদের পাওনা বুঝে নেবেন। তারা নিজেদের দাবি তুলে ধরে বলবেন যে আমাদের এটা চাই, তবেই জোটে থাকব।গত ১০ বছর যখন সরকার চালিয়েছেন নরেন্দ্র মোদী, তখন ক্ষমতা পুরোটাই তার এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের হাতেই থেকেছে, অন্য কেউ ক্ষমতার কেন্দ্রে ছিলেন না। কিন্তু এখন জোট সরকার হলে সেখানে অন্যরাও অংশগ্রহণ করবে, তাদের কথাও শুনতে হবে, তবেই সরকার চলতে পারবে।শ্রীবাস্তব বলছিলেন, এর অর্থ হল জোট ধর্ম মেনে, বাজপেয়ী মডেল যদি নেওয়া হয়, তবেই সরকার চালনা সম্ভব হবে। মোদীর কখনো এ মডেলে কাজ করার অভিজ্ঞতা নেই। গত ২২ বছরে তিনি তিনবার গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী এবং দুবার প্রধানমন্ত্রী হয়ে একরকম একচ্ছত্র আধিপত্য নিয়ে কাজ করেছেন। এখন হঠাৎ করে সমন্বয় করে, ঐকমত্যের ভিত্তিতে রাজনীতি করা তার কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়াবে। এ নতুন কাজের ধরন তিনি কতটা নিতে পারবেন, তার ওপরেই বর্তমান সরকারের স্থায়িত্ব নির্ভর করছে।অটল বিহারী বাজপেয়ীর সরকার যখন গঠিত হয় ১৯৯৯ সালে, তখন এনডিএ জোটে ২৪টি দল ছিল। সেই সরকার টিকেছিল পাঁচ বছর। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, জোটের মধ্যে সমন্বয় সাধনের ক্ষমতাই বাজপেয়ী সরকারকে পাঁচ বছর টিকিয়ে রেখেছিল।