চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে অষ্টম বিপিএলের ১৫তম ম্যাচে মঙ্গলবার ১৪ রানে জিতেছে সাকিববাহিনী। শুরুতে ব্যাট করে সব উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রান সংগ্রহ করে বরিশাল। জবাবে সব উইকেট হারিয়ে ১৩৬ রান তুলতে পারে চট্টগ্রাম। এই নিয়ে ৬ ম্যাচে চতুর্থ জয় পাওয়া বরিশাল ৮ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে উঠে এলো। আর এক মঅ্যাচ বেশি খেলা চট্টগ্রাম ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে দুই থেকে নেমে গেল চারে।
এই ম্যাচে বরিশালের জয়ের নায়ক নিঃসন্দেহে সাকিব আল হাসান। তার ফিফটিতে ভর করেই সম্মানজনক সংগ্রহ পায় বরিশাল। পরে বল হাতে নেন ৩ উইকেট। সেই সঙ্গে অধিনায়ক হিসেবে বিপিএলে ১০০ উইকেটের মাইলফলক স্পর্শও করেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ফ্র্যাঞ্চাইজিভিত্তিক টি-টোয়েন্টি লিগে ডোয়াইন ব্রাভোর পর দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। সিপিএলে অধিনায়ক হিসেবে ১০৬ উইকেট রয়েছে ব্রাভোর। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সাকিবের অধিনায়কত্বেই এবারের বিপিএলে খেলছেন ক্যারিবীয় অলরাউন্ডার।
লক্ষ্য তাড়ায় নেমে কোনো রান যোগ হওয়ার আগেই আফগান স্পিনার মুজিব-উর-রহমানের বলে এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন চট্টগ্রামের ওপেনার উইল জ্যাকস। এরপর আফিফ হোসেন ও শামিম হোসেন মিলে ইনিংস মেরামতের চেষ্টা করে ৭০ রানের জুটি গড়ে ফেলেন। ৩২ বলে ৩৯ রান করা আফিফকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন সাকিব। এরপর ২৬ রান যোগ হতে আরও ৬ উইকেট হারিয়ে ফেলে দলটি। ১৩ বলে ২৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে যা একটু চেষ্টা করেন মিরাজ। কিন্তু ব্র্যাভোর বলে তার বিদায়ের পর আদতে প্রমাদ গুনতে থাকে চট্টগ্রাম।
শেষ ১২ বলে ৩২ রান দরকার ছিল চট্টগ্রামের। ১৯তম ওভারের প্রথম বলে ক্যাচ মিসে ২ রান তোলেন লোয়ার অর্ডার ব্যাটার মৃত্যুঞ্জয়। পরের বলে সিঙ্গেল নিয়ে শরিফুল ইসলামকে স্ট্রাইক দেন তিনি। মেহেদী হাসান রানার পরের দুই বলে যথাক্রমে ছক্কা ও চার হাঁকিয়ে শরিফুল বড় স্বপ্ন দেখান চট্টগ্রামকে। কিন্তু ওভারের পঞ্চম বলে তাকে ইরফান শুক্কুরের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন রানা। শেষ ওভারে তাদের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১৮ রান। কিন্তু নাসুম আহমেদের উইকেট হারিয়ে ওই ওভারে মাত্র ৩ রান তুলতে পারে চট্টগ্রাম।
বল হাতে সাকিব ও মুজিব দুজনেই ৩টি করে উইকেট তুলে নিয়েছেন। মুজিব আবার ৪ ওভারে খরচ করেছেন মাত্র ৯ রান। এছাড়া ২টি করে উইকেট নিয়েছেন রানা ও ব্র্যাভো।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ভালো শুরু করতে পারেনি বরিশাল। তৃতীয় বলেই মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর শিকার হয়ে ১ রান করে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার মুনিম শাহরিয়ার। আরেক ওপেনার ক্রিস গেইলও বেশিক্ষণ থিতু হতে পারেননি। ১৯ বলে ২৫ রান সংগ্রহ করে উইল জ্যাকসের শিকার হন তিনি। এরপর ২৮ রান করে আফিফ হোসাইনের বলে আকবর আলীকে ক্যাচ তুলে দেন শান্ত।
শান্তর বিদায়ের পর তিনে ব্যাট করতে নেমে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তাকে সঙ্গ দেন তৌহিদ হৃদয়। ৩৩ বলে ৫৫ রানের জুটি গড়ে বেনি হাওয়েলকে ক্যাচ তুলে দেন হৃদয়। ২২ রান করে বিদায় নেন তিনি। একপ্রান্ত আগলে রাখা সাকিব ঝড়ো ব্যাটিংয়ে ৩ ছয় ও ৩ চারে ৩০ বলে অর্ধশতক তুলে নেন। এরপর আর থিতু হতে পারেননি তিনি। মৃত্যুঞ্জয়ের বলে ছক্কা হাঁকাতে উইকেট হারান বরিশালের অধিনায়ক।
সাকিবের বিদায়ের পর বিপর্যয়ে পড়ে বরিশাল। ব্যাট করতে নামা কেউই আর দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছাতে পারেনি। ডোয়াই ব্রাভো ৪, ইরফান শুক্কুর ৫, নুরুল হাসান সোহান ০, মুজিব উর রহমান ১ ও শফিকুল ইসলাম ০ রানে বিদায় নেওয়ার পর ১৪৯ রানেই গুটিয়ে যায় ইনিংস।
চট্টগ্রামের হয়ে ২ ওভারে ১২ রান খরচায় ৪ উইকেট তুলে নেন মৃত্যুঞ্জয়। ২টি উইকেট শিকার করে শরিফুল। একটি করে উইকেট পান জ্যাকস, আফিফ ও হাওয়েল।