মাদারীপুরের শিবচরে শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে চেক বিতরণ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) বিকালে মাদারীপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজনে শিবচর উপজেলার ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী অডিটোরিয়ামে ২৪ জন ক্ষতিগ্রস্তদের হাতে প্রায় ৭ কোটি টাকার চেক তুলে দেন শিবচর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন। এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন শিবচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আব্দুল লতিফ মোল্লা, মাদারীপুর ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার কর্মকর্তা মাহবুবা ইসলাম, সার্ভেয়ার মো. শহিদুল ইসলামসহ শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজির জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিগ্রস্তরা।
শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি এর জমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত এক ভূমি মালিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, দালালদের মাধ্যম ছাড়া আমি নিজে গিয়ে আমার জমির সকল কাগজ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে জমা দিয়েছিলাম। কোনো প্রকার হয়রানি ছাড়াই আজ ক্ষতিপূরণের চেক হাতে পেলাম।
আরেক ভূমি মালিকের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, একটা সময় জমির ক্ষতিপূরণের চেকের জন্য দালালসহ বিভিন্ন জায়গায় ছোটাছুটি করতে হয়েছে। এতে আমাদের অনেক সময় ও অর্থের অপচয় হয়েছে। এখন আর সেই হয়রানি নেই। উপজেলা থেকেই আমার জমির ক্ষতিপূরণের চেক পেলাম। এটা সম্ভব হয়েছে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান স্যারের জন্য।
এ বিষয়ে মাদারীপুর ভূমি অধিগ্রহণ (এলএ) শাখার কর্মকর্তা মাহবুবা ইসলাম বলেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের এলাকায় এসে ক্ষতিপূরণের চেক বিতরন করেছি।
শিবচর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, আজ শেখ হাসিনা ইনস্টিটিউট অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি এর জমি অধিগ্রহণের ক্ষতিগ্রস্ত ২৪ জনের হাতে প্রায় ৭ কোটি টাকার চেক তুলে দিয়েছি।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ঝোটন চন্দ বলেন, অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি জমির প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের এলএ শাখায় যোগাযোগ করার পর উপজেলায় গিয়ে তাদের হাতে চেক তুলে দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিককে কোনো প্রকারের হয়রানির শিকার না হতে হয় সেজন্য জেলা প্রশাসন থেকে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে প্রযুক্তির বিকেএসপি হিসেবে পদ্মা সেতুর পাশে মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুরে শেখ হাসিনা ইন্সটিটিউট অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজি (শিফট) গড়ে তুলবে বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। “লার্নিং বাই ডুইং” বা “এক্সপেরিয়েনশিয়াল লার্নিং শিক্ষাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে লার্নিং কমিউনিটিভিত্তিক ইনোভেশন কালচার চর্চার পাশাপাশি দেশের প্রথম জিরো ওয়েস্ট ও এনভায়রনমেন্টালি সাস্টেইনেবল ক্যাম্পাস হিসেবে শিফটকে প্রতিষ্ঠা করা হবে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব মোকাবিলায় এখান থেকেই বিশ্ব বরেণ্য প্রযুক্তিবিদ তৈরি হবে বলে আশা সংশ্লিষ্টদের। ৭০.৩৪ একর জমির ২০ একর জমিতে গড়ে তোলা হবে ভিশন-২০৪১ নামক ৪১ তলা বিশিষ্ট টাওয়ার। বাকিটায় গড়ে উঠবে শিক্ষাক্রম, গবেষণার জন্য ইন্সটিটিউট। থাকবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সিনেপ্লেক্সসহ নান্দনিক অত্যাধুনিক সব সুবিধা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে শেষ হবে ১৫শ কোটি টাকার প্রকল্পটির কাজ। শেখ হাসিনা ইন্সটিটিউট অফ ফ্রন্টিয়ার টেকনোলজিতে যে সকল বিষয়ে গুরুত্ব প্রদান করা হবে সেগুলোর মধ্যে বায়োটেকনোলজি, ন্যানোটেকনোলজি, নিউরোটেকনোলজি, সাইবার সিকিউরিটি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ইন্টারনেট অফ রোবোটিক্স থিংস, ব্লক চেইন, ডেটা সায়েন্স, হাইপার অটোমেশন, টেকনোলজিক্যাল এথিক্স, বিহেভিয়ার এন্ড এক্সপেরিয়েন্স ইঞ্জিনিয়ারিং এবং ইনোভেশন ও অন্ট্রাপ্রেনরশীপ অন্যতম। শিফটে ছয়তলা গবেষণা ভবন, চারতলা একাডেমিক ভবন, তিনতলা প্রশাসনিক ভবন, শিক্ষক-ছাত্রদের জন্য ডরমেটরি ভবন, ছয়টি বিশেষায়িত ল্যাব শিফটের আওতায় নির্মাণাধীন প্রধান অবকাঠামো। শিফটের পরিকল্পনা করা হয়েছে ভবিষ্যৎ প্রযুক্তিভিত্তিক পুরো বিশ্বের একটি একাডেমিক রোল মডেল হিসেবে।