নিজস্ব প্রতিবেদক : আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক শিষ্টাচারে বিশ্বাসী বলেই একজন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বহীন বক্তব্য ও অসদ আচরণের জন্য তাকে শেখ হাসিনা ছাড় দেননি বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। জিয়া পরিবারের সদস্যদের অনেক কীর্তি এ দেশের মানুষ জানে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।বৃহস্পতিবার (৯ ডিসেম্বর) ওবায়দুল কাদের গণমাধ্যমে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন।বিবৃতিতে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক শিষ্টাচারে বিশ্বাসী। দলে কিংবা সরকারে কেউ শিষ্টাচার বহির্ভূত কাজ করলে তাকে ছাড় দেওয়া হয় না, এ কথা শেখ হাসিনা বার বার প্রমাণ করেছেন। যত বড় রাজনৈতিক পরিচয় হোক, অন্যায়-অনিয়ম কিংবা রাজনৈতিক শিষ্টাচার অথবা শৃঙ্খলা বহির্ভূত কাজ করলে দল কখনো তার পক্ষে দাঁড়ায় না। দেশবাসী দেখেছে একজন প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বহীন বক্তব্য ও অসদ আচরণের জন্য দেশরত্ন শেখ হাসিনা ছাড় দেননি। আর তার বিপরীতে দেশবাসী দেখলো বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তার দলের একজন নেতার অশালীন বক্তব্যকে নির্লজ্জভাবে কীভাবে দলীয়ভাবে সমর্থন দিয়েছে। দেশবাসী বিস্মিত, ক্ষুব্ধ ও লজ্জিত। বিএনপি নেতারা রাজনৈতিক শিষ্টাচারকে ভুলুণ্ঠিত করেছে। বিএনপি লালন করে প্রতিহিংসা, ষড়যন্ত্র আর পরশ্রিকাতরতা। তাদের মধ্যে কৃতজ্ঞতাবোধ নেই। তারা জন্মলগ্ন থেকে রাজনীতির সুষ্ঠু ধারা ও পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধের পরিবেশকে কলুষিত করে আসছে।আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, অবশ্য বিএনপি এমনই এক দল যাদের কৃতজ্ঞতাবোধ কখনও ছিল না, এখনও নেই। দলগতভাবে তারা শিষ্টাচার বর্জিত দল। তা না হলে শোকসন্তপ্ত মাকে সান্ত্বনা দিতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যাকে তারা দরজা বন্ধ করে অসম্মানজনকভাবে ফিরিয়ে দিত না। গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চায়ের আমন্ত্রণের বিপরীতে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সেদিনের অশালীন বক্তব্য সে সময় দেশবাসী শুনেছিল। তাই বলতে চাই, শিষ্টাচারহীনতা, অশালীনতা তাদের মজ্জাগত। এটা তাদের রাজনৈতিক ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকার। মঞ্চে-সংসদে দাঁড়িয়ে বিএনপি নেতা-নেত্রীরা যেসব ভাষায় বক্তব্য রাখেন তা বলারও অযোগ্য, ছাপারও অযোগ্য। কথায় ও কাজে পরিশীলিত রুচিবোধ ও শালিনতা তাদের মধ্যে নেই। না হয়, বিএনপি নেতা আলালের এমন অরাজনৈতিক কুরুচিপূর্ণ ভাষাকে কীভাবে রাজনীতিতে সজ্জন বলে বিবেচিত মির্জা ফখরুল সাহেবরা যৌক্তিকতা আছে বলে পাবলিকলি সার্টিফিকেট দেন? তাহলে জনগণ ধরে নিচ্ছে তাদের সব অপপ্রচার আর বিষোদগারের মতো লোক দেখানো ভদ্রতাও এক ধরনের মুখোশ? আসলে বিএনপির রাজনীতি এখন তলানীতে ঠেকে গেছে। তারা মেরুদণ্ডহীন ফরমায়েশ-সর্বস্ব এক রাজনৈতিক দল। তিনি বলেন, ইতিহাসের চলিষ্ণু কলম লিখে যায় কত ইতিহাস। আমরা