স্পোর্টস ডেস্ক : ফের একবার ‘হেক্সা’ মিশনে নামতে প্রস্তুত ব্রাজিল। ২০ বছর হয়ে গেছে বিশ্বকাপের স্বাদ পায়নি সেলেসাওরা।ফুটবল-পাগল একটি দেশের জন্য যা একপ্রকার লজ্জাজনক ব্যাপার। ২০১৪ বিশ্বকাপ নিজেদের দেশে হলেও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছিল তারা। সেই ধাক্কা কাটিয়ে উঠতে ২০১৬ সালে দায়িত্ব নিয়েই কাজ শুরু করেন তিতে। দীর্ঘদিন এই দলটাকে নিজের হাতে তৈরি করেছেন ব্রাজিল কোচ। তার অধীনে ব্রাজিলিয়ান দলটি ৭৬ ম্যাচে ৫৭ জয় ও ১৪ ড্রয়ের বিপরীতে মাত্র পাঁচবার হারের মুখ দেখেছে। ২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপ থেকে হিসাব ধরলে ৫০ ম্যাচে ৩৮টিতেই জয় পেয়েছে তার দল; ৯টিতে ড্র এবং হার মাত্র ৩ ম্যাচে। এবার তাদের প্রস্তুতি স্মরণকালের মতো সবচেয়ে ভালো। ফলে বর্ষীয়ান এই কোচ এবার স্বপ্ন ছোঁয়ার সম্ভাবনা দেখছেন। তবে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি এটাও জানিয়ে রাখলেন, শিরোপা জেতাই তার মূল উদ্দেশ্য নয়; চান শান্তিতে থাকতে।তিতের এমন মন্তব্যের পেছনে লুকিয়ে আছে ব্রাজিলের রাজনৈতিক ইস্যু। যা থেকে তিনি নিজেও দূরে থাকতে পারেননি। শেষ চারটা বছর রাজনৈতিকভাবে টালমাটাল অবস্থা কাটিয়েছে ব্রাজিলিয়ানরা। বিশেষ করে দেশটির বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জাইর বোসোনারো ছিলেন সব বিতর্কের কেন্দ্রে। যদিও সর্বশেষ নির্বাচনে বামপন্থী সাবেক প্রেসিডেন্ট লুলা দা সিলভার কাছে হেরে যাওয়ায় আগামী জানুয়ারিতে বিদায় নিতে হচ্ছে তাকে। কিন্তু বোলসোনারোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে বিভক্তি তৈরি করেছেন। তিতে অনুভব করছেন, এই বিভক্তিরেখা মুছে দিতে ব্রাজিলের বিশ্বকাপ জেতা খুব দরকার। বিশ্বকাপের স্বপ্ন সফল করতেই ব্রাজিল দলের দুই ‘বুড়ো’ দানি আলভেস (৩৯) ও থিয়াগো সিলভাকে (৩৮) কাজে লাগাতে চান তিতে। তাদের কাজ মূলত দলটাকে ঐক্যবদ্ধ করে রাখা। তাদের নিয়ে তিতের মূল্যায়ন, ‘দুনিয়া ধ্বংস হয়ে গেলেও তারা (আলভেস ও সিলভা) ফুটবলেই ফোকাস করবে। আর আমার ফোকাস খেলায়, সমর্থক বা অন্য কারো দিকে নয়। এটা মনোযোগের ব্যাপার। থিয়াগো ও আলভেসের মধ্যে এটা আছে- তারা পশুর মতো। তাদের অন্তর্দৃষ্টি এবং প্রবৃত্তি দারুণ। তারা বড় মাপের নেতা এবং তাদের আচরণ দলের জন্য উদাহরণ। ‘২০১৮ বিশ্বকাপের পর ব্রাজিল দল অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। সেবার নেইমারকে কেন্দ্র করেই পুরো দল সাজিয়েছিলেন তিতে। কিন্তু এবার তার দলে আছেন ভিনিসিয়ুস জুনিয়র এবং রাফিনিয়ার মতো তরুণ ফরোয়ার্ড। রিয়াল মাদ্রিদের জার্সিতে ভিনিসিয়ুস যা করেছেন তাতে এবার এই তরুণ এমনকি পিএসজি তারকা নেইমারকেও ছাড়িয়ে যেতে পারেন। ২০০১ সাল থেকে তিতের সহকারী হিসেবে কাজ করা ক্লেবের হাভিয়ের অন্তত এমনটাই মনে করেন। তার মতে, সেবার দানি আলভেস ও রেনাতো অগাস্তোকে বিশ্বকাপের আগেই হারানো ছিল বড় ধরনের ক্ষতি। তাছাড়া নেইমার নিজেও পুরো ফিট ছিলেন না। ফলে বিশ্বকাপের পর পুরো দলটিকে ঢেলে সাজানো হয়। এখন কোনো খেলোয়াড় ইনজুরিতে ছিটকে গেলে তার বিকল্প তৈরি আছে। তিতে নিজেও স্বীকার করলেন দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় অনেক নতুন কিছু শিখেছেন তিনি। হাভিয়েরের সঙ্গেও একমত পোষণ করে তিনি জানান, দীর্ঘ সময় কাজ করায় তার অভিজ্ঞতার ভাণ্ডার সমৃদ্ধ হয়েছে। এখন দল নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করা তার জন্য সহজ এবং সবার সঙ্গে যোগাযোগটাও আগের চেয়ে ভালোভাবে করতে পারছেন তিনি, ‘দুইটি ভিন্ন বিশ্বকাপের মাঝামাঝি সময়টায় কাজ করতে পারাটা আমার জন্য অনেক কাজে দেবে। যেমন, আমি যেভাবে এখন নেইমারের সঙ্গে একভাবে কথা বলি, আবার দানি আলভেসের সঙ্গে অন্যভাবে; আমি এসব শিখেছি। ‘ তিতে আরও বলেন, ‘ব্রাজিলের অনেকেই মনে করে ফুটবল নিয়ে স্টাডি করার দরকার নেই, এটা সহজ খেলা এবং কোচ হিসেবে আমি যদি কোনো সমস্যা তৈরি না করি’ তাহলে সব ঠিক থাকবে। আমি মনে করি, এই অভিজ্ঞতা কোচের অনেক কাজে লাগে। সবসময় শিখতে হবে, এর কোনো শেষ নেই। তরুণদের মতো এত শক্তি আমার নেই, কিন্তু আমার কোচিং স্টাফে মিশ্র অভিজ্ঞতা আছে এবং আমাদের এমন একজন (ব্রাজিলের ফুটবল ফেডারেশনে কো-অর্ডিনেটর জুনিনহো পাউলেস্তা) আছেন যিনি বিশ্বকাপ জিতেছেন। ‘বিশ্বকাপ জেতার স্বপ্ন বাস্তবায়নে পুরো ব্রাজিল এবার নেইমারে কিংবা অন্য কোনো খেলোয়াড় নয়; ভরসা রাখছে ৬১ বছর বয়সী তিতের ওপর। কারণ এই দলটা এখন পুরোটাই তার নিজের। কিন্তু তিনি নিজে বিশ্বকাপ জেতাকেও সবকিছু মনে করেন না। তার মূল চাওয়া শান্তি, ‘(বিশ্বকাপ) না জিতলেও, আমি শান্তি চাই। নিজের সাথে শান্তি চাই। এটাই সবচেয়ে বড় চাওয়া। অনেক কিছু আছে যা আমার নিয়ন্ত্রণে নেই। আমি আমার সেরাটা দিতে চাই এবং শান্তিতে থাকতে চাই। আমার বিশ্বাস, আমি পারব। ‘