নিজস্ব প্রতিবেদক : খাদ্যের উৎপাদন বাড়াতে প্রতি ইঞ্চি জমিকে চাষাবাদের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে খাদ্যের অপচয়ও কমাতে বলেন তিনি।শনিবার (১৬ অক্টোবর) গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস-২০২১’ উদযাপন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘করোনাকালীন সময়ে যখন মহামারি আকার দেখা দেয় তখনই আমি আহ্বান জানিয়েছি যে আমাদের এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদী না থাকে। বিশ্বের অনেক দেশে এখন খাদ্যের অভাব। অনেক দেশ দুর্ভিক্ষ অবস্থার দিকে চলে যাচ্ছে। ’শেখ হাসিনা বলেন, ‘জাতির পিতার ভাষায় বলতে হয়, বাংলাদেশের মাটি আছে, মানুষ আছে, আমরা যেন খাদ্যের অভাবে আর কখনো না ভুগি। উত্তরবঙ্গ আওয়ামী লীগ সরকার এলেই মঙ্গা মুক্ত হয়। মঙ্গা মুক্তই থাকবে। বাংলাদেশে কখনো যেন দুর্ভিক্ষ হতে না পারে। ’কৃষি জমি রক্ষার তাগিদ দিয়ে সরকার প্রধান বলেন, ‘কৃষি জমি কোনোমতেই ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, আমরা উৎপাদন করবো, উন্নয়ন করে যাবো সে উন্নয়নটা আমাদের কৃষি জমি সংরক্ষণ করে করতে হবে। ’সারা বিশ্বে প্রচুর খাদ্য অপচয়ের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্যের অপচয়টা কমাতে হবে, অপচয় যেন না হয়। সারা বিশ্বে কিন্তু একদিকে খাদ্যের অভাব অপরদিকে প্রচুর খাদ্যের অপচয় হয়। ’শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই অপচয় যেন না হয় বরং যে খাদ্যগুলো অতিরিক্ত থাকে সেটাকে আবার পুনঃ ব্যবহার করা যায় কীভাবে। সেটার বিষয়ে আমাদের চিন্তা করতে হবে। সে ধরনের ব্যবস্থা আমাদের নিতে হবে। উদ্বৃত্ত যে খাদ্যটা থাকবে বা আপনি খেতে বসেও যে খাবারটা বেশি থাকবে সেটাও কিভাবে পুনঃব্যবহার করা, অন্য চাহিদা পূরণ করা যায় কিনা সেটাকেও গবেষণার মধ্যে রাখা দরকার। ’কৃষি সম্প্রসারণ ও খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা ও চাহিদা ইনশাল্লাহ আমরা পূরণ করে যাবো। হতদরিদ্র মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে খাদ্য দিয়েও তাদের খাদ্য চাহিদা আমরা পূরণ করবো। ’তিনি বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যই হচ্ছে দেশের মানুষের খাদ্য নিরাপত্তা, পুষ্টি নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ’উৎপাদিত খাদ্যের মান ঠিক রাখার তাগিদ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘খাদ্য শুধু উৎপাদন না খাদ্যের মানটা যেন ঠিক থাকে। ’বীজ উৎপাদনে বিভিন্ন গবেষণা করা হচ্ছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বীজ আমরা উৎপাদন করবো, আমরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল থাকবো না। সরকারি থেকে উৎপাদন করবে, বীজের মান সম্পন্ন এবং যথাযথ সংরক্ষণ করতে হবে। ’অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) কর্তৃক উদ্ভাবিত ‘বঙ্গবন্ধু ধান-১০০’ অবমুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।কৃষিতে সফলতার জন্য বাংলাদেশি কৃষি বিজ্ঞানী ও গবেষকদের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী।খাদ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের সফলতার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমানে আমরা চাহিদার উদ্বৃত্ত খাদ্য উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি। বিশ্বে বাংলাদেশ এখন ধান উৎপাদনে তৃতীয়, শাকসবজি উৎপাদনে তৃতীয়, চা উৎপাদনে চতুর্থ, আম ও আলু উৎপাদনে সপ্তম এবং পেয়ারা উৎপাদনে অষ্টম। অভ্যন্তরীণ মুক্ত জলাশয়ে মাছ উৎপাদনে তৃতীয় এবং ইলিশ উৎপাদনে প্রথম স্থান অর্জন করেছি। ’কৃষিক্ষেত্রে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার, কৃষি বাতায়ন, কৃষক বন্ধু ফোন সেবা (৩৩৩১), কৃষকের জানালা, কৃষি কল সেন্টার (১৬১২৩) মাধ্যমে কৃষকদের সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদানের ব্যবস্থা, প্রায় ২ কোটি ১০ লাখ কৃষককে কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ড প্রদান, ১০ টাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার সুবিধা, উন্নত বীজ ও সার সরবরাহ, গবেষণা, প্রশিক্ষণ, কৃষি যান্ত্রিকীকরণসহ কৃষি সম্প্রসারণে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সময়ে নেওয়া বিভিন্ন উন্নয়ন কার্যাক্রমের কথা তুলে ধরেন টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী।বিশ্ব খাদ্য দিবসে এবারের প্রতিপাদ্য ‘আমাদের কর্মই আমাদের ভবিষ্যৎ, ভালো উৎপাদনই ভালো পুষ্টি, ভালো পরিবেশই উন্নত জীবন। ’অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের সভাপতিত্বে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার, মৎস ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম। স্বাগত বক্তব্য দেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মেসবাহুল ইসলাম।