নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে আরও শক্তিশালী করার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নতুন করে গড়ে তোলার সময় এসেছে। অংশীদারত্বের ক্ষেত্রে আমাদের ঐতিহ্যগত দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা দরকার।বুধবার (০৩ নভেম্বর) স্থানীয় সময় রাতে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০তম বার্ষিকীতে ‘বাংলাদেশ অ্যাট ৫০: দ্য রিজিলেন্ট ডেল্টা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।লন্ডন সফরের প্রথম দিন বিকেলে ওয়েসমিনিস্টারে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লেবার পার্টি থেকে ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী এবং ভারতীয় বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ ব্যাংকার ও ব্যবসায়ী লর্ড জিতেশ গাধিয়ার আমন্ত্রণে এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক সত্যিকারের কৌশলগত হওয়া উচিত এবং শান্তিরক্ষা, সন্ত্রাস দমন, সমুদ্র ও বিমান নিরাপত্তার ক্ষেত্রে সহযোগিতা করা উচিত।দুই দেশের অংশীদারত্বের কেন্দ্রবিন্দুতে অবশ্যই ব্রিটিশ-বাংলাদেশি প্রবাসীরা থাকবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের প্রবাসীদের নিয়ে গর্ব করি। ওয়েস্টমিনিস্টারে তাদের ক্রমবর্ধমান প্রতিনিধিত্ব দেখে আমি সন্তুষ্ট। এই মুহূর্তে তাদের সবাই নারী। বিশ্বাস করি ভবিষ্যতে এই মহান পার্লামেন্টে তাদের আরও বেশি প্রতিনিধিত্ব দেখবো।শিক্ষা, সংস্কৃতি, গবেষণা এবং উদ্ভাবনে অংশীদারত্বে যুক্তরাজ্যের আগ্রহকে স্বাগত জানান প্রধানমন্ত্রী।শেখ হাসিনা বলেন, ৫০ বছর বয়সেও বাংলাদেশ এখনো একটি অউন্মোচিত গল্প। আমাদের আগামী অধ্যায়গুলো হবে আরও রোমাঞ্চকর। আমাদের সঙ্গে থাকার এবং আমাদের উদ্যোগগুলোতে যোগদান করার অনুরোধ করছি।রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে যুক্তরাজ্যের ভূমিকা এখনো গুরুত্বপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ২০১৭ সালের আগস্ট থেকে বাংলাদেশ এই সংকটকে নিজে ধারণ করে এই অঞ্চলকে স্থিতিশীলতা দিয়েছে। কিন্তু কক্সবাজারের নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জগুলো ক্রমেই তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। এই চ্যালেঞ্জগুলো শিগগিরই সীমানা ছাড়িয়ে এ অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়তে পারে।আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর তাদের মাতৃভূমিতে নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবর্তন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব আছে। এই সংকট জিইয়ে রাখলে সবাইকে হারতে হবে।কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনে যোগ দিতে গত ৩১ অক্টোবর স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোতে আসেন প্রধানমন্ত্রী। সেখানে অবস্থানকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কপ-২৬ জলবায়ু সম্মেলনের মূল পর্বে অংশ নেওয়ার পাশাপাশি সাইডলাইনে বেশ কয়েকটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় অংশ নেন।গ্লাসগোতে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, ব্রিটেনের রাজসিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রিন্স চার্লসসহ বিভিন্ন সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান, বিভিন্ন সংস্থা প্রধানের সঙ্গে বৈঠক করেন শেখ হাসিনা।গ্লাসগো সফর শেষে ৩ নভেম্বর লন্ডনে আসেন প্রধানমন্ত্রী। আগামী ৯ নভেম্বর পর্যন্ত লন্ডনে থাকবেন তিনি।৯ নভেম্বর লন্ডন থেকে ফ্রান্স সফরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্যারিস সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ও দেশটির প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী জিন ক্যাটেক্সের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন।এছাড়াও প্যারিস সফরকালে প্রধানমন্ত্রী প্যারিস পিস ফোরামে অংশ নেবেন। ইউনেস্কো সদর দপ্তরে সৃজনশীল অর্থনীতির জন্য ‘ইউনেস্কো-বাংলাদেশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান’ পুরস্কার বিতরণসহ বেশ কয়েকটি কর্মসূচিতে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা।আগামী ১৩ নভেম্বর প্যারিস থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা হয়ে ১৪ নভেম্বর সকালে দেশে পৌঁছানোর কথা প্রধানমন্ত্রীর।