সংযত হয়ে কথা বলুন: প্রধানমন্ত্রী

সংযত হয়ে কথা বলুন: প্রধানমন্ত্রী
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের খরচ নিয়ে সমালোচনার জবাব
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে সমালোচনার জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কেউ কেউ দেখলাম ইদানীং একটা কথা খুব বেশি প্রচার করার চেষ্টা করছে, একটা হলো—রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র; তারা টাকার অংক দিয়ে দেখাতে চাচ্ছেন যে, এত টাকা খরচ করার দরকারটা কী ছিল?’শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি শুধু এটুকুই বলবো, আমরা যখন সরকার গঠন করে রেন্টে পাওয়ার প্ল্যান্ট এনে কাজ শুরু করলাম তখনো এরা বলেছেন, এটার দরকারটা কী ছিল। এতে নাকি ভীষণ দুর্নীতি হচ্ছে। আর আজকে আমরা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট, যেটা সব থেকে বেশি পরিবেশবান্ধব, কোনো পলিউশন নেই। আনাতে খরচ বেশি কিন্তু বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী আর তাছাড়া আমরা তো এটা একটি দেশের সাথে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ নিয়েই এটা করেছি। সেখানে আমাদের টাকার অংক কম। আমরা টাকা পেয়েছি এবং সেটা আমাদের শোধ দিতে হবে ৫০ বছরে। ’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেটাই করতে গিয়েছি সেখানেই তাদের সমালোচনা। কাজেই কিছু লোক আছে তাদের সব সময় সমালোচনা করাটা অভ্যাসই থাকে। যত ভালো কাজ করেন না কেন নিজেদেরটা তারা দেখে, নিজেদেরটা তারা বোঝে। কিন্তু জনগণের ভালো মন্দ বোঝে না। ’তিনি বলেন, ‘আজকে আমরা শতভাগ বিদ্যুৎ দিয়েছি বলে আমাদের অর্থনীতি যথেষ্ট সচল। কাজেই পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করতে পেরেছি, যেটা সেই ’৬১ সালে করার কথা। আইয়ুব খানের আমলে তখন ১৯৬২ সালে দুটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র হবে। একটা তখনকার পূর্ব বাংলায়, আরেকটা পশ্চিম পাকিস্তানে। আমাদের সেই মুলোটা ঝুলিয়ে দিয়ে পরবর্তীতে আমাদের এখানে করা হলো না, দ্বিতীয়টাও পশ্চিম পাকিস্তানে করা হয়। ’তিনি বলেন, ‘এটা আমাদের একটা লক্ষ্যই ছিল। আজকে আমরা সেই বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করেছি। এর বিদ্যুৎটা যখন আসবে সেটা তো আমাদের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখবে। অর্থনীতি আরও সচল হবে, আরও চাঙা হবে এবং এটা তো সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র। কাজেই এটা নিয়ে সমালোচনা কেন? এটা নিয়ে কারা কথা বলছেন? গরিব মানুষের ঘরে বিদ্যুৎ গেছে, সেটা তাদের পছন্দ না। তারাই খাবেন, ভালো থাকবেন আর আমার গরিব মানুষগুলো ধুকে ধুকে মরবে। এটাই তারা চায়। ’রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের গুরুত্ব তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, ‘কাজেই এই বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে যে বিদ্যুৎ যাবে, তাতে যে আমাদের অর্থনীতির ভিত্তিটা কতটা তৈরি হবে, মজবুত হবে সেটা তারা চিন্তা করেন না। এর থেকে যে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে, এটাও তারা ভাবেন না। কারণ তারা তো এখন বিদ্যুৎ পেয়ে গেছেন। যখন ১০ ঘণ্টা, ১২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ পেতেন না তখন হয়তো বিদ্যুতের চাহিদাটা তারা বুঝতেন। ’শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর বিদ্যুৎ উৎপাদন করে ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দিয়েছি। আর সেই বিদ্যুতে ঘরে ঘরে টেলিভিশন চলছে আর এই বেসরকারিখাতে টেলিভিশন আমিই উন্মুক্ত করে দিয়েছি আর সেখানে বসেই তারা সমালোচনা করে যাচ্ছেন। ’

