ঈদের ছুটিতে সারা দেশে কালবৈশাখীর আভাস

ঈদের ছুটিতে সারা দেশে কালবৈশাখীর আভাস
তাপপ্রবাহের চিত্র
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, গত ৪ এপ্রিল থেকে ১৬ এপ্রিল পর্যন্ত ক্রমান্বয়ে বেড়েছে দেশের তাপমাত্রা। ঢাকায় ১৬ এপ্রিল গত ৫৮ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪০ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তার আগের দিন চুয়াডাঙায় রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এর আগে ২০১৪ সালের এপ্রিলেও চুয়াডাঙায় এই তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল।ঢাকায় ১৯৬৫ সালে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা উঠেছিল ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এর আগে ১৯৬০ সালে ঢাকার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ওঠেছিল ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। ১৯৭৫ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, এই রেকর্ড এখনও ভাঙেনি।

তীব্র তাপ প্রবাহের কারণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ও আবহাওয়া বিজ্ঞানী ড. তৌহিদা রশিদ বলেন, এবারে তাপপ্রবাহ যদি খেয়াল করেন, দেখবেন লম্বা সময় ধরে ক্রমান্বয়ে বেড়েছে। এমন কিন্তু প্রতি বছর হয় না। হয়তো বিরতি দিয়ে দিয়ে হয়। গত দশমাসে সারা পৃথিবীর তাপমাত্রা শূন্য দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়েছে। চলতি বছর ১ দশমিক ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়তে পারে। কাজেই এবারের তাপপ্রবাহের পেছনে যে গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়ের প্রভাব রয়েছে এতে কোনো সন্দেহ নেই।তিনি বলেন, প্রশান্ত মহাসাগরের (পেরুর কাছের অংশটিতে) পৃষ্ঠের তাপমাত্রার ওপর সারা পৃথিবীর আবহাওয়া নির্ভর করে। সেখানে তাপমাত্রা বেশি থাকলে আমরা তাকে এল নিনো (L-nino) বলি। আর তাপমাত্রা কম থাকলে বলা হয় লা নিনা (La-nina)। আমরা এখন এল নিনো ফেইজে ঢুকছি। আগামী জুন-জুলাই মাসে পুরোপুরি এই ফেইজে ঢুকে যাবো। এই অবস্থা কখনো তিন বছর, কখনো পাঁচ বছর কখনো আবার সাত বছর স্থায়ী হয়। অর্থাৎ ওইদিকে ঠাণ্ডা বেশি থাকলে এশিয়ার এই দিকে গরম বেশি থাকে। এই প্রক্রিয়াটা তিন থেকে সাত বছর ঘুরে ফিরে স্থায়ী হয়।

কোথায় কখন বৃষ্টিপাত হতে পারে
আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা আমরা পূর্বাভাসে বলছি। তবে এই সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ। ইতিমধ্যে দক্ষিণা বাতাস জলীয় বাষ্প সহকারে বইতে শুরু করেছে। এজন্য বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। আগামী দুই-তিন দিনে এই প্রবণতা বাড়বে। ২১, ২২ এপ্রিলের দিকে দেশের বেশিভাগ স্থানে বৃষ্টিপাত হতে পারে। ঢাকা, রাজশাহী ও খুলনা বিভাগে এ সময় বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা কম। এসব এলাকাসহ পুরো দেশেই বৃষ্টিপাত এবং কালবৈশাখী ঝড় হবে ২৩ এপ্রিল থেকে। তবে সেটা একটানা নয়।আবহাওয়া বিজ্ঞানী তৌহিদা রশিদ বলেন, এল নিনোর প্রভাবে এবারের বর্ষায় বৃষ্টিপাত কম হতে পারে। তবে তীব্র তাপপ্রবাহের কারণে শক্তিশালী কালবৈশাখী, বজ্রঝড় ও শিলাবৃষ্টি হতে পারে। আগামী ১৯, ২০ এপ্রিল থেকে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাত সম্ভাবনা রয়েছে।আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির বলেন, ১৯ ও ২০ তারিখের দিকে বিক্ষিপ্তভাবে উত্তর-পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ সিলেট বিভাগে ও ময়মনসিংহ বিভাগে কিছু কিছু জায়গায় হালকা বৃষ্টিপাত হতে পারে। ২২ এপ্রিলের দিকে তাপপ্রবাহ কমতে পারে। তবে একেবারে কেটে যাবে তা নয়। হয়তো ব্যপ্তি ও মাত্রা কমবে। ৩৬, ৩৭ ডিগ্রিতে নেমে আসবে। ঢাকায়ও ধীরে ধীরে কমবে। তাপপ্রবাহ মাসের শেষার্ধেও থাকবে। তবে সেটা হয়তে মৃদু আকারে থাকবে। বৃষ্টিপাত হলেও সেটা একেবারে এখনই যাচ্ছে না।

বাড়তে পারে ভ্যাপসা গরম
তেঁতে ওঠা প্রকৃতি যতটা না কষ্ট দিয়েছে এরচেয়ে বেশি কষ্ট দিতে পারে ভ্যাপসা গরম। বাতাসের জলীয় বাষ্পের পরিমাণ ধীরে ধীরে বাড়ছে। আর জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাড়লে এবং সূর্য কিরণ থাকলে ভ্যাপসা গরম বাড়বে।আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক বলেন, ইতিমধ্যে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেড়ে ভ্যাপসা গরম শুরু হয়েছে। সামান্য বৃষ্টিপাত হলে বা বৃষ্টিপাতের পর রোদ থাকলে ভ্যাপসা গরম আরও বাড়তে পারে। এক্ষেত্রে কষ্টটা বাড়তে পারে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন