সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের জরুরি চিকিৎসা দিতে পদ্মা সেতু সংলগ্ন ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেস হাইওয়ের শিবচরের সন্নাসীরচর এলাকায় নির্মাণ করা হয় ইলিয়াস আহমেদ চৌধুরী ট্রমা সেন্টার। ব্যয় হয় প্রায় ১২ কোটি টাকা। ২০২২ সালের ৮ নভেম্বর স্বাস্থ্যমন্ত্রী এটি উদ্বোধন করলেও এখনো নিয়োগ দেয়া হয়নি লোকবল। উদ্বোধনের দিন ট্রমা সেন্টারে জেলা ও উপজেলার চিকিৎসক ও নার্স থাকলেও পরের দিন থেকে বন্ধ রয়েছে। প্রধান ফটক থেকে শুরু করে ট্রমা সেন্টারের সবকটি কক্ষ তালাবদ্ধ ও অরক্ষিত। স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী নেই ট্রমা সেন্টারে। নেই ন্যূনতম পাহারাদারও। এতে প্রায়ই ঘটছে চুরিসহ নানা অনাকাঙ্খিত ঘটনা। গত ১৮ নভেম্বর রাতে একদল চোর ট্রমা সেন্টারের সাব-স্টেশনের কয়েকটি কক্ষ ভাঙচুর করে ও পানির কলসহ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ চুরি করে নিয়ে যায়। এছাড়াও সাব স্টেশনে বড় ধরনের চুরির চেষ্টাকালে বিস্ফোরণ হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। বিষয়ে থানায় অভিযোগ করেছে উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগ।
জানা গেছে, ট্রমা সেন্টারের জন্য ৭ জন পরামর্শক চিকিৎসক (কনসালট্যান্ট), ৩ জন অর্থোপেডিকস সার্জন, ২ জন অ্যানেসথেটিস্ট এবং ২ জন আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তাসহ মোট ১৪ চিকিৎসক এবং ১০ নার্স, ফার্মাসিস্ট, রেডিওগ্রাফার, টেকনিশিয়ানসহ ৩৪টি পদ সৃজনের প্রস্তাব করা হয়েছিল। উদ্বোধনের এক বছর পেরিয়ে গেলেও লোকবল নিয়োগ এখনো হয়নি। ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণে ব্যয় হয় ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৬৮ হাজার ৫২৭ টাকা।
দূরপাল্লার বাসচালক আবদুস সালাম বলেন, পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেস হাইওয়ে সুন্দরভাবে চালু হলেও ট্রমা হাসপাতালটি চালু না হওয়ায় কোনো দুর্ঘটনা ঘটলেই রোগী নিয়ে দূরের হাসপাতালে যেতে হয়।
স্থানীয় পরিবহণ শ্রমিক করিম মিয়া বলেন, সড়কে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু কিছু হলেই এত বড় হাসপাতাল থাকতেও রোগী নিয়ে টানাটানি করতে হয়। তাহলে সরকারের এত টাকা খরচ করে কী লাভ হলো।
স্থানীয় অনেকেই বলেন, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে ট্রমা হাসপাতালটি নির্মাণ হলেও একজন পাহারাদারও নিয়োগ দেয়া হয়নি। এটি স্বাস্থ্য বিভাগের অদূরদর্শিতার ও উদাসীনতার প্রমাণ। কারণ পদ্মা সেতু ও এক্সপ্রেস হাইওয়েকে ঘিরে নির্মিত এ হাসপাতালটি খুবই জরুরি যাত্রী ও শ্রমিকদের জন্য। উদ্বোধনের এক বছরেও নেই জনবল।
শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কর্মকর্তা ডা. সেলিনা আক্তার বলেন, চোর চক্রের হামলার ঘটনাটি জানার পর সিভিল সার্জনসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। অফিশিয়ালি একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পেলেই আমরা জানতে পারব ঘটনাটি কী ঘটেছিল। আসলে কি ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা প্রাথমিকভাবে বলা সম্ভব না। এখানে সাব স্টেশনের সার্টারের লকের রিং কেটে ভিতরে প্রবেশ করা হয়েছিল। এর নিরাপত্তার জন্য অবশ্যই জনবল প্রয়োজন। নতুন জনবল নিয়োগ হওয়ার আগ পর্যন্ত গ্রাম পুলিশ, আনসার দিয়ে এটার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ট্রমা সেন্টারটি নির্মাণ কাজ শেষে হ্যান্ডওভার হয়েছে। এর প্রশাসনিক অনুমোদন বা জনবল নিয়োগ আমরা আশা করছি শীঘ্রই হয়ে যাবে। এ বিষয়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
শিবচর থানার সেকেন্ড অফিসার মো. মোবাশ্বের হোসেন বলেন, বিস্ফোরণের পর রাতেই পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে থানা পুলিশও ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে একটি জিডিও করা হয়েছে। মূলত কোনো ধরনের লোকবল না থাকায় প্রতিষ্ঠানটি অরক্ষিত রয়েছে।
ট্রমা সেন্টারটি চালু ও রক্ষণাবেক্ষনের বিষয়ে জেলার সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহমেদ খান বলেন, ট্রমা সেন্টারটি পরিচালনা করার জন্য যে জনবল, অর্থনৈতিক ও লজিস্টিক সাপোর্ট দরকার তা অনুমোদনের জন্য উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে ইতোমধ্যে আমরা পাঠিয়েছি। অনুমোদন পেলেই প্রতিষ্ঠানটি চালু হবে। আর আমাদের এমনিতেই যার যার প্রতিষ্ঠানে জনবল সংকট রয়েছে। আমরা অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে পাহারা বা সাপোর্ট দিতে পারছি না। এছাড়া, চুরির বিষয়ে আমরা তদন্ত কমিটি গঠন করে চিঠি দিয়েছি।