পদ্মা সেতু নিয়ে সমালোচনার জবাব
শেখ হাসিনা বলেন, ‘পদ্মা সেতু নিয়ে অনেক কথা। তারপর আসলো পদ্মা সেতুর রেললাইন; ৪০ হাজার কোটি টাকা দিয়ে পদ্মা সেতুর রেললাইন করার কী দরকার ছিল। কারা চলবে এই রেললাইনে। আমি অপেক্ষা করছি, রেললাইন যখন চালু হবে তখন কেউ চলে কিনা। তখন এই মানুষগুলোকে আমার মনে হয় ধরে নিয়ে দেখানো দরকার যে, এই রেল সেতুতে মানুষ চড়ে কিনা। ’প্রধামন্ত্রী বলেন, ‘একটি খরস্রোতা নদী, বিশ্বের খরস্রোতা নদীর মধ্যে আমাজন এবং পদ্মা। সেইখানে… রেললাইন নিয়েও তাদের সমালোচনা, এতটাকা কেন খরচ করা হলো। কিন্তু এই একটা সেতু নির্মাণ হওয়ার পর দক্ষিণ অঞ্চলের জেলাগুলোর অর্থনীতিতে যে গতিশীলতা আসবে, এই মানুষগুলোর চলাচল, পণ্যপরিবহন থেকে সর্বক্ষেত্রে সেটা তারা একবার ভেবে দেখছেন না। মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী পার হয়। আর এখন রেলে করে তারা চলে আসবে। ’তিনি বলেন, ‘আর এই রেলসেতু তো সেই মোংলা পোর্ট পর্যন্ত সংযুক্ত হচ্ছে। কাজেই ভবিষ্যতে আমরা পায়রা পোর্ট যখন করবো, পায়রা পোর্ট পর্যন্ত যাতে সংযুক্ত হয়, সেই ব্যবস্থা আমরা নিচ্ছি। কিন্তু সেটা এই মুহূর্তে বেশি প্রয়োজন নেই বলে আমরা একটু ধীরগতিতে যাচ্ছি। ’পদ্মা সেতু সম্পূর্ণ নিজের টাকায় করা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘কাজেই এখানেও তাদের সমালোচনা ৪০ হাজার কোটি টাকা নাকি আমরা ধার করেছি। এখানে যারা এই কথাগুলো বলছেন, তাদের স্পষ্ট বলতে চাই যে, পদ্মা সেতুর একটি টাকাও আমরা কারো কাছ থেকে ঋণ নেইনি, ধার নেইনি। এটা সম্পূর্ণ বাংলাদেশের সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে করা হচ্ছে। এটা তাদের জানা উচিত। একেবারে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা দিয়ে আমরা তৈরি করছি। ’

বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এমনকি যখন আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করলাম তখনো তারা বললো, এটার কী দরকার ছিল। মানে যাই করবেন তাতেই বলবে, এটার কী দরকার ছিল। তাদের জন্য দরকার না থাকতে পারে আমাদের দেশের মানুষের জন্য দরকার আছে। ’তিনি বলেন, ‘আমরা তাদের মতো দুই চারজন, যারা দেশের অর্থ সম্পদ ভোগ করে তাদের কথা আমরা ভাবি না। ভাবি দেশের তৃণমূলের মানুষ, যারা অসহায়, যারা শোষিত, যারা বঞ্চিত—আমি তাদের কথা ভাবি। তাদের কল্যাণ যাতে হয়, আমরা সেটা দেখি। শুধু বড়লোকদের দুই চারটা ছেলে-মেয়ে কম্পিউটার ব্যবহার করবে আর আমার গ্রামের ছেলে-মেয়েরা ব্যবহার করবে না, সেটা তো হয় না। ’প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কাজেই একেবারে গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত যাতে কম্পিউটার ব্যবহার করতে পারে, সমস্ত তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে, বিশ্বের সাথে সংযোগ করতে পারে, বিশ্বটাকে তাদের নিজের হাতের মুঠোয় আনতে পারে—আমরা সেভাবেই পদক্ষেপ নেই। ’

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন