মোঃআমান উল্লাহ(কক্সবাজার): কক্সবাজারে বার্মিজ আচারের নামে বিক্রি হচ্ছে নকল আচার। বাহারি প্যাকেটে মোড়ানো এসব আচার দেখে বোঝা কঠিন। কোনটা আসল আর নকল। এছাড়াও প্যাকেটে লেখা আচারের পরিবর্তে অন্য আচার ঢুকিয়ে দিয়ে প্রতারণা করে যাচ্ছেন কতিপয় বিক্রেতারা। ফলে আচার কিনে রীতিমতো হয়রানি ও প্রতারণার শিকার হচ্ছেন পর্যটক।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের আনাচে কানাচে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা হয় বার্মিজ আচার নামে খ্যাত এসব ভুয়া নাম সর্বস্ব নকল আচার। ঘরে কিংবা দোকানে আচার তৈরি করে বাহারি প্যাকেটে ভরে নাম দেওয়া হয় বার্মিজ আচার। এরপর কতিপয় বিক্রেতারা আচারগুলো স্বল্প মূল্যে কিনে নিয়ে বিচের আনাচে কানাচে বিক্রি করে থাকেন। সেখান থেকে পর্যটকরা এইসব আচার কিনে প্রতারণার শিকার হচ্ছেন।মূলতঃ মিয়ানমার থেকে যেসব আচার টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে আনা হয় এসব হলো আসল বার্মিজ আচার। তবে এসব আচার শহরের বার্মিজ মার্কেটের কয়েকটি দোকান ছাড়া আর কোথাও তেমন বিক্রি করা হয় না।গত আগষ্ট মাসে কক্সবাজার বেড়াতে এসে সুগন্ধা পয়েন্ট থেকে আচার ক্রয় করে প্রতারণার শিকার হন রোকনুজ্জামান নামে এক পর্যটক ।এ বিষয়ে পর্যটক রোকনুজ্জামান জানান, সুগন্ধা পয়েন্টে সারিবদ্ধ এক দোকান থেকে কয়েকটি বার্মিজ আচারের প্যাকেট ক্রয় করি। আচারের প্যাকেটগুলো দেখতে খুবই সুন্দর ছিল। দামও কম রাখা হচ্ছে। তাই কিছু আচার কিনে নিয়ে রুমে চলে যায়। তারপরের দিন ঢাকা গিয়ে প্যাকেট খুলে দেখি আমের আচারের প্যাকেটে দেওয়া হয়েছে বরই। বাকি প্যাকেটগুলোই আচারের নামের সঙ্গে জিনিসের মিল নেই। আচারগুলো এতো নোংড়া মুখেই দেওয়া যাচ্ছে না। পরে খবর নিয়ে দেখি এগুলো আসলে বার্মিজ আচার নয়। কম দামে নকল আচার বিক্রি করে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করছে এরা। একই কথা জানালেন আরেক পর্যটক আব্দুল কাইয়ুম । তিনি জানান, গেল বছর যখন কক্সবাজার যাই, সেখানে এক দোকান থেকে ১০ হাজার টাকার বার্মিজ আচার কিনেন আমার স্ত্রী, পরে বাড়ি গিয়ে দেখি আচারের কোনো অস্তিত্বই নেই। মূলত বার্মিজ আচারের নামে নকল আচার বিক্রি করা হচ্ছে। বিষয়টি দেখে খুবই খারাপ লাগল। কক্সবাজারের মতো একটি শহরে পর্যটক ঠকানো হচ্ছে এটি আসলে খুবই দুঃখজনক।এ বিষয়ে সুগন্ধা পয়েন্টে এক আচারের দোকানদারের সঙ্গে কথা হলে তিনি জানান, কিছু দোকানদার আছেন যারা অল্প দামে নকল আচার বিক্রি করেন। অরিজিনাল বার্মিজ আচারের দাম বেশি, তাই সবাই সেই আচার বিক্রি করে লাভ করতে পারেন না। আবার কিছু কিছু পর্যটক আছেন, যারা অল্প দাম পেলে জিনিস কিনে নিয়ে যায়। আসল বা নকল দেখেন না। সেই সুযোগটা কাজে লাগান কিছু ব্যবসায়ী।ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মোঃকাউছার মিয়া জানান, আমি নিজেই এর ভুক্তভোগী। আমি দায়িত্ব নেওয়ার আগে একবার সরাসরি কয়েকটি দোকানদারকে ধরেছিলাম। পরে তারা মিনতি করে মাপ চাওয়ায় সাবধান করে দেওয়া হয়। কিন্তু এখন দেখছি এর মাত্রা বেড়ে গেছে, অনেকের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। আমি যেহেতু অতিরিক্ত দায়িত্বে আছি, আমাকে তিনটি জেলা দেখতে হয়। কক্সবাজারে গিয়ে এসব নকল আচার দোকানদারদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, বিষয়টি আমি নলেজে রাখলাম। খুব শীঘ্রই এসব নকল আচার ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।