ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম

ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম
নিউজ ডেস্ক : বোরো মৌসুমের উৎপাদিত চাল দিয়ে দেশের মোট চাহিদার ৫৪ শতাংশ মেটানো হয়। সেই বোরো ধানের নতুন চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে।এ সময় দাম কম থাকার কথা। কিন্তু চালের দাম বাড়ছে।গত এক সপ্তাহে রাজধানীর বাজারে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে সব ধরনের চালের দাম।ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুষ্টিয়া, নওগাঁর পাইকারি বাজারে এর কারণ খুঁজতে গিয়ে জানা গেছে, চালের ব্যবসায় যুক্ত বড় শিল্প গ্রুপগুলো একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ ধান ও চাল কেনা শুরু করেছে। এতেই অস্থির হয়ে উঠেছে বাজার। গত এক সপ্তাহে পাইকারি বাজারে সব ধরনের চালের ৫০ কেজির বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা দাম বেড়েছে।পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, বড় কম্পানিগুলো ধান কিনে মজুদ করছে। আবার ছোট ও মাঝারি মজুদদাররাও এই পথে ঝুঁকছেন। আছে মিল মালিকদের তৎপরতাও। বেশির ভাগ নিত্যপণ্যের দামও কয়েক সপ্তাহ ধরে বাড়ছে। মূল্যস্ফীতি, মুদ্রাস্ফীতি ও ডলারের দাম বৃদ্ধির আলোচনায় এবার যুক্ত হচ্ছে চালের বাজার।বৃহস্পতিবার রাজধানীর একাধিক বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, খুচরা পর্যায়ে সব ধরনের চাল কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির বাজারদরের তথ্যও বলছে গত এক সপ্তাহে চালের দাম কেজিতে দুই থেকে তিন টাকা বেড়েছে।ধানের ভরা মৌসুমে চালের দাম বাড়ায় কিছুটা ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। তারা বলছে, নতুন চাল বাজারে এলে নতুন-পুরনো সব চালের দাম কমে। এবার উল্টো আরো বাড়ছে।নওগাঁর মহাদেবপুরের শিউলী অটো রাইস মিলের মালিক আব্দুল জব্বার বলেন, ফ্রেস, পুষ্টি, প্রাণ, ইফাতসহ কয়েকটি কম্পানি নওগাঁ থেকে উন্নতমানের চাল সংগ্রহ করে প্যাকেটজাত করে বিক্রি করে। কম্পানিগুলো প্রতি মৌসুমের শেষের দিকে মহাদেবপুরে গুদাম ভাড়া নিয়ে চাল সংগ্রহ করে।বড় এই ব্যবসায়ীরা কুষ্টিয়া থেকেও চাল সংগ্রহ করে। তবে সেখানকার কোনো মিল মালিক বড় গ্রুপগুলোর চাল কেনার বিষয়ে মুখ খোলেনি।   কনজিউমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ধান উৎপাদন মৌসুমে বাজারে চালের দামে অস্থিরতা থাকার কথা নয়। মজুদদারি ঠেকাতে সরকারকে বাজার মনিটরিংয়ে জোর দিতে হবে। বিশ্ববাজারের সুযোগ নিয়ে ব্যবসায়ীরা যাতে চালের বাজার অস্থির করতে না পারেন সে ব্যবস্থা নিতে হবে।সম্প্রতি সয়াবিন তেল নিয়েও এমন পরিস্থিতি হয়েছে। বাজারে তেলের সরবরাহ স্বাভাবিক থাকার সময়ই এক শ্রেণির ব্যবসায়ী তেল কিনে মজুদ করেন। এক পর্যায়ে বাজারে সরবরাহে সংকট তৈরি হয়। কিন্তু সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর তখন কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কিন্তু তেলের দাম বাড়ানোর পর সরকার অভিযানে নেমে বিভিন্ন গুদাম, দোকান, ঘরবাড়ি থেকে প্রায় ২০ লাখ লিটার ভোজ্য তেল জব্দ করে। এই অভিযান দেরিতে শুরু হওয়ায় সমালোচনাও হয়। কারণ ততক্ষণে ভোক্তা ভোগান্তিতে পড়ে যায়। তাই চালের ক্ষেত্রে বাজার তত্ত্বাবধান করতে হলে এখনই তা করা উচিত বলে মনে করেন ভোক্তা ও ছোট ব্যবসায়ীরা।
বাজার পরিস্থিতি
রাজধানীর চালের পাইকারি বাজার বাবুবাজারে নাজিরশাইল ৫০ কেজির বস্তা গত সপ্তাহে ৩১৫০ টাকায় বিক্রি হয়। গতকাল ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে ৩২০০ থেকে ৩২৫০ টাকা বস্তা বিক্রি হয়েছে। মিনিকেট ৫০ কেজির বস্তা গত সপ্তাহে ২৮৫০ থেকে ২৯৫০ টাকায় বিক্রি হয়। গতকাল ৫০ থেকে ১০০ টাকা বেড়ে ২৯৫০ থেকে ৩০০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্রি-২৮ চালের ৫০ কেজির বস্তা ১০০ টাকা বেড়ে ২৩০০ থেকে ২৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাইজামও ১০০ টাকা বেড়ে ২২৫০ টাকা বস্তা বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে মোটা চাল বিক্রি হয়েছে ১৯০০ থেকে ১৯৫০ টাকায়। গতকাল বিক্রি হয়েছে ২০০০ টাকা বস্তা।বাবুবাজার পাইকারি চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. নিজাম উদ্দিন বলেন, বাজারে সব ধরনের চালের দাম বাড়তি। এক সপ্তাহের ব্যবধানে বস্তাপ্রতি ১০০ টাকা থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। তিনি বলেন, বাজারে চাল সরবরাহকারী বড় কম্পানিগুলো ধান কিনে মজুদ করছে, যা আগে হতো না। ফলে ভরা মৌসুমে ধানের দামও বাড়ছে।রাজধানীর জোয়ারসাহারা খুচরা বাজারের ভাই ভাই স্টোরের মালিক মো. নজরুল ইসলাম বলেন, চালের দাম কেজিতে দুই থেকে পাঁচ টাকা বেড়েছে। সরু চাল বা মিনিকেট ৬৫ থেকে ৬৮ টাকা, নাজিরশাইল ৭৫ টাকা, ব্রি-২৮, পাইজাম ও মোটা চাল ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

মাদারীপুরে ৪০০ কৃতী শিক্ষার্থীকে ছাত্রশিবিরের সংবর্ধনা

সরকারে না গিয়েও এনসিপি রাষ্ট্রীয় সুবিধা ভোগ করছে: খায়রুল কবির খোকন