নিজস্ব প্রতিবেদক : ভারত থেকে আমদানি বাড়ায় রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজারে চাল ও চিনির দাম কমেছে। সরকারের নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি না হলেও পাইকারিতে চিনির দাম কেজিতে কমেছে এক টাকা ২০ পয়সা।আর খুচরায় কমেছে দুই টাকা। তবে পাড়া ও মহল্লার দোকানগুলোতে আগের দামেই চিনি বিক্রি হতে দেখা গেছে। আর চালের দাম কেজিতে পাইকারি ও খুচরায় কমেছে দুই টাকা। সরকার মনিটরিং জোরদার করলে চাল ও চিনির দাম আরও কমবে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।শনিবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৬ থেকে ৬০ টাকায়, নাজিরশাইল প্রতিকেজি ৫৮ থেকে ৬২ টাকা, পাইজাম ৪৪ থেকে ৪৬ ও লতা ৫৩ থেকে ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ২৮ চাল ৪৮ থেকে ৫০ টাকা, স্বর্ণা ৪১ থেকে ৪৪ টাকায়। আর পাইকারি বাজারে প্রতিকেজি মিনিকেট মানভেদে ৫২, ৫৪, ৫৭ টাকা। নাজিরশাইল ৫৫, ৫৮, ৬২ টাকা। ২৮ চাল প্রতিকেজি ৪৬ থেকে ৪৮ টাকা, হাস্কী নাজির ৪৪, ৪৬, ৪৮ টাকা। কাজল লতা ৫০ থেকে ৫২ টাকা। পাইজাম ৪২ থেকে ৪৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এবিষয়ে বাবুবাজার চাল ব্যবসায়ী সমিতির সেক্রেটারি নিজাম উদ্দিন বলেন, আমদানির খবরে চালের দাম বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। আমদানি করা চাল যখন পুরোপুরি বাজারে চলে আসবে তখন দাম আরও কমে যাবে বলে জানান তিনি। বাবুবাজারের পাইকারি আড়তের রশিদ রাইস এজেন্সির আব্দুল রশিদ বলেন, পাইকারিতে সব ধরনের চালের দাম কেজিতে দুই টাকা কমেছে। তবে মোটা চালের দাম কমেনি। সামনে চালের দাম আরও কমবে। বাবুবাজারের পাইকারি বাজারের দয়াল ভাণ্ডারের ম্যানেজার মো. সাঈদ বলেন, ভারত থেকে আমদানি করা চাল বাজারে আসায় এক মাসের ব্যবধানে বস্তায় ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কমেছে। দাম কমলেও বিক্রি কমে গেছে। তবে ভারত থেকে যে পরিমাণ চাল আমদানি হচ্ছে তাতে চালের দাম আরও কমার কথা। চালের দাম কেজিতে দুই টাকা না পাঁচ টাকা কম হওয়া উচিত ছিল।এ বিষয়ে সূত্রাপুর বাজারের চাল বিক্রেতা মো. আনিস জানান, চাল আমদানির ফলে এক মাসে দুই টাকা কমেছে প্রতিকেজি চালের দাম। মনিটরিং বাড়লে দাম আরও কমে যাবে বলে জানান তিনি। এদিকে মৌলভীবাজারে প্রতি বস্তা (৫০ কেজি) চিনি বিক্রি হচ্ছে ৩ হাজার ৭০০ টাকা, প্রতিকেজি ৭৪ টাকা। সে হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে চিনির দাম কমেছে এক টাকা ২০ পয়সা। খুচরা বাজারে খোলা চিনি ৭৮ থেকে ৮০ টাকা ছিল। দাম কমে ৭৬ থেকে ৭৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্যাকেটজাত আগে ছিল ৮০ থেকে ৮২ টাকা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। সে হিসাবে খুচরা বাজারে প্রতিকেজি খোলা ও প্যাকেটজাত চিনির দাম কমেছে মাত্র দুই টাকা।