ঈদের ছুটিতে হালতিবিলে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়

ঈদের ছুটিতে হালতিবিলে দর্শনার্থীদের উপচে পড়া ভিড়
নাটোর: দর্শনার্থীদের আগমনে মুখরিত হয়ে উঠছে নাটোরের হালতিবিল। ঈদের ছুটিতে আনন্দ ভাগাভাগি করতে প্রিয়জনদের সঙ্গে নিয়ে ছুটছেন দেশের আলোচিত ও পর্যটন এলাকা হিসেবে খ্যাত হালতিবিলে। পরিবেশ ও প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করছেন হাজারো দর্শনার্থী। অনেকে নৌকায় করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন আর গানের তালে তালে নেচে নেচে আনন্দ উল্লাস করছেন। কেউ বা পানিতে নেমে গোসল করছেন। পাশাপাশি পাটুল ঘাটে বসেছে নানা রকমের দোকান পসরা, চলছে সমান তালে বেচা-বিক্রি। এছাড়া এবার দর্শনার্থীদের জন্য গড়ে তোলা হয়েছে আরএফসি নামে একটি রেস্টুরেন্ট। সেখানে পাওয়া যাচ্ছে চাইনিজ ও বাংলা খাবারসহ নানা প্রকারের সুস্বাদু খাবার এবং পরিবেশও বেশ মনোরম।

ঈদের দ্বিতীয় দিন সোমবার (১১ জুলাই) বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায় এমন চিত্র। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বাস, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার শ্যালো ইঞ্জিনচালিত গাড়ি নসিমন ও মোটরসাইকেলে চেপে আসছেন হালতিবিলে। দর্শনার্থীদের আগমনে পাটুল ঘাটসহ পুরো হালতিবিল যেন মুখরিত হয়ে উঠেছে। শিশু, ছেলে-বুড়ো, মাঝ বয়সীসহ সব বয়সী মানুষের সমাগম আর অপরূপ প্রকৃতি সব মিলিয়ে এক ভিন্ন বৈচিত্র্য এনে দিয়েছে হালতিবিলে।

স্থানীয়রা জানান, প্রতি বছর বর্ষা এলেই হালতিবিলে দর্শনার্থীদের সমাগম ঘটে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ এসে হালতিবিলে ঘুরে বেড়ায়, আনন্দ উল্লাস করে। তবে ঈদের সময় মানুষের সমাগম একটু বেশি হয়। গত এক দেড় যুগেরও বেশি সময় ধরে এখানে মানুষের আনাগোনা শুরু হয়। এ কারণে স্থানীয়দের আয় রোজগার বেড়েছে। অনেকের কর্মসংস্থানের পথ প্রসারিত হয়েছে। এলাকাটি এখন মিনি কক্সবাজার নামেও বেশি পরিচিত লাভ করেছে। তবে সেই তুলনায় সরকারিভাবে কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ করেন তারা।রাজশাহী শহর থেকে আসা দর্শনার্থী সুমনা সরকার, বিথি খাতুন, আবির হোসেন  জানান, প্রতিবছর ঈদ এলেই তারা গাড়ি ভাড়া করে বন্ধুদের কিংবা স্বজনদের সঙ্গে করে আসেন হালতিবিলে। নৌকায় করে ঘুরে বেড়াতে আর সন্ধ্যার সময় সুর্যাস্ত দেখতে খুব মজা লাগে। এজন্য ঈদ ছাড়াও অন্যান্য দিনও তারা আসেন একটু আনন্দ করতে।

কথা হয় বগুড়া থেকে আসা সজল মাহমুদ, নওগাঁ সদরের রুখসানা খাতুনসহ আরও অনেকের সঙ্গে। তারা  জানান, ইউটিউব চ্যানেল, ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ দেখে এবার হালতিবিলে বেড়াতে এসেছেন। দুপুর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত তারা নৌকা ভাড়া নিয়ে হালতিবিলের বিভিন্ন স্থান ঘুরে বেড়িয়েছেন। তারা পরিবেশ ও প্রকৃতি দেখে অনেক মুগ্ধ হয়েছেন। সুযোগ পেলেই তারা আবারও আসবেন বলে আশা প্রকাশ করেন। তবে নৌকা ভাড়াটা বেশি নেওয়া হচ্ছে বলে তারা অভিযোগ করেন। পাশাপাশি নৌকাগুলোর সৌন্দর্য বাড়ানোসহ পরিবেশ উন্নয়ন করা দরকার বলে মন্তব্য করেন।

রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা এবং বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ফরহাদ হোসেন  জানান, ঈদের সুবাদে এবার নাটোরে শ্বশুরবাড়িতে এসেছেন। স্ত্রী, সন্তান, শ্বশুর-শাশুড়ি, শ্যালককে সঙ্গে নিয়ে তিনি হালতিবিলে বেড়াতে এসেছেন। হালতিবিলের পরিবেশ ও প্রকৃতিতে মুগ্ধ হয়েছেন। খোলা স্নিগ্ধ বাতাস, স্বচ্ছ পানি আর নৌকায় করে বেড়ানো তার কাছে খুব ভাল লেগেছে। সুযোগ পেলে তিনি আবারও আসবেন।

তিনি বলেন, ব্যবসার সুবাদে দেশের বিভিন্ন পর্যটন এলাকায় গেছেন, সেই তুলনায় হালতিবিল কোনো অংশে কম নয়। কিন্তু হোটেল-মোটেল বা রিসোর্ট না থাকায় পর্যটকদের জন্য অসুবিধা। তার মতে হালবিলে পর্যটনের অপার সম্ভাবনা আছে। সেই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে হালতিবিল একদিন দেশের সেরা পর্যটন এলাকার মতই স্থান দখল করবে।

তিনি বলেন, হালতিবিলের পর্যটন বিকাশে সরকারিভাবে অনেক উদ্যোগ নেওয়ার সুযোগ আছে। একই অভিব্যক্তি প্রকাশ করেছেন আরও অনেকে। দশ বছরের শিশু অয়ন, স্নিগ্ধা জানায়, বাবা-মায়ের সঙ্গে হালতিবিলে বেড়াতে এসে নৌকায় চড়ে বেশ মজা পেয়েছে। স্থানীয় বাদাম, পান, শো-পিস ও বিভিন্ন খাবার দোকানের মালিকরা জানান, প্রতিদিন মানুষের আগমন ঘটে বলে তারা অনায়াসে ব্যবসা করে সংসার চালাতে পারছেন। আর ঈদ মৌসুম এলে তো কোনো কথা নেই। কারণ তিন-চারদিনের আয় দিয়েই তাদের অনেক দিনের খাবার জোটে।

নৌকা মালিক সফির মণ্ডল, জহুরুল ইসলাম জানান, পাটুলঘাটে অন্তত তিন শতাধিক নৌকা রয়েছে। প্রতিদিন গড়ে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা আয় হয়। ঈদ মৌসুম এলে তাদের আয়ের পরিধি আরও বেড়ে যায়। এই সময়ে নৌকার চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ফলে চাহিদা মোতাবেক নৌকা সরবরাহ করা যায় না। এজন্য অনেকেই বেশি ভাড়া দিয়ে নৌকা নেয়। বছরের অন্যান্য সময় নৌকা ভাড়া স্বাভাবিক পর্যায়ে থাকে।

পিপরুল ইউপি চেয়ারম্যান কলিমুদ্দিন জানান, হালতিবিলে আসা দর্শনার্থীরা যাতে কোনোভাবে স্থানীয়দের দ্বারা ক্ষতির শিকার না হন সেজন্য ইউনিয়ন পরিষদ, পাটুলগ্রামবাসী, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসন তৎপর আছে।

তিনি আরও বলেন, পর্যটন করপোরেশন থেকে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা হালতিবিল ও পাটুলঘাট পরিদর্শন করে গেছেন। আশা করছি খুব শিগগিরই তারা পর্যটন বিকাশে যা করণীয় করবেন।নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম  জানান, জনসমাবেশের বিষয়টি চিন্তা করে হালতিবিল ও পাটুল ঘাটে পুলিশ মোতায়েন রাখা হয়েছে। যাতে আগত দর্শনার্থীদের কোনো প্রকার ভোগান্তিতে পড়তে না হয়। এছাড়া আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকে এবং কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে। যতদিন পর্যন হালতিবিলে পর্যটকদের আগম ঘটবে, ততদিন পুলিশ সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় কাজ করবে।

নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুখময় সরকার জানান, হালতিবিলে আগত দর্শনার্থীদের যাতে কোনো প্রকার সমস্যায় পড়তে না হয়, সেজন্য উপজেলা প্রশাসন তৎপর রয়েছে। এছাড়া এবার পর্যটন আকৃষ্ট করতে পিপরুল ইউনিয়নের ঠাকুরলক্ষ্মীকোল থেকে পাটুল পর্যন্ত সড়কের দুই পাশ পরিষ্কার করে সারি সারি তাল গাছে রং দিয়ে সাজানো হয়েছে। পাবলিক টয়লেট ও বসার ঘরটি প্রস্তুত ও পরিচ্ছন্ন রাখা হয়েছে।

তিনি বলেন, হালতিবিলের পর্যটন বিকাশে উপজেলা প্রশাসন সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন