নিজস্ব প্রতিবেদক : সুন্দরবন সংলগ্ন এলাকায় দস্যুতা ছেড়ে যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের উদ্দেশ্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, যারা দুষ্কর্মের চিন্তা করছেন, তারা তা ভুলে যান।তিনি বলেন, যদি কেউ আবারও বিপথে যান, তাহলে আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী বসে থাকবে না।আমাদের বিজিবি, র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড এখন খুবই চৌকস। যে কোনো চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তারা এখন সক্ষম।স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমি বাগেরহাটে এসেই শুনেছি, কেউ কেউ আবার বিপথে যাবার চেষ্টা করছেন। কিন্তু বিশ্বাস করিনি। কষ্ট করছেন জানি, কিন্তু ভুলেও সে চেষ্টা পুনরায় করবেন না।সোমবার (১ নভেস্বর) দস্যুমুক্ত সুন্দরবন দিবসের তৃতীয় বর্ষপূর্তি। এ উপলক্ষে আয়োজিত আত্মসমর্পণকৃতদের পূনর্বাসন অনুষ্ঠান-২০২১ এ প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।সুন্দরবন দিবসের তৃতীয় বর্ষপূর্তিতে আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুদের মাঝে ১০২টি ঘর, ৯০টি মুদি দোকান (মালামালসহ), ১২টি জাল ও মাছ ধরার নৌকা, ৮টি ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং ২২৮টি গবাদিপশু (বাছুরসহ) উপহার দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল।তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী সব সময় খোঁজ খবর রাখছেন সুন্দরবনে দস্যুতা ছেড়ে যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তারা এখন কেমন আছেন। তাদের পুনর্বাসন করা হয়েছে কিনা তাও জানতে চেয়েছেন। আপনাদের পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দাবি ছিল মামলা প্রত্যাহারের। ধর্ষণ ও খুনের মামলা ছাড়া অবশ্যই পর্যায়ক্রমে সব মামলা তুলে নেওয়া হবে। মামলার কাগজ নিয়ে আসেন। সরকারি অনুদান যাতে মামলা লড়তে উকিল খরচ না হয় সেটা আমরা দেখব। মামলা তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা আমরা করব। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করেই প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।মন্ত্রী বলেন, পটুয়াখালী থেকে সাতক্ষীরা, বাগেরহাট এলাকায় জলদস্যুর কারণে বাড়িতে থাকা যেতো না। আটকে রাখা হতো, মুক্তিপণ দাবি করা হতো, ডাকাতি করা হতো, ডাকাতিতে জড়াতে বাধ্য করা হতো। মধু সংগ্রহকারীরাও রেহাই পেতেন না। আজ সে চিত্র বদলেছে। সব কিছুর সমাধান হয়েছে। সুন্দরবন আজ দস্যুমুক্ত।তিনি বলেন, সুন্দরবনে নিরাপত্তা নিশ্চিতে র্যাবের স্থায়ী ক্যাম্প প্রতিষ্ঠার জোর প্রচেষ্টা চলছে। যদি কেউ মনে করেন আবারও জলদস্যুতা করবেন, সে স্বপ্ন যেন ভেঙে যায়৷স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, খুলনা মেয়র বলেছেন, মংলা পোর্ট ও এর আশেপাশে এলাকায় আমদানিকৃত পণ্য খোয়া যাচ্ছে। তাই এখানকার কোস্টগার্ডকে শক্তিশালী করা হচ্ছে। খুলনা কোস্টগার্ড বিষয়টি দেখবে। প্রয়োজনে নৌ-পুলিশের ডিআইজি আছেন, তিনিও দেখবেন। কিন্তু আমরা নদী কিংবা উপকূলে কোথাও আর কোনো দস্যুবৃত্তির ঘটনা দেখতে চাই না৷তিনি বলেন, এখানেই শুধু নয়, পাবনায় ৬০১ জন চরমপন্থী আত্মসমর্পণ করেছে, কক্সবাজারে ১০১ জন মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পণ করেছে। এর সবই হয়ছে প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতায়। প্রধানমন্ত্রী শুধু আজ আমাদের নেতা নন, আজ তিনি বিশ্বনেতা। তিনি বঙ্গবন্ধুর সব স্বপ্নকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন।অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ গড়ার যে স্বপ্ন দেখেছিলেন বঙ্গবন্ধু সেখানেও ষড়যন্ত্র চলছে। যারা মনে করেন, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করে বা নানা ধরনের বিশেষ অবস্থা সৃষ্টি করে অরাজকতার দিকে নিয়ে যাবেন, সফল হবেন, সে আশায় গুঁড়েবালি। সেটা কোনোভাবেই হতে দেওয়া হবে না। জঙ্গি-সন্ত্রাসের ন্যায়, মাদকের ব্যাপারেও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন।যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদের জীবিকায় অনিশ্চয়তা ছিল। তাদের নিশ্চিত জীবিকার বন্দোবস্ত করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় আত্মসমর্পণকারী ৩২৮ জন জলদস্যুকে পুনর্বাসনের লক্ষ্যে ১০২টি ঘর, জিনিসপত্রসহ মুদি দোকান ৯০টি, জাল ও মাছ ধরা নৌকা ১২টি, ইঞ্জিনচালিত নৌকা দেওয়া হয়েছে ৮টি। আর বাছুরসহ গবাদি পশু দেওয়া হয়েছে ২২৮টি।আমরা আমাদের দায়িত্বটা সঠিকভাবে পালন করতে চাই। আমি বিশ্বাস করতে চাই আপনারা আর ভিন্ন চিন্তা করবেন না। ভাববেন না, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দুর্বল, তারা কিছু জানবে না। আমি বিশ্বাস করি এই এলাকার সবাই মিলেমিশে থাকবেন, বিপদে আপদে পাশে থাকবেন। এই দেশকে আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই।র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) অতিরিক্ত আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সংরক্ষিত মহিলা আসনের সংসদ সদস্য গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।এছাড়াও খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র তালুকদার আব্দুল খালেক, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. শামসুল হক টুকু, খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ সালাহউদ্দিন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য মো. হাবিবুর রহমান ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য পীর ফজলুর রহমান উপস্থিত রয়েছেন।