ওয়াসার এমডি বলেন, ‘ওয়াসা কাজ করে ওয়াসা অ্যাক্ট-১৯৯৬ অনুসারে। এই আইনের আওতায় বর্তমানে ঢাকা ওয়াসা, চট্টগ্রাম ওয়াসা, খুলনা ওয়াসা ও রাজশাহী ওয়াসা কাজ করছে। ভবিষ্যতে যখন শহর বড় হবে, একটি করে ওয়াসা হবে। ১৯৯৬ সালে দেশে প্রথমবারের মতো ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট (সায়েদাবাদ-১) করা হয়। আগে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে আমরা পানি সরবরাহ করতাম। সেখান থেকে বেরিয়ে এসে ভূ-উপরিস্থ পানিকে শোধন করার যে সিস্টেম তা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাই প্রথম করে দেখিয়েছেন। ২০১০ সালে সায়েদাবাদ-২ উদ্বোধন করা হয়। ’৯৫ শতাংশ স্থানে পানযোগ্য পানি
তাকসিম এ খান বলেন, “২০১০ সালে ‘ঘুরে দাঁড়াও ঢাকা ওয়াসা’ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আমরা দুটি মাস্টার প্ল্যান করি। ফলে রাজধানীতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। ২০০৮-০৯ সালে ঢাকা শহরে পানির হাহাকার ছিল। ওই সময় মাত্র ৬০ শতাংশ নগরবাসী পানি পেতেন। তখন ঢাকা শহরে প্রায় এক কোটি ৭৫ লাখ মানুষ ছিল। পানি না পেয়ে ওই সময় কলসি মিছিল ও ঝাড়ু মিছিলও হতো। বর্তমানে টেকনিক্যাল ফল্ট ছাড়া শতভাগ পানি পাচ্ছে সবাই। ’তিনি আরও বলেন, এখন ৯৫ শতাংশ জায়গায় পানযোগ্য পানি। বাকি ৫ শতাংশ ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও পানির পাইপ ফেটে যায়, ময়লা ঢোকে। কোনো কোনো স্থানে সমস্যা হলে ১৬১৬২ নম্বরে কল করলে তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয়।আন্ডারগ্রাউন্ড ওয়াটার পরিবেশবান্ধব নয়। বেশি বেশি পানি উত্তোলন করলে ভূমিধস হতে পারে। এজন্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে—‘৭০ শতাংশ পানি আমাদের আসবে সারফেস থেকে। বাকি ৩০ শতাংশ আসবে আন্ডারগ্রাউন্ড থেকে। আমরা সায়েদাবাদ-২, পদ্মা জশলদিয়া, ভাকুরদা, সায়েদাবাদ-৩ শুরু করেছি, যা শেষ হয়নি; গন্ধবপুর ওয়াটার ট্রিটমেন্ট করা হচ্ছে।
সব স্থানে পানযোগ্য পানি সরবরাহের ডিএমএ ব্যবস্থা
আগে পুরো ঢাকা একটি নেটওয়ার্কে ছিল। এখন আমরা ঢাকাকে ডিস্ট্রিক মিটার এরিয়া (ডিএমএ) অনুসারে ১৪৫ ভাগে বিভক্ত করেছি। প্রায় ৭০টি ডিএমএ হয়ে গেছে।
পানির সিস্টেম লস কমানো
এমডি বলেন, ‘বিশ্বব্যাংকের ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন প্রোগ্রামের মতে, পানির সিস্টেম লস হওয়া উচিত ২৫ শতাংশ। ২০০৯ সালে পানির সিস্টেম লস ছিল ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশ। আমাদের টার্গেট ছিল ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা। প্রথমে সিস্টেম লস ২০ শতাংশে নামিয়েছি। এরপর ডিএমএ করার পর তা নেমেছে ৫ থেকে ৬ শতাংশে। পানির সিস্টেম লস দুই ডিজিটের নিচে নামার নজির দক্ষিণ এশিয়ার কোনো শহরে নেই। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) এটিকে ‘গ্রেট সাকসেস’ বলেছে।
সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও দুর্নীতি লাঘব
এমডি বলেন, ‘আগে আমাদের বিলের (আয়) ৬৪ শতাংশ টাকা উঠে আসত। এখন রেভিনিউ অর্জন শতভাগ। ওই সময় মোট আয় পাওয়া যেত ৩০০ কোটি টাকা। মূলত আয় হতো ৪৫০ কোটি টাকা, অর্থাৎ ১৫০ কোটি টাকা গায়েব হতো। এখন আয় দুই হাজার কোটি টাকা। এটা দুর্নীতি লাঘবের প্রমাণ। ’
আন্তর্জাতিক মানের আয়-ব্যয় অনুপাত
এমডি বলেন, ‘২০০৮ সালে আমরা ১০০ টাকা আয় করলে ৯৫ টাকা অপারেশন অ্যান্ড মেইনটেন্যান্সে ব্যয় করতাম। আন্তর্জাতিক হিসাবে এটি হবে ০.৬৫ শতাংশ। আমরা এখন আন্তর্জাতিক মানের চেয়েও কমে নিয়ে এসেছি। আমরা ১০০ টাকা আয় করলে ৬২ টাকা ব্যয় করি। ’
গ্রাহকের হয়রানি লাঘব
ওয়াসার এমডি বলেন, ‘পানির মিটারে আমরা সিম বসানোর চেষ্টা করছি। মিটার যে রিডিং করতে যান, তিনিই অনেক সময় দুর্নীতিগ্রস্ত হয়ে পড়েন। সিম বসানো হলে এক ক্লিকেই গ্রাহক তার বিল যেকোনো স্থান থেকে বের করতে পারবে।