মোঃআমান উল্লাহ(কক্সবাজার): আসন্ন ১২ জুন অনুষ্ঠিত কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে কোন প্রকার ম্যাকানিজম, ইঞ্জিনিয়ারিং এর কোন সুযোগ নাই। নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করতে কমিশনের সদিচ্ছার কোন অভাব নেই, নির্বাচনে কমিশন কোন পক্ষপাতিত্ব করবেনা। ইলেকশন কাকে বলে, কত প্রকার ও কি কি, তা কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে দেখিয়ে দেয়া হবে। সর্বোপুরি আগামী প্রজন্মের জন্য কক্সবাজার পৌরসভায় একটি দৃষ্টান্তমূলক সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়া হবে।নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অবঃ) মোঃ আহসান হাবিব খাঁন গতকাল শনিবার (৩ জুন) কক্সবাজার পাবলিক লাইব্রেরী ও ইনস্টিটিউটের শহীদ সুভাষ হলে কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের সাথে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দৃঢ়তার সাথে এ আশ্বাস দেন।তিনি বলেন, কক্সবাজার পৌরসভায় পক্ষপাতহীন, অবাধ, শান্তিপূর্ণ, নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ, সুষ্ঠু, কালোটাকা ও পেশীশক্তিমুক্ত নির্বাচন হবে। তিনি আরো বলেন, নির্বাচন সুন্দর ও সুষ্ঠু করা নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনের একার দায়িত্ব নয়। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদেরও এ বিষয়ে সহযোগিতা করতে হবে। কোন অভিযোগ থাকলে তা সরাসরি রিটার্নিং অফিসারের নজরে আনতে হবে।কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আহসান হাবিব খাঁন (অব:) প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে আরো বলেন, সর্বোচ্চ সতর্কতা ও সচেতনার সাথে সকলকে আচরণ বিধি মানতে হবে। মাঠে সাদা পোশাকধারী গোয়েন্দা, এমনকি প্রাইভেট গোয়েন্দা দিয়ে বিদেশীরাও নির্বাচন পর্যবেক্ষন করছে। আচরণ বিধি লংঘন করায় গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আগের দিন একজন প্রভাবশালী কাউন্সিলর প্রার্থীর প্রার্থীতা বাতিল করা হয়েছে। আচরণ বিধি লংঘন করলে কক্সবাজারেও প্রার্থীতা বাতিল করতে দ্বিধা করা হবেনা। এ বিষয়ে কমিশন কঠোর পদক্ষেপ ও “জিরো টলারেন্স” নীতি অবলম্বন করবে। এজন্য তিনি কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনের সকল আপডেট রিপোর্ট নির্বাচন কমিশনের সদরদপ্তরে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দেন।কমিশনার মোঃ আহসান হাবিব খাঁন বলেন, বিগত ৩৫/৪০ বছর রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনকালে কোন উপরে আল্লাহ, নীচে আমার বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থেকে পেশাদারিত্বের সাথে কর্তব্য পালন করেছি। কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনের ক্ষেত্রেও তার কোন ব্যত্যয় হবেনা।তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন মানেই কমিশন, প্রশাসন সহ সবার সাফল্য। যেহেতু কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের প্রত্যেক বুথে সিসি ক্যামেরা থাকবে, সুতরাং সিসি ক্যামেরা ফুটেজ, গণমাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তাৎক্ষণিক প্রয়োজনীয় ও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।কক্সবাজার জেলা প্রশাসন ও জেলা নির্বাচন অফিসের উদ্যোগে কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখেন, পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম পিপিএম (বার), জেলা নির্বাচন অফিসার ও রিটার্নিং অফিসার এস.এম শাহাদাত হোসেন।কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাচন অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং অফিসার শিমুল শর্মার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত মতবিনিময় সভায় নৌকার মেয়র প্রার্থী মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, নারিকেল গাছ প্রতীকের নাগরিক কমিটি মনোনীত স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ, হেলামেট প্রতীকের জগদীশ বড়ুয়া পার্থ, হাতপাখা প্রতীকের জাহেদুর রহমান, কাউন্সিলর ও মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা নানা অভিযোগ ও প্রশ্ন তুলে ধরেন।কমিশনার মোঃ আহসান হাবিব খাঁঁন, জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান, পুলিশ সুপার মোঃ মাহফুজুল ইসলাম পিপিএম (বার) প্রার্থীদের অভিযোগ ও প্রশ্নের জবাব দেন। পরে কমিশনার মোঃ আহসান হাবিব খাঁন দর্শক গ্যালারীতে গিয়ে ৫ জন মেয়র প্রার্থীর সকলের হাতের উপর হাত রেখে নির্বাচনে আচরণ বিধি মেনে চলতে, পরিবেশ সুষ্ঠু রাখার জন্য ওয়াদা করান।কমিশনার মোঃ আহসান হাবিব খাঁন শনিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের শহীদ এটিএম জাফর আলম সম্মেলন কক্ষে কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তাদের সাথে পৃথক আরেকটি মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে যোগ দেন।কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ আহসান হাবিব খাঁন (অব:) ২ দিনের কক্সবাজার সফর শেষে আজ শনিবার সন্ধ্যা ৬ টা ২৫ মিনিটে বিমানযোগে কক্সবাজার ত্যাগ করবেন বলে কমিশনারের একান্ত সচিব আসমা দিলারা জান্নাত প্রেরিত এক সফরসূচিতে জানা গেছে।প্রসঙ্গত, আগামী ১২ জুন সোমবার ইভিএম পদ্ধতিতে সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ করা হবে। কক্সবাজার পৌরসভায় মোট ৪৩ টি ভোট কেন্দ্রে ২৪৪ টি বুথ রয়েছে। এছাড়া অস্থায়ী আরো ১৪ টি বুথ রয়েছে। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত হালনাগাদ করা ভোটার তালিকায় কক্সবাজার পৌরসভায় মোট ৯৫ হাজার ৩৮৬ জন ভোটার রয়েছে। তারমধ্যে, ৫০ হাজার ১৮৪ জন পুরুষ ভোটার এবং ৪৫ হাজার ২০২ জন মহিলা ভোটার।কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনে ৪৩ ভোট কেন্দ্রের ২৪৪ টি বুথে সিসি ক্যামেরা বসানো হবে। ইতিমধ্যে নির্বাচন কমিশন সে উদ্যোগ নিয়েছে। সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে নির্বাচন কমিশনের সদর দপ্তর থেকে নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষন ও প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হবে বলে জানান-রিটার্নিং অফিসার এস.এম শাহাদাত হোসেন।