নিউজ ডেস্ক : জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) অনুবিভাগ নির্বাচন কমিশনের (ইসি) কাছ থেকে সরকারের অন্য কোনো সংস্থা নিতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এটিএম শামসুল হুদা। রোববার (১২ জুন) নির্বাচন ভবনের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সংলাপে বসে তিনি এ মন্তব্য করেন।ড. এটিএম শামসুল হুদা নেতৃত্বাধীন কমিশনের হাতে নেওয়া হয়েছিল ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা তথা এনআইডি প্রকল্প। তিনি স্মৃতিচারণ করে তার সময়ের নানা ঘটনাবলী তুলে ধরেন সংলাপে। বলেন, আমরা দায়িত্ব নেওয়ার পর দেখলাম ইসি সচিবলায় প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের অধীনস্ত। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সচিবালয় সরকারের কোনো মন্ত্রণালয় দফতরের প্রশাসনিক আওতাধীন থাকতে পারে না। সেই প্রেক্ষিতে ২০০৯ সালে ইসি সচিবালয় আইন হলো। এটা মেইন অর্জন। যে সচিবালয়ের মাধ্যমে সমস্ত কাজ হয়, আর এটা যদি প্রধানমন্ত্রী দফতরের অধীনে হয়, তাহলে আমি কী জন্য আছি।
তিনি বলেন, ভাল নির্বাচন করতে গেলে যা করতে হয়, তাই আমরা করেছি। যেহেতু অন্য রকম সরকার (সেনা সমর্থিত তত্বাববধায়ক সরকার) ছিল, সে সময় নতুন নতুন সবই পেয়েছি। তাই কারো কাছে যাওয়ার প্রয়োজন হয় নাই। আমি বহুবার দেশের বাইরে গিয়েছি। কোনো কিছু করতে হলে অন্যান্য দেশে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন লাগে। ভারতেও লাগে। কিন্তু আপনারা (বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন) সর্ম্পূর্ণ স্বাধীন।তিনি আরও বলেন, এখন আলোচনায় আসে না। আমাদের মাছ ভাত খাওয়ার মতো, সেটা নিয়ে কেউ আলোচনা করে না, সেটা হলো এনআইডি। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য এনআইডির কোনো বিকল্প নাই।
ড. হুদা বলেন, সে সময় জেলা নির্বাচন অফিস নাই। অধিকাংশ ডিসি অফিসের নিকৃষ্ট রুম যেটা সেটা তার জন্য বরাদ্দ। এটা তো চলতে পারে না। স্টেটাস যদি বাড়াতে হয়- ইসির জেলা অফিস নাই, এটা তো হতে পারে না। একটা প্রকল্পে ৪০ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে ১৮ মিলিয়ন ডলার বেঁচে গেল, বৃটিশ গভমেন্ট, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ডোনার ছিল। তাদের বলা হলো। এরপর অফিস করা হলো। কিন্তু এক প্রকল্পের অর্থ অন্যখাতে ব্যয় করা যায় না। সে সময় বৃটিশ হাইকমিশনার বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত আনোয়ার চৌধুরী বললেন যে এভাবে হবে না, আপনি বলেন ভোটার তালিকা সংরক্ষণের জন্য মাঠ পর্যায়ে সার্ভার স্টেশন লাগবে। এটা বলে প্রকল্প নেন। সেভাবেই তৈরি হয়েছিল উপজেলা, জেলা নির্বাচন অফিস। এরপর মন্ত্রিপরিষদ থেকে বলা হলো ডিসি অফিসের সীমানার মধ্যে এটা করা যাবে না, যেহেতু নির্বাচন কমিশন স্বাধীন বডি।তিনি বলেন, এই অবস্থায় প্রটোকল ভেঙে আমি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলাম। ১০ মিনিটের মিটিংয়ে উনি নির্দেশনা দিলেন, যেখানে যেখানে জায়গা আছে নির্বাচন কমিশনকে দেওয়ার জন্য। এখনও এনআইডি অনুবিভাগ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিতে চায়। আমি একটি আইন করেছি জাতীয় পরিচয়পত্র নিবন্ধন আইন। এই আইন থাকা অবস্থায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেন আর যেই বলেন, নিতে পারবে না। এখানে স্পষ্ট বলা আছে, জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত সকল কিছু নির্বাচন কমিশন করবে।
সম্প্রতি মন্ত্রিপরিষদ থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের হাতে লোকবলসহ এনআইডি অনুবিভাগ হস্তান্তরের জন্য। এবং হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে গত বছর দফায় দফায় নির্বাচন কমিশনকে চিঠিও দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সে প্রক্রিয়া আপাতত স্থগিত রয়েছে।
এটিএম শামসুল হুদার কমিশন ২০০৭-২০০৮ সালে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ন করেন। যার ভিত্তিতে গড়ে তোলা হয় তথ্যভাণ্ডার। আর এই তথ্যভাণ্ডারের মাধ্যমেই দেশের নাগরিকদের দেওয়া হচ্ছে জাতীয় পরিচয়পত্র। বর্তমানে উন্নত মানের জাতীয় পরিচয়পত্র বা স্মার্টকার্ডও দেওয়া হচ্ছে নগারিকদের।
ইসির তথ্যভাণ্ডারে ১১ কোটি ৩২ লাখ নাগরিকের তথ্য রয়েছে, যাদের প্রায় সকলেরই লেমিনেটিং করা এনআইডি রয়েছে। এই এনআইডি সার্ভারের মাধ্যমেই সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো নাগরিকদের পরিচয় শনাক্ত সাপেক্ষে সেবা দিচ্ছে। আর এতে সরকারের রাজস্ব বাড়াতে অবদানও রাখছে ইসি।