সেসব তুলে ধরে কাউকে বিব্রত করতে চাই না। কারণ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার কন্যা আমাদের সে শিক্ষা দেননি। আমরা কখনো এ কথা বলতে চাই না যে, ১৯৯৩ সালের ৮ জানুয়ারি পাকিস্তানের সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আসিফ নওয়াজ জানজুয়ার মৃত্যুতে কেন শোকবার্তা পাঠিয়েছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া! অথচ মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করা বাংলাদেশ-ভারত যৌথবাহিনীর জেনারেল অরোরা মৃত্যুবরণ করেন ২০০৫ সালে, তখনও খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী। তার মৃত্যুতে খালেদা জিয়াতো কোনো শোক প্রকাশ করেননি? তিনি গভীর শোকপ্রকাশ করেছিলেন বাংলাদেশের মানুষের ওপর ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর গণহত্যা অভিযানে সরাসরি অংশ নেওয়া তৎকালীন মেজর জানজুয়ার মৃত্যুতে। অবশ্য সে সময় অনেকে নানা মুখরোচক কথা বললেও আমরা সেসব বিশ্বাস করতে চাই না এবং মনে করিয়ে দিতে চাই না। দেশের মানুষ এত সহজে সবকিছু ভুলে যায় না।ওবায়দুল কাদের বলেন, ইতিহাস বলে মুক্তিযুদ্ধকালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রিত সেনানিবাসে নিরাপদ অবস্থানে ছিলেন খালেদা জিয়া। জেনারেল জিয়া তাকে বার বার ক্যান্টনমেন্ট ছেড়ে আসতে বললেও তিনি সেনানিবাসের নিরাপদ ও বিলাসবহুল আতিথেয়তা ছাড়েননি। পরবর্তীতে এ নিয়ে তাদের পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহ তুঙ্গে উঠে। বিশিষ্ট কলামিস্ট আবদুল গাফফার চৌধুরীর কলাম থেকে জানা যায়, জেনারেল জিয়া খালেদা জিয়াকে ডিভোর্স দেওয়ার মনস্থির করেছিলেন। সে সংকটকালে খালেদা জিয়ার অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর হস্তক্ষেপে তাদের সংসার জীবন রক্ষা পেয়েছিল। জিয়া পরিবারের সদস্যদের অনেক কীর্তি এদেশের মানুষ জানে। কিন্তু সেসব পারিবারের গণ্ডি পেরিয়ে রাজনীতির মাঠে আসুক তা আমরা চাই না। কিন্তু বিএনপি নেতারা আজ সে প্যান্ডোরার বাক্স উন্মুক্ত করতে উস্কানি দিচ্ছেন স্পষ্টত। বিএনপি নেতারা এতটাই অন্ধ ও ফরমায়েশ নির্ভর হয়ে গেছেন যে, দলের একজন নেতা মিথ্যাচার করলো, অশালীন কথা বললো অথচ সিনিয়র নেতারা তার পক্ষেই সাফাই গাইলেন। আবার তারা সরকারকে মানবিক হওয়ার সবক দেন। এদেশের রাজনীতিতে প্রতিহিংসার দেয়াল তুলেছে বিএনপি। অকৃতজ্ঞতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে বিএনপি। জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যা ও শেখ হাসিনাকে গ্রেনেড হামলা চালিয়ে হত্যা চেষ্টার পরও বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা রাজনীতিতে মানবিকতা ও সহিষ্ণুতার যে নজির স্থাপন করেছেন, তা সমকালীন বিশ্বে নজিরবিহীন। আমি অশ্লীল বক্তব্য প্রদানকারী অভিযুক্ত বিএনপি নেতাকে জাতির কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি। তা না হলে ধরে নেব, এটা বিএনপির দলীয় বক্তব্য। সেক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ তা রাজনৈতিকভাবে মোকাবিলা করবে। আশা করছি বিএনপি নেতাদের শুভবুদ্ধির উদয় হবে।