সমাচার ডেস্ক: পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন বলেছেন, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখলে আমাদের দেশ উন্নয়নের দিকে যাবে এবং সত্যিকারের সাম্প্রদায়িকতামুক্ত একটা দেশ হবে। আমি ভারতে গিয়ে বলেছি, শেখ হাসিনাকে টিকিয়ে রাখতে হবে। তাকে টিকিয়ে রাখার জন্য যা যা করা দরকার, আমি ভারতবর্ষের সরকারকে সেটা করতে অনুরোধ করেছি। গত বৃহস্পতিবার রাতে চট্টগ্রাম নগরীর জেএমসেন হলে জন্মাষ্টমী উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, অনেকেই আমাকে ভারতের দালাল বলেন। কারণ অনেক কিছু হয়, আমি স্ট্রং স্ট্যাটমেন্ট দেই ন। কিন্তু আমারও তো একটি কনস্টিটিউশনি আছে। সেটাকে তো আমি ইগনোর করতে পারি না। তিনি বলেন, আমি ভারত সরকারকে বলেছি, আমার দেশে কিছু দুষ্ট লোক আছে, কিছু উগ্রবাদী আছে। আমার দেশ সারা পৃথিবী থেকে বিচ্ছিন্ন না, আপনার দেশেও যেমন দুষ্ট লোক আছে, আমাদের দেশেও আছে। কিছুদিন আগে আপনাদের দেশেও এক ভদ্রমহিলা কিছু কথা বলেছিলেন, আমরা সরকারের পক্ষ থেকে একটি কথাও বলিনি। বিভিন্ন দেশ কথা বলেছে, আমরা বলিনি। সেটা আপনাদের মঙ্গলের জন্য, আমাদের মঙ্গলের জন্য। মোমেন বলেন, আমরা যদি একটু বলি, তখন আমাদের উগ্রবাদীরা আরও সোচ্চার হয়ে আরও বেশি বেশি কথা বলবে। তাতে আমাদের দেশের আইনশৃঙ্খলা বিঘ্ন হবে। আমাদের স্থিতিশীলতা বিঘ্ন হবে। সেইজন্য আমি ভারতবর্ষকে বলেছি যে, আমরা এমন ভাবে কাজ করব যাতে আমাদের কোন কারণে কোন উস্কানিমূলক কর্মকাণ্ডকে কখনও প্রশ্রয় দেব না। এটা যদি আমরা করতে পারি, ভারত এবং বাংলাদেশ উভয়ের মঙ্গল। মন্ত্রী বলেন, আমি বলেছি, শেখ হাসিনা আছেন বলে ভারতের যথেষ্ট মঙ্গল হচ্ছে। এ বর্ডারে অতিরিক্ত খরচ করতে হয় না। আর আমাদের উন্নতি হচ্ছে বলে ভারতে লোক যায়। ২৮ লাখ লোক আমাদের দেশ থেকে প্রতিবছর ভারতে বেড়াতে যায়। ভারতের কয়েক লাখ লোক আমাদের দেশে কাজ করে। এটি সম্ভব হয়েছে আমাদের সোনালী অধ্যায়ের ফলে। সুতরাং আমরা কোনো ধরনের উস্কানিমূলক কাজ করব না। তিনি বলেন, আসামের মুখ্যমন্ত্রী আমাকে বললেন, শেখ হাসিনার প্রতি আমাদের অনেক কৃতজ্ঞতা। আমি বললাম কেন। তিনি বলেন, আমাদের এখানে রাস্তাঘাট হচ্ছে, শিল্প কারখানা আসতেছে। এগুলো সম্ভব হয়েছে শেখ হাসিনার জন্য। শেখ হাসিনা ক্ষমতায় এসে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। বাংলাদেশে সন্ত্রাসের কোন জায়গা নেই। এর ফলে আসামে ও মেঘালয়ে কোন সন্ত্রাসী নেই। তিনি বলছেন এই কারণে বিভিন্ন কোম্পানি এসে এখানে শিল্প কারখানা খুলছে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উদ্দেশে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আপনারা মনে করবেন না আপনারা সংখ্যালঘু। আপনারা এ দেশের নাগরিক, সমান অধিকার। সুতরাং আপনারা আপনাদের অধিকার অবশ্যই অর্জন করবেন। এ বিষয়ে আপনাদের সহযোগিতা করার জন্য আমি আছি। আমরা এমন একটি সমাজ বিনির্মাণ করতে চাই, যেখানে উগ্রবাদ, জঙ্গিবাদ থাকবে না। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এক বছর আগে পূজার সময় কুমিল্লায় পূজা মণ্ডপে কোরআন শরীফ রেখে এবং ছবি তুলে আপলোড করার ফলে ভাইরাল হয়। ফলে কিছু মোল্লা গোষ্ঠী সেখানে আক্রমণ করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে গিয়ে সেখানে পুলিশ গুলি করে। সে সময় আমাদের তথ্যমতে ছয় জন লোক মারা যায়। তাদের মধ্যে চার জন মুসলিম ও দুই জন হিন্দু। আমরা চাই না দেশের একটা লোকও মারা যাক। কিন্তু বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম প্রচার করেছে সেখানে অনেক নারী নির্যাতিত হয়েছেন। অথচ সেখানে একজন নারীও ধর্ষিত হননি। আব্দুল মোমেন বলেন, শ্রীকৃষ্ণ জন্ম নিয়েছিলেন অত্যাচারী রাজা কংসের কারাগারে। শ্রীকৃষ্ণ জন্মগ্রহণ করে বিশ্বকে শেকল ভাঙার কাহিনি শুনিয়ে গেছেন। মানুষের জন্য দিয়ে গেছেন মানবপ্রেমের অবিনশ্বর বাণী। সেটি এমন একসময় যখন দুষ্টু লোকেরা ন্যায় নীতি ও সত্যকে প্রায় নষ্ট করে ফেলেছিল। ঠিক তখনি সৃষ্টের পালন আর দুষ্টের দমনের জন্য পৃথিবীতে এসেছিলেন। একসময় হয়ে উঠলেন ন্যায়ের প্রতিমূর্তি। যখন মহাভারতে ন্যায় এবং অন্যায়ের মধ্যে কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল। তখন শ্রীকৃষ্ণ ন্যায়কে রক্ষার জন্য ন্যায়ের পক্ষের যোদ্ধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন। আমরাও ন্যায়ের পক্ষের যোদ্ধা। আমরাও দেশে সংকীর্ণতাবাদ থেকে দূরে থাকতে চাই। জন্মাষ্টমী উদযাপন কমিটির সভাপতি সুকুমার চৌধুরীর সভাপতিত্বে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী উদ্বোধন করেন। এ সময় বিশেষ অতিথি হিসেবে বাঁশখালী উপজেলার সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান, এস কে সিকদার, চন্দন তালুকদার, দুলাল চন্দ্র দে, গৌরাঙ্গ চন্দ্র দে, দুলাল চন্দ্র দে, শংকর সেন বক্তৃতা করেন।