২৪ বছরে পার্বত্য শান্তি চুক্তি

২৪ বছরে পার্বত্য শান্তি চুক্তি
নিজস্ব প্রতিবেদক  : দীর্ঘ প্রায় দুই দশক ধরে পাহাড়ে আত্মনিয়ন্ত্রণাধিকার আন্দোলনের পর ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তির ২৪ বছরেও বহু ধারা উপধারা আজও অবাস্তবায়িত রয়ে গেছে বলে পাহাড়ি নেতা ও সাধারণ পাহাড়িরা দাবি করছেন।তার মধ্যে ভূমি বিরোধই বড় সংকট। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির মাধ্যমে সরকার চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন নিশ্চিত করবে বলে আশাবাদী পাহাড়ের মানুষ।সরকারি দলের নেতারা বলছেন, চুক্তির অধিকাংশ ধারা বাস্তবায়িত হয়েছে। বাকিগুলো বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।পাহাড়ে রাজনৈতিকভাবে পুনর্বাসন, পাহাড়িদের অধিকার বঞ্চনাসহ নানা কারণে প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে পার্বত্য চট্টগ্রামে চলে সশস্ত্র সংগ্রাম। এতে অসংখ্য পাহাড়ি ও বাঙ্গালী হতাহত হয়। পাহাড়ের উন্নয়ন, অগ্রগতি ও শান্তি সম্প্রীতি বাধাগ্রস্ত হয়। শান্তি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে সর্বশেষ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর জনসংহতি সমিতির সঙ্গে পার্বত্য চুক্তি সম্পাদনের মধ্য দিয়ে শান্তির সুবাতাস বইতে শুরু করে। অস্ত্র জমা দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেন প্রায় ২ হাজার শান্তিবাহিনী সদস্য। কিন্তু চুক্তি নিয়ে রয়েছে পক্ষে-বিপক্ষে মত।চুক্তি মোতাবেক ভূমি কমিশনের বিধিমালা প্রণয়নপূর্বক দ্রুত বিচারিক কার্যক্রম শুরু করার দাবি জানিয়েছে চুক্তি সইকারি সংগঠন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএন লারমা)।  একইসঙ্গে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও পার্বত্য জেলা পরিষদের কাছে সাধারণ প্রশাসন, স্থানীয় পুলিশ, ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা হস্তান্তরসহ পার্বত্য চুক্তির পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়নের দাবি জানানো হয়।পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (এমএন লারমা) কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি বিভূ রঞ্জন চাকমা বলেন, চুক্তি নিয়ে সরকার একেক সময় একেক কথা বলে। চুক্তি বাস্তবায়নের কথা বললেও সরকার এখনও মৌলিক ধারাগুলো বাস্তবায়নে কোন পদক্ষেপ নেয়নি। আঞ্চলিক পরিষদ ও জেলা পরিষদ নির্বাচন নিয়ে সরকারের কোন ভাবনা নেই। দলের অনির্বাচিত লোক দিয়ে পরিষদগুলো চলছে। অনুপ্রবেশকারী বাঙ্গালীদের পার্বত্য চট্টগ্রামের বাইরে সম্মানজনক পুনর্বাসন, ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তি কমিশন আইনের বিধিমালা চূড়ান্তকরণ করার দাবি জানিয়ে এলেও সরকারের আগ্রহ দেখতে পাচ্ছি না। আন্তরিকতা থাকলে চুক্তি বাস্তবায়নে ২৪টি বছর লাগার কথা নয়। আমরা এখন নিরাপত্তাহীন ও অনিশ্চিত ভবিষ্যতের সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে।পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়ায় এত বছরেও প্রত্যাশিত শান্তির দেখা মিলেনি বলে মনে করেন সাধারণ পাহাড়িরা।তারা চুক্তির সার্বিক পরিস্থিতিতে হতাশ। চুক্তির সব ধারা বাস্তবায়ন না হওয়ায় ভূমি বিরোধসহ সাম্প্রদায়িক ঘটনা ঘটছে বলে অভিমত তাদের।  এদিকে চুক্তির পরিপূর্ণ বাস্তবায়নের পথ সহজ করতে পাহাড়ে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ দরকার বলে মত দিয়েছেন অনেকে।খাগড়াছড়ি পৌরমেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্মলেন্দু চৌধুরী বলেন, চুক্তির সুফলের কারণে পাহাড়ে অভূতপূর্ণ উন্নয়ন হচ্ছে। বিদ্যুৎ, সড়ক যোগাযোগ, শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য সবক্ষেত্রে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগেছে। কেউ যদি চুক্তি বাস্তবায়ন হয়নি বলে এটি ভুল। তবে, কিছু কিছু ধারা উপধারা বাস্তবায়ন হয়নি। যেগুলো বাস্তবায়নের দিকে এগোচ্ছে।পাহাড়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, শুধু চুক্তি বাস্তবায়ন হচ্ছে বললে হবে না। চুক্তি বাস্তবায়নের পথ তৈরি করতে হবে। চুক্তির পরবর্তী সময় একাধিক দল তৈরি হয়েছে। তাদের কাছে অবৈধ অস্ত্র রয়েছে। এসব অস্ত্রের ঝনঝনানিতে আতংকিত থাকে পাহাড়ের মানুষ। এখন সরকারের উচিত অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করে মানুষের দৌরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার যে প্রতিবন্ধকতা, তা দূর করা।  খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মংসুইপ্রু চৌধুরী বলেন, চুক্তির অংশ হিসেবে পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, জেলা পরিষদ সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়বাসী তার সুফল পাচ্ছে। ৭২টি ধারার মধ্যে চুক্তির ৪৮টি ধারা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়েছে, ১৫টি ধারা আংশিক বাস্তবায়িত এবং ৯টি ধারা বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াধীন। ভূমি বিরোধ নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকার এই ব্যাপারে আন্তরিক। আমাদের উচিত সবাই একসঙ্গে চুক্তি বাস্তবায়নে সরকারকে সহযোগিতা করা।চুক্তির ফলে পাহাড়ে উন্নয়নের ধারা গতিশীল হয়েছে। চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, কিছু সমস্যা থাকলেও চুক্তির অধিকাংশ বিষয়গুলো বাস্তবায়িত হয়েছে। সবার আন্তরিকতা থাকলে চুক্তির বাকি ধারাগুলো শিগগিরই পূরণ হবে।পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন কমিটির অন্যতম সদস্য এবং শরণার্থী পুনর্বাসন বিষয়ক টাস্কফোর্সের চেয়ারম্যান কুজেন্দ্র লাল ত্রিপুরা বলেন, ১৯৯৭ সালে বিশেষ মুহূর্তে চুক্তি তৈরি করা হয়েছে। এখন সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পাহাড়বাসীর স্বার্থে সবার মতামত নিয়ে সরকার চুক্তিটি সংযোজন ও বিয়োজন করছে। আমাদের মনে রাখতে হবে পাহাড়ে শান্তি চেয়েছে বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে চুক্তি করেছেন। চুক্তির আগের দৃশ্যপটের সঙ্গে এখনকার দৃশ্যপট মিলিয়ে আপনাকে বলতে হবে যে, চুক্তির কারণে এলাকায় শন্তি যেমন এসেছে তেমনি উন্নয়নও হয়েছে। সরকারের ওপর আস্থা রাখতে হবে।এদিকে চুক্তির বর্ষপূতিতে খাগড়াছড়িতে ২ ডিসেম্বর দিনব্যাপী কর্মসূচি হাতে নিয়েছে পার্বত্য জেলা পরিষদ এবং সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি ও গুইমারা রিজিয়ন। জনসংহতি সমিতিও পৃথক কর্মসূচি পালন করবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

ঈদগাঁও–ঈদগড় সড়কে গুম ও ডাকাতি দমনে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি

শিবচরে মাদক রোধে ইউএনও’র কাছে স্মারকলিপি দিল উপজেলা বিএনপি