টাকা দিলে ওয়ার্ডের ডিউটিতে থাকা লোকজন সুন্দরভাবে কাজ করে। আর যদি টাকা না দেই, তাহলে রোগীর ১২টা বেজে যাবে। সকালের কাজ করবে রাতে, আবার রাতের কাজ করবে পরের দিন বিকেলে। তাও আবার অমানুষিক আচরণ করে। তারা শুরুতেই আচরণ খারাপ করে বুঝিয়ে দেয় যে, আমাকে টাকা দাও, ভালো ব্যবহারের পাশাপাশি সেবাও পাবা ভালো।
তিনি আরও জানান, এখানে রোগীর অবস্থা আপনারা দেখছেন। লোকজন তার রোগী একটু স্বাচ্ছন্দ্যে থাকার জন্য একটা সিটের চেষ্টা কবরেই। রোগীর স্বজনদের এই সরলতার সুযোগ নিয়েই ওয়ার্ডে থাকা কিছু অসৎ লোকজন বাণিজ্য করে। কোন রোগীর আগে ছুটি হবে সেটা ওয়ার্ডের লোকজনই জানে। সে কারণে রোগীর স্বজনরা অগ্রিম তাদের হাতে টাকা দেয়। যে টাকা বেশি দেয় তাকে সিট দেওয়া হয়।রোগীর এই স্বজন আরও বলেন, এছাড়া সরকার তো কোটি কোটি টাকা স্বাস্থ্য খাতে ব্যয় করছে আমাদের মতো অসহায় গরিবরা যেন স্বাচ্ছন্দের চিকিৎসা পায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও যথাসম্ভব চেষ্টা করছে রোগীদের সেবা যতটা সহজ করা যায়। কিন্তু ওয়ার্ডের ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে থাকা লোকজনের কারণেই আজকে রোগীরা অসহায়। আমি মনে করি তাদেরই জরুরি চিকিৎসা দরকার। আমার মনে হয় তারা মানসিক রোগী। তা না হলে রোগীদের বাণিজ্য হিসেবে ব্যবহার করতে পারতেন না।
নিউরো সার্জারির ২০৪-এর ওয়ার্ড মাস্টার আবুল হোসেন এক বাক্যে এসব অনিয়মের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। বলেন, টাকার বিনিময়ে রোগীদের বিছানা পাইয়ে দেওয়াসহ অন্যান্য কাজ আগের তুলনায় অনেক নিয়ন্ত্রণে এসেছে। আমরা সব সময় মনিটরিং করে থাকি। এছাড়া ওই ওয়ার্ডে প্রতিদিন বহু রোগী ভর্তি হয়। এক ওয়ার্ডে পাঁচটি ইউনিটের রোগী ভর্তি হয়। এ জন্য ওই ওয়ার্ডে প্রতিদিনই রোগীর ব্যাপক চাপ থাকে।
অপরদিকে নিউরোসার্জারির বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা, অসিত চন্দ্র সরকার জানান, ২০৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৫ ইউনিটের তত্ত্বাবধানে রোগী ভর্তি হয়। সেখানে প্রতিদিনই রোগী ভর্তি হয়। এ জন্য সব সময়ই রোগীর চাপ বেশি থাকে। ওয়ার্ডে কিছু অসাধু ব্যক্তি রোগীকে জিম্মি করে তাদের কাছ থেকে টাকা আদায় করে থাকে- বিষয়টি সত্য।
তিনি আরও বলেন, এছাড়া ভর্তি রোগীকে ট্রলিতে করে হাসপাতালের অন্য কোথাও পরীক্ষার জন্য নিয়ে যেতেও টাকা দিতে হয়। রোগী বা তাদের স্বজনরা এজন্য টাকা না দিলে তারা কাজ করতে চায় না। এক কথায় তারা রোগীদের অসহায়েত্বের সুযোগ নেয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যথাযথ চেষ্টা করছে এসব অনিয়ম বন্ধ করার জন্য।
এ ব্যাপারে ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক বিগ্রেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক জানান, এরকম অভিযোগ আমাদের কানেও আসে। কিন্তু কোনো প্রমাণ নেই। আমরা কার বিরুদ্ধে ভ্যবস্থা নেব। প্রমাণসহ কেউ অভিযোগ দিলে, তার পরিচয় গোপন রেখে ওয়ার্ডে থাকা ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে আমরা অ্যাকশনে যেতাম। তবুও আমরা সব সময় চেষ্টা করে যাচ্ছি হাসপাতালে রোগীরা যেন স্বাচ্ছন্দ্যে সেবা পায়।