নিউজ ডেস্ক : অধীনস্থ উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে চেয়ার থেকে মেঝেতে ফেলে বুকের ওপর পা দিয়ে চেপে ধরে ও গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যাচেষ্টা এবং জবাই করার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) রাজবাড়ী কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদের নামে। এ অভিযোগে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।বুধবার (২৪ নভেম্বর) পাউবোর উপ-সচিব (প্রশাসন) সৈয়দ মাহবুবুল হক স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে তাকে বরখাস্ত করা হয়।আদেশ বলা হয়, অসদাচরণ ও চাকরি শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে আব্দুল আহাদকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড (কর্মকর্তা ও কর্মচারী) চাকরি প্রবিধানমালা ২০১৩-এর প্রবিধি ৪৮(ক)-এর সূত্রে প্রবিধি ৫৫ অনুযায়ী চাকরি থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তর, প্রশিক্ষণ ও মানবসম্পদ উন্নয়ন, বাপাউবো, ঢাকায় সংযুক্ত করা হলো। তিনি সাময়িক বরখাস্তকালীন সময় প্রবিধানমালার প্রবিধি ৫৫(৪) অনুযায়ী খোরাকী ভাতা প্রাপ্য হবেন।একই আদেশে পাউবো ফরিদপুরের নির্বাহী প্রকৌশলীকে পাউবো রাজবাড়ীর নির্বাহী প্রকৌশলীর চলতি দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।জানা গেছে, গত মঙ্গলাবার (২৩ নভেম্বর) বিকেলে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি পাউবোর মৃগী পওর শাখার উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রনিকে নিজ অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে মারধর করেন নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ। ঘটনার পর পরই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ-সংক্রান্ত একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনি ওই দিনই পাউবোর মহাপরিচালক বরাবর আব্দুল আহাদের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আব্দুল আহাদকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়।অভিযোগে উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. রনি উল্লেখ করেন, ২৩ নভেম্বর দুপুর ১টার দিকে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনি ও উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী (পওর) গোয়ালন্দ শাখার উপ-সহকারী প্রকেীশলী ইকবাল সরদারকে ঢাকায় পাইবোর প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে গিয়ে রাজবাড়ী দপ্তরের কিছু প্রাক্কলন ও নোটশিটের কাজ সম্পন্ন করে আনতে বলেন। এ সময় রনি জানতে চান তারা কীভাবে সেখানে যাবেন। তখন আব্দুল আহাদ দপ্তরের একটি গাড়ি নিয়ে যেতে বলেন। তারা চালককে গাড়ি বের করতে বললে চালক বলেন— ‘গাড়ি বের করা যাবে না; নির্বাহী প্রকৌশলীর নিষেধ আছে। আপনারা বাসে করে যান। ’ এছাড়া প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরের প্রাক্কলন কর্মকর্তা আমিনুল ইসলামকে ফোন করে প্রধান প্রকৌশলী আছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি জানান, স্যার দপ্তরে নেই।পরদিন প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে মিটিং থাকায় সেখানে নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদের গাড়ি নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল। উপ-সহকারী প্রকৌশলী রনি ও ইকবাল সরদার সরকারি গুরুত্বপূর্ণ নথি নিয়ে ওইদিন বাসে যাওয়ার পরিবর্তে পরদিন নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে গাড়িতে প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। কিন্তু, বিকেল ৪টা ৪৮ মিনিটের সময় সহকারী প্রকৌশলী ফোন দিয়ে ঢাকায় প্রধান প্রকৌশলীর দপ্তরে না যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে রনি তা ব্যাখ্যা করেন। এরপর সহকারী প্রকৌশলী তাকে নির্বাহী প্রকৌশলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বলেন।বিকেল ৫টা ২০ মিনিটের সময় রনি নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদের সঙ্গে সাক্ষাতের জন্য তার অফিস কক্ষে যান। সেখানে গেলেই নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ তার সঙ্গে তুই-তোকারি করেন এবং ধাক্কা দিয়ে চেয়ার থেকে মেঝেতে ফেলে বুকের ওপর পা দিয়ে চেপে ধরে ও গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করেন এবং জবাই করে ফেলার হুমকিও দেন। এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার দাবি করেছেন মো. রনি।এ বিষয়ে অভিযুস্ত আবদুল আহাদ বলেন, রাজবাড়ীতে এই মৌসুমে অনেক নদীভাঙন হয়েছে, এই বিষয়গুলো নিয়ে আমি অনেক চাপে রয়েছি। সারা দিনই নদীভাঙন নিয়ে কাজ করি। আমার অধীনস্থদের কোনো কাজ দিলে তারা কাজগুলো সময় মতো করেন না। তাদের আমি একটা জায়গায় পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু তারা সেখানে যাননি। আমি তাদের বারবার বলেছি, কিন্তু তারা আমার নির্দেশ শোনেনি। দেখেন আমিও তো মানুষ, আমারও তো ধৈর্যের সীমা আছে। আমি রাগকে কন্ট্রোল করতে পারিনি।অভিযোগ স্বীকার করে তিনি বলেন, ‘আমি অন্যায় করেছি এটা আমি স্বীকার করছি। কিন্তু তারা যে কাজগুলো করেছেন, সেটা ঠিক করেননি। তারা সিসিটিভি ফুটেজের আগে-পরের দৃশ্যগুলো কেটে তাদের মতো করে সাজিয়ে ধস্তাধস্তির দৃশ্যগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল করেছেন। আমি পরিস্থিতির স্বীকার। আমার ভাগ্যে ছিল এমন, তাই হয়েছে।