নিউজ ডেস্ক : অনুকূল-প্রতিকূল পরিবেশের ওপর নয়, জনগণের আস্থা-সমর্থন থাকলে জনরায়ের মাধ্যমে চরম প্রতিকূল পরিবেশেও নির্বাচনে জয়লাভ করা সম্ভব বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে শনিবার (১৬ ডিসেম্বর) নগর ভবনের সম্মুখ প্লাজায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। মেয়র তাপস বলেন, আজকে যারা বিভিন্ন অজুহাতে নির্বাচন বানচাল করতে চায় তাদের একটু স্মরণ করিয়ে দেই, তারা বলেন নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ নেই। সেজন্য আমরা নির্বাচনে আসব না। দেশের প্রেক্ষাপটে ১৯৫৪ সালে প্রথম যে নির্বাচন, আওয়ামী লীগ শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী ও শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যুক্তফ্রন্ট গঠন করে নৌকা প্রতীকে নির্বাচন করে। সে সময় মুসলিম লীগ ছিল সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন। প্রতিকূল পরিবেশে সেদিন নৌকা প্রতীক নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। ‘৭০ এর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের অন্যান্য সব রাজনৈতিক সংগঠন বলেছিল- নির্বাচনে যাওয়া মানে আত্মহত্যার শামিল। এমনও স্লোগান উঠেছিল, ভোটের বাক্সে লাথি মারো বাংলাদেশ স্বাধীন করো। সে বারও নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ ছিল না। সব কিছুই ছিল পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর অধীনে। প্রশাসন ছিল পাকিস্তানের। সবকিছুই যখন পাকিস্তানি প্রশাসনের অধীন তখনও বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি নির্বাচনে যাবো। সেই প্রতিকূল পরিবেশেও আওয়ামী লীগ ১৬৯ আসনের মধ্যে ১৬৭ আসনে নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। বঙ্গবন্ধু জনগণের সেই রায় নিয়ে স্বাধীনতার পথে এগিয়ে গেছেন। সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনও আওয়ামী লীগের জন্য অনুকূল পরিবেশ ছিল না। রাষ্ট্রপতি ছিলেন ইয়াজউদ্দিন আহমেদ, সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান ছিলেন ফখরুদ্দিন আহমেদ আর সেনাপ্রধান ছিলেন মঈন ইউ আহমেদ। তারা সবাই বিএনপি কর্তৃক নিযুক্ত। পুরো প্রশাসন ছিল বিএনপি-জামায়াতের পক্ষে। কিন্তু জননেত্রী শেখ হাসিনা কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে চরম প্রতিকূল পরিবেশে দিন বদলের সনদ ঘোষণা করেন এবং আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। সেই সত্তরের মতোই আওয়ামী লীগ ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৩টি আসন নিয়ে এককভাবে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। সুতরাং নির্বাচন কোনো অনুকূল পরিবেশ, প্রতিকূল পরিবেশের ওপর নির্ভর করে না। যদি জনগণের ওপর আস্থা থাকে, জনগণের সমর্থন থাকে তাহলে চরম প্রতিকূল পরিবেশেও নির্বাচনে জয়লাভ করা সম্ভব। ’ সাংবিধানিক ধারাবাহিকতা রক্ষার মাধ্যমে গণতন্ত্রকে সুসংগত করতেই আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন যথা নিয়মে অনুষ্ঠিত হবে জানিয়ে মেয়র শেখ তাপস বলেন, আসল কথা হলো, বিএনপি-জামায়াতের জনগণের ওপর আস্থা নেই এবং এটা প্রমাণিত হয়েছে, তাদের কোনো জনসমর্থন নাই। তারা যদি মনে করতো যে, জনগণের রায় নিয়ে সরকার গঠন করার কিছুটা হলেও সুযোগ আছে তাহলে তারা নির্বাচনে আসতো। কিন্তু তারা জানে, জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করেছে। সেটা প্রমাণিত হয়েছে ২০০৮ সালের নির্বাচনে। তারা মাত্র ২৯টি আসন পেয়েছিল। ২০১৮ সালে মাত্র আটটি আসন পেয়েছে। সুতরাং তারা জানে যে, নির্বাচনে গেলে তাদের সর্বোচ্চ ২৯/৩০টি আসনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে হবে। তাদের সরকার গঠন করার কোনো সুযোগ নেই। এজন্যই ছলে-বলে-কৌশলে তারা নির্বাচনকে বানচাল করতে চায়। তিনি বলেন, জাতীয় নির্বাচনে ব্যত্যয় মানেই হলো গণতন্ত্র ও সংবিধানকে ভূলুণ্ঠিত করা এবং সেই অসাংবিধানিক শক্তির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। তাই আগামী নির্বাচনে আমাদের অংশগ্রহণ করতে হবে। কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলো বা না করলো সেজন্য নির্বাচন থেমে থাকতে পারে না। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন প্রক্রিয়া উল্লেখ করে মেয়র তাপস বলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চার বছর মেয়াদে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হয় এবং সেজন্য ৪ নভেম্বর দিনটি নির্দিষ্টভাবে নির্ধারিত। এর কোনো ব্যত্যয় কোনোভাবেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সম্ভব না। কোনো রাজনৈতিক সংগঠন অংশগ্রহণ করুক বা না করুক, কোনো প্রার্থী নির্বাচনে আসুক বা না আসুক, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ৪ নভেম্বর নির্বাচন হবে। তেমনি সব দেশের যে সংবিধান আছে সেই সংবিধান অনুযায়ী নির্দিষ্ট মেয়াদের মধ্যই নির্বাচন করাটা অত্যাবশকীয়। তাই ২০২৪ সালে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য ৭ জানুয়ারি যে তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে সে দিনেই আমাদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়াতে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে।সভায় আরও বক্তব্য রাখেন সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির। সভায় কাউন্সিলরসহ করপোরেশনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।সভা শেষে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সঙ্গীত শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেন।