এদিকে প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ডলার সংরক্ষণ করে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করার প্রমাণ পাওয়ায় গত সোমবার দেশি-বিদেশি ৬টি ব্যাংকের ট্রেজারি বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে অপসারণ করতে নির্দেশ দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকগুলো হলো— বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক ও সাউথইস্ট ব্যাংক এবং বিদেশি খাতের স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক।
এছাড়া ডলারের কারসাজি রোধে খোলাবাজার ও এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে ধারাবাহিক অভিযান পরিচালনা করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। গত সপ্তাহ পর্যন্ত কারসাজির অপরাধে পাঁচ মানি চেঞ্জারের লাইসেন্স স্থগিত করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি ৪২টিকে শোকজ করা হয়েছে। এছাড়া লাইসেন্স ছাড়া ব্যবসা করায় ৯টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বলা হয়েছে।জানা গেছে, তিন মাসের মধ্যে ১৯ দফা বাড়ানো হয়েছে ডলারের দাম। আলোচ্য সময়ে টাকার মান কমেছে ৮ টাকা ৫০ পয়সা। এর আগে গত ২৯ মে দেশে ডলারের এক রেট ৮৯ টাকা বেঁধে দিয়েছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কিন্তু, পরবর্তীতে এই রেট উঠিয়ে দিয়ে ডলারের দর বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়। বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পর দুই-একদিন পরপরই বাড়ছে ডলারের দাম।ডলারের দাম পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ২০২০ সালের জুলাই থেকে গত বছরের আগস্ট পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল। কিন্তু, এরপর থেকেই বড় ধরনের আমদানি ব্যয় পরিশোধ করতে গিয়ে ডলার সংকট শুরু হয়, যা এখনও অব্যাহত আছে। ২০২১ সালের আগস্টের শুরুতেও আন্তঃব্যাংকে প্রতি ডলারের দাম একই ছিল। ৩ আগস্ট থেকে দুই-এক পয়সা করে বাড়তে বাড়তে গত বছরের ২২ আগস্ট প্রথমবারের মতো ডলারের দাম ৮৫ টাকা ছাড়ায়।
এদিকে, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কেনাবেচা হয়েছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সায়। ৯ জানুয়ারিতে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮৬ টাকা। গত ২৩ মার্চ তা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সা হয়। গত ২৭ এপ্রিল ডলার প্রতি ২৫ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে।
গত ১০ মে ডলার প্রতি আরও ২৫ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। গত ১৬ মে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ২৩ মে ফের ৪০ পয়সা বাড়িয়ে ডলারের দাম ৮৭ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। এরপরও বাজার স্থিতিশীল হয়নি।
পরে সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ফরেন এক্সচেঞ্জ ডিলারস অ্যাসোসিয়েশন (বাফেদা) এবং ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকারস, বাংলাদেশের (এবিবি) দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ মে বাংলাদেশ ব্যাংক আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম ৮৯ টাকা বেঁধে দেয়। আর আমদানিকারকদের কাছে বিক্রির জন্য বিসি সেলিং রেট নির্ধারণ করা হয় ৮৯ টাকা ১৫ পয়সা। যদিও ব্যাংকগুলো আন্তঃব্যাংক লেনদেনে প্রতি ডলারের বিনিময় মূল্য ৮৯ টাকা ৮০ পয়সার প্রস্তাব করেছিল। তাতেও বাজার স্থিতিশীল না হওয়ায় ডলারের এক রেট উঠিয়ে দিয়ে গত ২ জুন আরও ৯০ পয়সা বাড়িয়ে ডলারের দাম ৮৯ টাকা ৯০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। গত ৬ জুন প্রতি ডলারের দাম ৯১ টাকা ৫০ পয়সা, ৭ জুন ৯১.৯৫ টাকা, ৮ জুন ৯২ টাকা, ১৩ জুন ৯২.৫০ টাকা, ১৫ জুন ৯২.৮০ টাকা, ২১ জুন ৯২.৯০ টাকা, ২২ জুন ৯২.৯৫ টাকা, ২৮ জুন ৯৩.৪৫ টাকা, ২৯ জুন ৯৩.৪৪ টাকা, ৩০ জুন ৯৩.৪৫ টাকা, ১৪ জুলাই ৯৩.৬১ টাকা, ১৭ জুলাই ৯৩.৯৫ টাকা, ২১ জুলাই ৯৪.৪৫ টাকা এবং ২৫ জুলাই ৯৪.৭০ টাকা হয়। বুধবার আন্তঃব্যাংকে ডলার লেনদেন হয়েছে ৯৪.৯৫ টাকায়, যা ডলারের দামের সর্বোচ্চ রেকর্ড।