নিউজডেস্ক: চা শ্রমিকদের সারি ধরতেই হয়। একজনের পেছেনে আরেকজন গিয়ে দাঁড়ান।এই দাঁড়ানোর প্রক্রিয়াটিই চা বাগানের বিশেষ একটি দৃশ্য। প্রতি জনে যত কেজি পাতা উত্তোলন করবেন তা মোট তিনবার মাপা হয়। এই মাপ দিতেই একের পর এক এসে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে যান।রোববার (২৮ আগস্ট) মৌলভীবাজারের ৯২টি চা বাগানের অধিকাংশই এই সারিবদ্ধ দৃশ্য আনন্দে রূপ নিয়েছে। ৯ আগস্টের পর চা বাগানগুলোর শ্রমিকরা মজুরি বাড়াতে আন্দোলনে নামেন। প্রথম দিকে দৈনিক দুই ঘণ্টা করে কর্মবিরতি পালন করলেও পরে তা পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে রূপ নেই। এভাবেই অচলাবস্থা চলে চা বাগানগুলোতে।এই অচলাবস্থার যে অবসান হয়েছে তা ভাড়াউড়া চা বাগানের নারী চা শ্রমিক গীতা ভুঁইয়ার কণ্ঠেই উচ্চারিত হয়।তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শনিবার আমাদের মজুরি ১২০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৭০ টাকা করায় আমরা খুব বেশি আনন্দিত। আমরা সবাই কাজে আইছি। ’ তার এ কথাটি শেষ হতে না হতেই তার সহকর্মী নারী শ্রমিক শিলা ভুইয়া বলেন, ‘খুব ভালা হইছে বাবু। আমাদের টাকা-পয়সা আর কিছুই অবশিষ্ট নাই। সব শেষ হয়ে গিয়েছিল। আমরা এখন কাজ করে খেতে পারবো। ’ ভাড়াউড়া চা বাগানের সর্দার ধীরু হাজরা বলেন, আমাদের এই সেকশনে আজ ৫ দফা কাজ হচ্ছে। প্রতি দফায় ১ জন সর্দারের অধীনে প্রায় ৫০ জন করে নারী শ্রমিক রয়েছেন। প্রতিটি নারী শ্রমিককে বাধ্যতামূলক দৈনিক ২৪ কেজি করে পাতা তুলতেই হয়। এই ২৪ কেজির চা পাতার মূল্য এখন দৈনিক ১৭০ টাকা। ২৪ কেজি তোলার পর বাড়তি যত কেজি তুলবেন তার জন্য তারা অতিরিক্ত মজুরি পাবেন। ভাড়াউড়া চা বাগানের টালি বাবু (টালি ক্লার্ক) সুনীল রিকিয়াসন চা শ্রমিকদের পাতার ওজনের জন্য আয়োজন করছিলেন। তিনি বলেন, আগে যখন ১২০ টাকা মজুরি ছিল তখন একজন নারী চা শ্রমিক ২৪ কেজি চা পাতা তোলার পর অতিরিক্ত কেজি প্রতি সাড়ে ৪ টাকা হারে পেতেন। অর্থাৎ কোনো শ্রমিক যদি দৈনিক ৪০ কেজি চা পাতা তুলেন। তিনি ২৪ কেজির জন্য ১২০টা সঙ্গে অতিরিক্ত ২৬ কেজির জন্য কেজি প্রতি সাড়ে ৪ টাকা হাতে পেতেন।বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে এই বাবু বলেন, এখন তো দৈনিক মজুরি নির্ধারিত হয়েছে ১৭০ টাকা। তাহলে ২৪ কেজি তোলার পর অতিরিক্ত কেজি প্রতি একজন নারী শ্রমিক গড়ে ৭ টাকা ৮ পয়সা করে পাবেন। ৭ দিন পর তারা তলব (মজুরি) একত্রে পাবেন ১ হাজার ১৯০ টাকা। তবে এর থেকে রেশন, বিদ্যুৎ বিল, প্রভিডেন্ট ফান্ড, ধর্মীয় চাঁদা (পূজা, মন্দির নির্মাণ প্রভৃতি) বাবদ প্রায় ৩শ টাকা কর্তন করা হবে। সপ্তাহ শেষে তার হাতে মজুরি গিয়ে পৌঁছবে প্রায় ৮৯০ টাকার মতো। দ্বিতীয় রাউন্ডে একেকজন নারী শ্রমিক গড়ে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ কেজি পাতা তুলছেন। আরেকটি রাউন্ড অবশিষ্ট রয়েছে বলে জানান এই ক্লার্ক। বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের (বাচাশ্রই) ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নৃপেন দাস বলেন, আমাদের সাপ্তাহিক ছুটি রোববার থাকায় কিছু কিছু চা বাগানের শ্রমিক কাজে যাননি। তবে মৌলভীবাজারের অনেক বাগানের শ্রমিকরা কাজে যোগদান করেছেন। আসলে এই কিছুদিন আন্দোলন-সংগ্রম করে তারা একদিন বিশ্রাম নিচ্ছেন। প্রতিটি চা বাগানের বাগান পঞ্চায়েতের সঙ্গে কথা হয়েছে, তারা বলেছেন সোমবার থেকে পুরো দমে কাজে যাবেন। বলেন, আমাদের মৌলভীবাজারের অধিকাংশ বাগানেই প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। চায়ের এই ভরা মৌসুম আর পাতাগুলো বিনষ্ট হবে না। এবার টি ইন্ডাস্ট্রিতে (চা শিল্প) তার বাৎসরিক লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে দ্রুতবেগে অগ্রসর হবে।