প্রণব কুমার সাহা, মাদারীপুর প্রতিনিধি : পদ্মাসেতুর এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচরে ইমাদ পরিবহনের যাত্রীবাহি একটি বাস নিয়ন্ত্রন হারিয়ে খাদে পড়ে ২০ জন নিহত ও অন্তত ২৩ জন আহত হয়েছে। আহতদের শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন, পুলিশ সুপার মোঃ মাসুদ আলম ও মাদারীপুর রিজিয়ান ফরিদপুর হাইওয়ের পুলিশ সুপার মোঃ মাহবুব,মাদারীপুর রিজিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাইওয়ের ডিআইজি সালমা বেগম ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন । এর আগে সকালে উপজেলা প্রশাসন, হাইওয়ে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্থানীয়দের সহযোগিতায় লাশ উদ্ধার করেছে।
পুলিশ জানায়, রোববার সকালে খুলনা থেকে যাত্রী বোঝাই করে ইমাদ পরিবহনের একটি বাস ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। বাসটি পদ্মাসেতুর আগে ঢাকা-খুলনা এক্সপ্রেসওয়ের মাদারীপুরের শিবচরের কুতুবপুর সিমানা এলাকায় আসলে বাসটির সামনের একটি চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে বাসটি নিচে চলে পড়ে যায়। এসময় দুমড়েমুচড়ে যায় বাসটি। এতে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হয়। এ দূর্ঘটনায় অন্তত ২৯ জনকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন ও শিবচরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে । মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে ।
ঘটনার সময় ওই বাসে ছিলেন আনোয়ারা বেগম (২৫) ও তার শিশু সন্তান সাজ্জাদ। তারা দু’জনকেই অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছেন উদ্ধারকর্মীরা। এরপর কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে সেই দুর্ঘটনার বর্ণনা দিলেন দ্বিতীয় জীবন পাওয়া আনোয়ারা বেগম।তিনি বলেন, “হঠাৎ কি যে হলো বুঝে উঠতে পারছিলাম না।মনে হলো মাথায় আসমান ভেঙে পড়তাছে। ছেলেকে বুকে জড়িয়ে রেখে আল্লাহে ডাকছিলাম। মুহূর্তের মধ্যেই সব ঘটে গেল। উদ্ধারের পর অনেকটা ঘোরের মধ্যে ছিলেন আনোয়ারা। কিছুক্ষণ পর ঘটনার ভয়াবহতা দেখে আঁতকে উঠলেন এবং সন্তানকে জড়িয়ে ধরলেন তিনি। বারবার আল্লাহকে ডাকছিলেন এবং আল্লাহর নিকট শুকরিয়া জানাচ্ছিলেন তিনি। ঘোর কাটলে নিজের পরিচয় দেন আনোয়ারা। জানান, বাগেরহাটের মোল্লার হাট থেকে বাসে ওঠেন তিনি। আনোয়ারা ওই এলাকার গারফা গ্রামের তাহিম মোল্লার স্ত্রী।আনোয়ারা বেগম বলেন, “এক্সপ্রেসওয়েতে গাড়িটি বেশ দ্রুত গতিতে চলছিল। কিছুক্ষণ পরেই পদ্মাসেতু। এমন আলোচনা করছিল যাত্রীরা। হঠাৎ করেই গাড়িটি রাস্তা থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ে যাচ্ছিল। ওই সময় শুধু সন্তানকে জড়িয়ে রেখেছিলাম। ”তিনি বলেন, “বাগেরহাটের মোল্লার হাট থেকে ভোর ৬টায় গাড়িতে উঠি। ঢাকার ধানমণ্ডি বড় বোনের বাসায় যাচ্ছিলাম। দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার মুহূর্তে মনে হয় জ্ঞান ছিল না। গাড়ির মধ্য থেকে কে বা কারা বের করে আনছে তা মনে নাই! স্বপ্নের মতো মনে হচ্ছে এখনও। ”
এদিকে খবর পেয়ে আনোয়ারার পরিবারের সদস্যরা ঘটনাস্থলের দিকে রওনা দিয়েছেন। এখন আর ঢাকায় বোনের বাসায় যাবেন না, পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে বাড়ি ফিরে যাবেন বলে জানান তিনি।
আনোয়ারা বেগমের ছেলে সাজ্জাদকে প্রশ্ন করা হলে সে বলে, আমি কিছুই বুঝতে পারি নাই। মায়ের কোলে ছিলাম।
মাদারীপুর রিজিয়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত হাইওয়ের ডিআইজি সালমা বেগম বলেন, এ দূর্ঘটনায় ২০ জন নিহত হয়েছে। এতে ঘটনাস্থলেই ১৪ জন নিহত হয়। এ দূর্ঘটনায় অন্তত ২৯ জনকে আহতাবস্থায় উদ্ধার করে শিবচর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পাঁচ্চর রয়েল হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২ জন ও শিবচরের বিভিন্ন হাসপাতালে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে । মৃত্যুর সংখ্যা আরো বাড়তে পারে ।