নিউজ ডেস্ক : রাজধানীর নিউমার্কেটে ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ব্যবসায়ীদের সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে কাজ করছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। জড়িতদের বিষয়ে নিশ্চিত হতে অনেককেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সহিংসতার সময়ের ছবি-ভিডিও, সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে চলছে জড়িতদের শনাক্তের কাজ। ইতোমধ্যে ১৫ জনের বেশি শিক্ষার্থী ও দোকানীকে শনাক্ত করা গেছে, এদের মধ্যে বেশ কয়েকজনের পরিচয়ও নিশ্চিত হতে পেরেছেন সংশ্লিষ্টরা।শনাক্তকারীদের টার্গেট করে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ইন্ধনদাতা থাকলে তাদেরও খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে। তদন্তের স্বার্থে তথ্য পেতে অনেককেই আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এরমধ্যে কাউকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়েও দেওয়া হচ্ছে।বেশ কয়েকজনের পরিচয় নিশ্চিত হলেও কাউকে গ্রেফতারের কথা নিশ্চিত করেনি আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। তবে অনেকেই গোয়েন্দাদের নজরদারীতে রয়েছেন।সূত্র জানায়, বিষয়টি ছাত্র সম্পর্কিত হওয়ায় তারা সতর্কতার সঙ্গে এগোচ্ছেন। নিরপরাধ কেউ যেন হয়রানির শিকার না হন সে জন্য আগে নিশ্চিত হতে কাজ করছেন তারা। সংশ্লিষ্টদের প্রত্যাশা, যে কোনো সময় জড়িতদের গ্রেফতার করা সম্ভব হবে।নিউমার্কেটে সংঘর্ষে কুরিয়ার কর্মী নাহিদ ও দোকানকর্মী মোরসালিস নিহতের ঘটনায় দুটি হত্যা মামলাসহ প্রায় ১ হাজার ৪০০ জনকে আসামি করে চারটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেফতারে নিউমার্কেট থানা ছাড়াও ডিএমপির নিজস্ব গোয়েন্দা ইউনিট, মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি), র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি), স্পেশাল ব্রাঞ্চ (এসবি) ও একাধিক সাইবার টিম কাজ করছে।সূত্র জানায়, রোববার (২৪ এপ্রিল) বিকেলে ডিবি ও র্যাবের গোয়েন্দা দল ঢাকা কলেজের একটি ছাত্রাবাসে অভিযান চালায়। এ সময় কলেজের আন্তর্জাতিক ছাত্রাবাসের ১০১ নম্বর কক্ষে অভিযান চালিয়ে জহির হাসান জুয়েলকে আটক করা হয়। পরে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাকে ছেড়ে দিয়েছে ডিবি। জুয়েল কলেজের হিসাববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী।জানা গেছে, সংঘর্ষে নাহিদ নিহত হওয়ার ঘটনায় সম্পৃক্ত হিসেবে শনাক্ত ইমন এই ১০১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তবে অভিযানের সময় ইমন সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।ডিবি রমনা বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) এইচ এম আজিমুল হক জানান, রোববার বিকেলের অভিযানে এক শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছিল, পরবর্তীতে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদের জন্যই জুয়েলকে আটক করা হয়েছিল।তদন্তসংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, দুই দোকান কর্মচারীর মধ্যে ঘটনার সূত্রপাত। এরপর ঢাকা কলেজের কয়েকজন ছাত্র ওই ঘটনায় জড়িয়ে পড়েন। কিন্তু তাদের কাউকে এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারলে ঘটনার বিষয়ে অনেক তথ্য পাওয়া যাবে।সূত্র জানায়, প্রথমদিন এক দোকানকর্মীর ডাকে সাড়া দিয়ে ঢাকা কলেজের কিছু শিক্ষার্থী গিয়ে ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মীদের মারধর শুরু করেন। একপর্যায়ে ক্যাপিটাল ফাস্টফুডের কর্মীদের পাল্টা হামলায় আহত হয়ে পালিয়ে যায় তারা। পরে তারা কলেজের আরও ছাত্রদের সঙ্গে নিয়ে এসে নিউ মার্কেটে হামলা চালায়।রিমান্ডে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার বিএনপি নেতা মকবুলের নিউমার্কেটে সংঘর্ষে পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলার এক নম্বর আসামি গ্রেফতার বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মকবুল হোসেন তিন দিনের পুলিশি রিমান্ডে রয়েছেন। অ্যাডভোকেট মকবুল নিউমার্কেট থানার বিএনপির সাবেক সভাপতি। বর্তমানে তিনি ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য। যে দুটি দোকানের বাগবিতণ্ডাকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষ ঘটে, সে দুটিরই মালিক অ্যাডভোকেট মকবুল।সূত্র জানায়, নিউমার্কেটে সংঘর্ষ চলাকালে তার কল রেকর্ডে বেশ কয়েকটি সন্দেহজনক ফোনকলের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব বিষয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা চলছে রিমান্ডে।তবে পুলিশের কাছে মকবুল দাবি করেছেন, সংঘর্ষ শুরুর পর দোকানের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে জানতে তার ভাইদের ফোন দেন তিনি, যাদেরকে নিজের দোকান ভাড়া দিয়েছেন। পরে দোকান মালিক সমিতির নেতা, ব্যবসায়ী সমিতি ও আশপাশের দোকান মালিকদের ফোন দেন। পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে তার বিরুদ্ধে থাকা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, জিজ্ঞাসাবাদে মকবুলের উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনও স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যায়নি। তার গোপন বৈঠকেও বসার তথ্য পাওয়া গেছে, তবে তিনি বিষয়গুলো অস্বীকার করেছেন। তিনি ঘটনাটিকে রাজনৈতিক রূপ দিতে চেয়েছিলেন কি না জানার চেষ্টা করা হচ্ছে।সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সংঘর্ষের ঘটনায় জড়িতদের বেশির ভাগই দোকান কর্মচারী ও ফুটপাতের হকার। এর বাইরে কিছু বহিরাগত ছিল, যাদের হাতে দেশীয় অস্ত্র ও মাথায় হেলমেট ছিল। তারা কেন এই সংঘর্ষে জড়াল, কেউ উসকানি দিল কি-না, সে বিষয়েও তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় রাজনৈতিক ইন্ধন কাজ করেছে কি-না খতিয়ে দেখা হচ্ছে।গত ১৮ এপ্রিল রাতে ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও কর্মচারীদের সংঘর্ষ শুরু হয়। প্রায় আড়াই ঘণ্টা পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলেও পরদিন সকাল থেকে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়।এ ঘটনায় উভয়পক্ষের অর্ধ শতাধিক আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এরমধ্যে কুরিয়ারকর্মী নাহিদ ও দোকান কর্মচারী মোরসালিন চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।