অনিশ্চয়তায় পদ্মাপাড়ের হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা 

অনিশ্চয়তায় পদ্মাপাড়ের হোটেল-রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা 
এ বিষয়ে শিমুলিয়া ঘাটের হোটেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মো. মুরাদ খান  বলেন, দীর্ঘদিন লালিত স্বপ্নের পদ্মা সেতু কয়েক দিন পর উদ্বোধন হবে। এর থেকে খুশির আর কী হতে পারে! এজন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। তিনি সাহসী উদ্যোগ নিয়ে নিজস্ব অর্থায়নে এত বড় একটি সেতু নির্মাণ করেছেন, যা সারা বিশ্বে প্রশংসিত।

তিনি বলেন, আনন্দের মাঝেও কিছু কষ্ট থেকে যায়। কষ্টটা হলো পদ্মার দুই পাড়ে লঞ্চ ও ফেরি ঘাট কেন্দ্রিক অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। সেতু চালু হলে ঘাটে যাত্রী কমে যাবে। আর যাত্রী কমে গেলে এসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো লোকসানে যাবে। তখন বাধ্য হয়ে মালিক বন্ধ করে দেবে। এটা নিয়ে সব ব্যবসায়ী চিন্তিত ও ব্যবসার ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছেন। শঙ্কা থেকে অনেকেই কর্মচারী ছাঁটাই শুরু করেছেন। ছোট ছোট প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দিচ্ছে। যারা আছেন তারা কেউ আর নতুন করে বিনিয়োগ করছেন না। ফলে হোটেল-রেস্টুরেন্টে কর্মরত হাজারেরও বেশি কর্মচারী বেকার হয়ে যাবে। তবে এর মধ্যেও সম্ভানা আছে। সরকার যদি এই ঘাটগুলো পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করে তাহলে পর্যটকরা আসবে। পর্যটকরা এলে এসব হোটেল-রেস্টুরেন্টের ব্যবসা সচল থাকবে। নতুন করে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে বলে জানান তিনি।

বেপারী হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের মালিক ইউনুস বেপারী   বলেন, মাওয়া ফেরি ঘাট হওয়ার পর থেকে হোটেল ব্যবসা করছি। গত ৮ বছর হলো শিমুলিয়া ঘাটে এসেছি। প্রথম দিকে ব্যবসা ভালো হতো। গত দেড় বছর ধরে এই লাইনে ফেরি ও লঞ্চ তুলনামূলক কম চলাচল করায় যাত্রী কমে গেছে। আর পদ্মা সেতু চালু হলে ঘাট বন্ধ হয়ে যাবে স্বাভাবিক নিয়মে। তখন আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে আমাদের ভবিষ্যৎ কী হবে সেটা জানি না।

রূপসী বাংলা হোটের অ্যান্ড রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার সোহেল আহমেদ  বলেন, আমরা পুরো অনিশ্চয়তায় আছি। সেতু চালু হওয়ার পর যদি ঘাট বন্ধ হয়ে যায় তখন আমাদের ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে। আর ঘাট চালু থাকলেও যাত্রীরা আর এখানে আসবে না। তবে একটা সম্ভাবনা রয়েছে, সেটা হলো সরকার যদি এ ঘাটকে পর্যটন কেন্দ্রে রূপান্তরিত করে তাহলে আমরা হোটেল-রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ীরা বেঁচে যাবো। তবে সেটা দ্রুত করতে হবে। দেরি হলে আমরা পুঁজি হারিয়ে পথে বসে যাবো। ইতোমধ্যে আমরা অনেক লোকসান দিয়েছি। নতুন কোনো বিনিয়োগ করে আর ধরা খেতে চাই না। সরকারকে এখনই স্পষ্ট করে ঘাটের বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিতে হবে। নইলে কর্মসংস্থান হারিয়ে হাজার হাজার লোক বেকার হবে।মাঝির হাটের ফেরি ঘাটের খাবার হোটেল ব্যবসায়ী লোকমান বলেন, পদ্মা সেতু হচ্ছে, দেশের উন্নয়ন হচ্ছে, দেখতে ভালো লাগে। যোগাযোগ ভালো হওয়ায় ঢাকার সাথে দূরত্ব কমেছে। তবে আমাদের মতো ছোট ব্যবসায়ীদের কপাল পুড়েছে। সেতু চালু হলে কাদের কাছে খাবার বিক্রি করবো। যাত্রী তো আর এ পথে আসবে না। ফলে আমাদের ব্যবসার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত!শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি, মাঝির ঘাট নৌরুটে ৮৭টি লঞ্চ, দেড় শতাধিক স্পিড বোট, ১০টি ফেরি বর্তমানে চলছে। এসব নৌযানে প্রতিদিন হাজার হাজার যাত্রী নিয়মিত পার হন। এই যাত্রীদের ওপর নির্ভর করেই দুই পারের ঘাটগুলোতে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। ঘাটের দুই পাড়ে ৭০টির মতো খাবার হোটেল, স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ মিলিয়ে দুই শতাধিক ফলের দোকান, ১০০ চায়ের দোকান, ৫০টি কনফেকশনারি রয়েছে। এছাড়া পান, সিগারেট, ঝালমুড়ি, বাদাম, ছোলা, আচার, সেদ্ধ ডিম, সিঙ্গারা, নারকেলচিড়া, শসা, দইসহ নানা রকম মুখরোচক খাবারের স্থায়ী ও ভ্রাম্যমাণ বিক্রেতা রয়েছে দুই হাজারের মতো। ঘাট না থাকলে এসব দোকান ও বিক্রেতাও আর থাকবে না। ফলে সব মিলিয়ে ৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান অনিশ্চয়তায় পড়ে যাবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন