প্রণব কুমার সাহা : মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন এর নির্দেশনায় সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ( ইউএনও) মোঃ মাইনউদ্দিন এর উদ্যোগে আজকের শিশু আগামীর ভবিষ্যৎ চমৎকার একটি প্রচারণা পুস্তিকা প্রকাশিত হয়েছে । যা সর্বসাধারণ মানুষের কাছে প্রশংসিত হচ্ছে।মাদারীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোঃ মহিউদ্দিন এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, ৩০ লক্ষ শহীদের রক্তের বিনিময়ে বাঁধানো বাংলাদেশের মানচিত্র। মানচিত্রের লাল-সবুজ অসম্প্রদায়িক বাংলাদেশের প্রস্ফূটিত প্রজ্জ্বলন। জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে প্রয়োজন যোগ্য, নিষ্ঠাবান, সৎ, মেধাবী জনসম্পদ। আজকের শিশু ৪১ এ আমাদের স্থানে এসে নেতৃত্ব দিবে প্রিয় স্বদেশকে। এক্ষণে তাদেরকে যোগ্য, নিষ্ঠাবান ও সৃজনশীল হিসেবে তৈরী করার দায়িত্ব আমাদের। একজন মা পারেন তার সন্তানকে জাতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ হিসেবে পরিণত করতে। যে মা বিশ্বাস করেন, তার সন্তান জগৎ বিখ্যাত হবে এবং তার দ্বারা একটি ছোট্ট অপরাধও সংঘটিত হবে না, তিনিই শ্রেষ্ঠ মা। একজন শিক্ষক পারেন তার ছাত্রকে সৎ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে রূপান্তর করতে। যে শিক্ষক মনে করেন, আমার শিক্ষার্থী আমার সন্তান, আমার সন্তান একদিন পৃথিবী বিখ্যাত হবে, তিনিই শ্রেষ্ঠ শিক্ষক। তাহলে চলুন, আমরা সংকল্পবদ্ধ হই, আজকের শিশুকে সোনার বাংলার সোনার মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে ভিশন ৪১ এর দিকে এগিয়ে যাওয়ার। আজ আমরা এখানে মিলিত হয়েছি সকলের দায়িত্ব বুঝে নেয়ার জন্য।
আপনারা জানেন ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে জাতির পিতার নেতৃত্বে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বহু ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ আমরা অর্জন করেছি। সেই সাথে পেয়েছি লাল সবুজের পতাকাটি। একটি যুদ্ধ বিদ্ধস্ত দেশ যখন জাতির পিতা গড়ে তুলতে শুরু করেন তখন অনেক বিদ্বেশী সাংবাদিক জাতির পিতাকা জিজ্ঞাসা করেন- এখানে তো কিছুই নেই, আপনি কি দিয়ে এই দেশ গড়বেন? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, “আমার মাটি আছে, মানুষ আছে। আমি এদেরকে নিয়েই বাংলাদেশ গড়ে তুলব।”আজ ২০২২ সালে দাড়িয়ে আমরা একই সম্পদের উপর ভিত্তি করে স্বপ্ন দেখছি ২০৪১ সালে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার। আমরা ইতিমধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে রূপান্তরিত হয়ে হেনরি কিসিঞ্জার সহ যারা বাঙ্গালি জাতির উন্নতির স্বক্ষমতাকে খাট করে দেখছিল তার সমুচিত জবাব দিয়েছি।
এক্ষণে আমাদের হাতে সুযোগ এসেছে এ দেশের বিপুল কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে সম্পদে পরিনত করে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বা জনমিতিক সুবিধাকে কাজে লাগানোর। এ ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে কাজে লাগিয়ে উন্নত জাতিতে পরিনত হয়েছে আয়ারল্যান্ড, সিঙ্গাপুর, হংকং, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া। বিগত পঁচিশ বৎসর ধরে এ সুবিধাটা কাজে লাগাচ্ছে চীন। আমাদের জনসংখ্যার কাঠামো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় বর্তমানে আমাদের কর্মক্ষম জনসংখ্যা (১৫-৬৪ বৎসর বয়সী) হচ্ছে ৬৫% যার বিপরীতে নির্ভরশীল জনসংখ্যা (১৫ বৎসরের কম ও ৬৫ বৎসরের অধিক বয়সী) ৩৫%। গবেষণার তথ্যমতে, জনসংখ্যার বর্তমান কাঠামোটি ২০৪৫ সাল পর্যন্ত একই রকম থাকবে এবং এর পরবর্তী সময়ে তা বিপরীত হতে থাকবে। অর্থাৎ পর্যায়ক্রমে কর্মক্ষম জনসংখ্যা কমতে থাকবে অন্য দিকে নির্ভরশীল জনসংখ্যা বাড়তে থাকবে। এ অবস্থায় আগামী ২৩ টি বছর আমাদের জন্য অনন্য এক সুযোগ। এ সুযোগটিকে যথাযথভাবে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবে উন্নত বাংলাদেশে পরিনত হবে। অন্যথায় বাংলাদেশ হয়ে যেতে পারে আফ্রিকার পিছিয়ে পড়া দেশ সোমালিয়া, নাইজেরিয়া, ইথিয়েপিয়ার মত দারিদ্রের দুষ্টচক্রে আবদ্ধ।
তিনি আরো বলেন, আমরা আমাদের সামনের ২৩টি বছরকে আমাদের উন্নয়নের ২৩ বৎসর হিসেবে পার করতে চাই। আমরা চাই না এ সুযোগটিকে মিস করে আমাদের জীবনে আবারও “২৩ বৎসরের করুন ইতিহাস” রচনা করতে। আর, তা না চাইলে, এই মুহূর্ত থেকেই বদলে ফেলতে হবে নিজেদেরকে। নতুন করে শুরু করতে হবে আমাদের হাতের শিশুদের সৎ ও যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রত্যয় নিয়ে। আজকের ১২ বৎসরের শিশুটি ২০৪১ সালে একজন দায়িত্বশীল নাগরিক। সেদিনে আমাদের স্বপ্নের উন্নত বাংলাদেশ রূপায়িত হবে আজকে আমাদের হাতের শিশুদের দ্বারা। তাহলে এখনকার প্রতিটি শিশুকে সৎ ও যোগ্য মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই আমাদের মূল দায়িত্ব। যাতে করে উন্নত বাংলার উন্নত নাগরিকের হাতেই আমরা আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে রেখে যেতে পারি। একজন ভাল মানুষের সকল গুনাবলি এখনই শিশুদের মাঝে রোপন করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজন শুধু আমাদের বিশেষমনোযোগ। প্রতিটি মুহূর্তে তাদের আচারণ খেয়াল করে শুধরে দিতে হবে আন্তরিকতা আর ভালবাসার ছোঁয়ায়। তারা আপনাকে ভয় পাবে না, বরং আপনাকে ভালবেসে অনুকরণ করবে এমন ব্যক্তিত্ব আপনাকে তাদের সামনে উপস্থাপন করতে হবে। প্রতিদিনকার চর্চার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রণীত ৪১ দফা নির্দেশনা তাদের মস্তিস্কে ঢুকিয়ে দিতে হবে। অন্যদিকে পথপ্রদর্শক হিসেবে আজকের শিশুদের প্রতি আমাদের যথাযথ দায়িত্ব পালন নিশ্চিতকল্পে শিক্ষকগণের জন্য প্রণীত ২৫ দফা নিদের্শনা আমাদের শিক্ষকদের অনুসরণ করতে হবে। এভাবেই আমরা আমাদের কাঙ্খিত সোনার মানুষ গুলো পেয়ে যাব। যাদের হাত ধরে রূপায়িত হবে আমাদের স্বপ্নের সুখী-সমৃদ্ধ সোনার বাংলা। সকলের সুস্বাস্থ্য কামনা করি।