নিউজ ডেস্ক : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, আমাদের সবসময় এ কথা মনে রাখতে হবে যে, এই দেশে আমাদের। এই দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না।দেশি-বিদেশি যতই চাপ আসুক না কেন, ওই চাপের কাছে বাঙালি নতি স্বীকার করে না। দেশের মানুষের ভোটের অধিকার আমরাই সুরক্ষিত করব।বুধবার (৭ জুন) বিকেলে ঐতিহাসিক ৬ দফা দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ কথা বলেন।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আমরাই এ দেশে আন্দোলন-সংগ্রাম করে গণতন্ত্র এনেছি। এই গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা আছে বলেই আজ বাংলাদেশে আর্থসামাজিক উন্নতি হয়েছে। আমাদের খাদ্যের কোনো অভাব নেই, খাদ্যের অভাব হবেও না। বাঙালিকে কেউ দাবায়ে রাখতে পারবে না। তিনি বলেন, যারা গণতন্ত্র হরণ করে হত্যা-ক্যু-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতা দখল করে, তাদের পকেট থেকে তৈরি সব দলের নেতারাও গণতন্ত্রের কথা বলে, নির্বাচনের কথা বলে, কারচুপির কথা বলে। কারচুপি না তো, তোরা তো ভোট ডাকাত। তোরা তো গণতন্ত্রও জানিস না, তোদের তো কারফিউ গণতন্ত্র। এদের কাছ থেকে ছবক শুনতে হয়, এটাই বাঙালির দুর্ভাগ্য।প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজ আন্দোলন করবে, সংগ্রাম করবে, আর আমাদের উৎখাত করবে। একদিকে ভালো হয়েছে এখন যদি জ্বালাও-পোড়াও করে, যদি অগ্নিসন্ত্রাস করে, এখন যদি মানুষ খুন করে, তাহলে আমেরিকার ভিসা পাবে না। যাদের কথায় নাচে তারাই ভিসা দেবে না, আমাদের কিছু করার নেই। ওটা নিয়ে আমাদের চিন্তার কিছু নাই। আন্দোলন করবে করতে থাকুক, আমি বলি, যতই আন্দোলন করে, করুক। তিনি বলেন, নজর রাখতে হবে ওই ১৩, ১৪ বা তারপর ১৫ সালে যেভাবে অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, মানুষকে পুড়িয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে, হাত-পা কেটেছে, তা যেন করতে না পারে। নিজের কান, ক্যামেরা সতর্ক রাখতে হবে। তা না হলে আবার উসকানি দিয়ে ওই বাইরের কাছে কাঁদতে থাকবে। জনগণের কথা তারা বিশ্বাস করে না। তারা মনে করে কেউ অন্য কোথাও থেকে এসে নাগরদোলায় চাপিয়ে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। কেউ দেবে না, দেয় না কখনও। ব্যবহার করে, ব্যবহার করবে, কিন্তু দেবে না, এটা হলো বাস্তব কথা।শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কিন্তু আমাদের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছি। আমরা বাজেট দিয়েছি, জ্ঞানী, গুণী, বুদ্ধিজীবীরা বলে, এই বাজেট আওয়ামী লীগ কখনো কার্যকর করতে পারবে না। আমি স্পষ্ট করতে চাই, আমরা কতটুকু করতে পারব, তা বুঝে, শুনে বাজেট দিয়েছি। আমরা যা দিয়েছি, আমরা তা করতে পারবো।সরকার প্রধান বলেন, যে কষ্টটা মানুষের হচ্ছে, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি। আর কিছু লোক আছে, সুযোগটা নেয়, মজুত করে রাখে। পেঁয়াজ, পেঁয়াজের দাম হু হু করে বেড়ে যায়, যেই পেঁয়াজ আমদানি করব, ওমনি দাম কমে গেল। যারা মজুত করে রেখেছিল, তারা যদি এই অপকর্মটা না করতো এই পেঁয়াজ দিয়েই আমাদের হতো।তিনি বলেন, আমরা মানুষের ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। সেই বিদ্যুতের এখন সমস্যা হচ্ছে, লোডশেডিং দিতে বাধ্য হচ্ছি, আমি জানি মানুষের কষ্ট হচ্ছে, মানুষের কষ্টটা আমি উপলব্ধি করতে পারি। আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছি, এই দুই-এক দিনের মধ্যে আরও ৫০০ মেগাওয়াট যুক্ত হবে। এর পর ১০/১৫ দিনের মধ্যে আরও যুক্ত হবে, তারপরে আর কষ্ট থাকবে না। বাংলাদেশে ৪১ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা হবে, এটা তো আমরা ভাবতে পারি না। তারপর বৃষ্টি নেই, মানুষের কষ্ট হচ্ছে আমরা সেটা জানি। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি কিভাবে মানুষের কষ্ট লাঘব করা যায়।শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশের গণতন্ত্র ও ভোটের অধিকার নিশ্চিত আওয়ামী লীগই করেছে। আজ খুব শুনি বিএনপির নেতারা সমানে বক্তৃতা দিয়ে গণতন্ত্র, গণতন্ত্র, নির্বাচন, নির্বাচন করে। কোন গণতান্ত্রিক ধারায় ওই দলের জন্ম। একটা সামরিক একনায়ক, সংবিধান লঙ্ঘন করে, রাষ্ট্রপতি হত্যা করে, নিজেকে নিজে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা দিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে ক্ষমতার উচ্ছিষ্ট বিলিয়ে তৈরি হয়েছিল এই বিএনপি। আর জামায়াতে ইসলাম পাকিস্তানের দোসর ছিল। ৭১ সালে যুদ্ধাপরাধী, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার জাতি পিতা শুরু করেছিলেন, তাদের রাজনীতি সংবিধানে ছিল নিষিদ্ধ। জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে সংবিধান পরিবর্তন করে যুদ্ধাপরাধীদের রাজনীতি করার সুযোগ দেয়। ভোট কারচুপির যে যাত্রাটা সেটা তো বিএনপির নেতার মাধ্যমেই সৃষ্টি। এ দেশে হত্যার রাজনীতি আর ভোট কারচুপি, মানুষের ভোট কেড়ে নেওয়া, এটা তো জিয়াউর রহমানই শুরু করেছে।তিনি বলেন, এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার আওয়ামী লীগই আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের জনগণ তাদের ভোটের অধিকার সম্পর্কে এখন সচেতন, সেই সচেতনতা আমরা সৃষ্টি করেছি। খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোটচুরি করেছিলো বলেই এদেশের মানুষ ফুসে উঠেছিল, আন্দোলন করেছিল। সেই আন্দোলনের ফলে খালেদা জিয়া বাধ্য হয়েছিলো ৩০ মার্চ পদত্যাগ করতে, ভোট চুরির অপরাধে।