এ বিষয়ে মৌলভীবাজারের পাইকারি চিনি ব্যবসায়ী সোনালী ট্রেডার্সের ম্যানেজার অরুণ কুণ্ডু বলেন, বর্তমানে আমরা মিল গেট থেকে ৩ হাজার ৭০০ টাকায় এক বস্তা (৫০ কেজি) চিনি কিনে থাকি। আর বিক্রি করছি ৩ হাজার ৭১০ টাকা। সে হিসাবে প্রতি কেজি চিনি কিনি ৭৪ টাকা আর বিক্রি করি ৭৪ টাকা ২০ পয়সা। সে হিসাবে পাইকারি বাজারে চিনির দাম বস্তায় ৫০ থেকে ৬০ টাকা কমেছে। আর কেজিতে এক টাকা ২০ পয়সা কমেছে। বাজারে এখন চিনির সরবরাহ ভালো। যদিও আমরা তুলনামূলক কম চিনি পাচ্ছি মিলগেট থেকে।সূত্রাপুর বাজারের খুচরা চিনি বিক্রেতা মেসার্স বিসমিল্লাহ স্টোরের মালিক মো. রিপন বলেন, তিন থেকে চার দিন ধরে চিনির দাম কমেছে। কেজিতে দুই টাকা কমে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৭৬ থেকে ৭৮ টাকা। আর প্যাকেটজাত চিনি ৭৮ থেকে ৮০ টাকা। এখনও আমরা সরকারে নির্ধারিত দামে চিনি বিক্রি করতে পারি না। আমরা কম দামে পেলেতো কম দামে বিক্রি করবো। এখন কম দামে পাচ্ছি বলে দুই টাকা কমিয়ে দিয়েছি।এ বিষয়ে সিটি গ্রুপের পরিচালক (করপোরেট ও রেগুলেশন অ্যাফেয়ার্স) বিশ্বজিত সাহা বলেন, আমরা নতুন দামের চিনি বাজারে ছেড়ে দিয়েছি। অনেক আগেই খোলা চিনির দাম কেজিতে পাঁচ টাকা কমে যাওয়ার কথা। আর প্যাকেটজাত চিনির দামের ক্ষেত্রেও আমরা আমাদের ডিলারদের বলে দিয়েছি খুচরায় ৭৫ টাকা করে চিনি বিক্রি করতে। যেহেতু দাম কমছে সে বিষয়ে মনিটরিং বাড়াতে হবে। বাজারে কোনো চিনির ঘাটতি নেই। বিএসএফআইসির প্রতিবেদন পর্যালোচনায় দেখা গেছে, দেশে চিনির চাহিদা গড়ে ১৫ থেকে ১৭ লাখ টন। এর মধ্যে সরকারি মিল ও সরকারি ব্যবস্থাপনায় আমদানি করা চিনিসহ দেড় আড়াই লাখ টন চিনি সরবরাহ করে বিএসএফআইসি। কিন্তু ছয়টি সরকারি মিল বন্ধ থাকার পাশাপাশি আমদানি না হওয়ায় দেশে চিনির চাহিদার প্রায় ৯০ শতাংশের বেশি বেসরকারি মিল মালিকদের নিয়ন্ত্রণে। এছাড়া বিএসএফআইসির নিজস্ব প্রায় চার হাজার ডিলারের কাছে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দেশের পাইকারি ও খোলা বাজারে দাম বাড়ছে।খাদ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, চালের বাজার স্থিতিশীল রাখতে গত ১২ আগস্ট চাল আমদানির শুল্ক কমিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। চালের আমদানি শুল্ক ৬২ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ২৫ শতাংশ করে এনবিআর। এ সুবিধা আগামী ৩০ অক্টোবর পর্যন্ত বহাল থাকবে। এরপর চাল আমদানিতে আগ্রহী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে আবেদন আহ্বান করে খাদ্য মন্ত্রণালয়। বরাদ্দ আদেশ জারির ১৫ দিনের মধ্যে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট-ঋণপত্র) খুলতে হবে। বরাদ্দ পাওয়া আমদানিকারকদের আগামী ২৫ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পুরো চাল বাংলাদেশের বাজারজাতকরণ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ব্যাংকে এলসি খুলতে ব্যর্থ হলে বরাদ্দ বাতিল হয়ে যাবে বলেও শর্ত দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়।