নিজস্ব প্রতিবেদক : এত বেশি বেতন-ভাতা, সুযোগ-সুবিধার পরও দুর্নীতি করলে সহ্য করা হবে না, বিষয়টি মাথায় রেখে কাজ করতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পরামর্শ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।বুধবার (১৮ আগস্ট) সচিব সভায় (ভার্চ্যুয়াল) ব্যাপকহারে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য সুযোগ বৃদ্ধির কথা তুলে ধরে দুর্নীতির বিষয়ে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের হুঁশিয়ার করেন প্রধানমন্ত্রী।দুর্নীতিবাজ সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্তক করে টানা তিন বারের সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশে আমরা সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাই। যেহেতু আমরা অনেক সুযোগ-সুবিধা দিচ্ছি, অর্থনৈতিকভাবে অগ্রগতি হচ্ছে, এ জন্য কোনো ধরনের দুর্নীতিকে আমরা সহ্য করবো না। সেটিকে মাথায় রেখে কাজ করতে হবে। ’তিনি বলেন, ‘দুর্নীতি একটি ব্যাধির মতো, এই ব্যাধি থেকে আমাদের মুক্ত হতে হবে। সেদিকে আপনাদের একটা কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। যেখানে দুর্নীতি দেখবেন সেখানেই ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা ভালো কাজ করবেন অবশ্যই তারা পুরস্কৃত হবেন। কিন্তু যারা দুর্নীতিতে জড়িত হবেন অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। ’শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা চাই একটা দক্ষ সেবামুখী জবাবদিহিমূলক প্রশাসন গড়ে উঠবে, যা দেশের উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করতে পারবে। সেটাই হচ্ছে সবচেয়ে বেশি কার্যকর। ’সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছে নিজের একটা চাওয়া আছে জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আর কিছু না, আমারও একটা চাওয়া আছে। আমরা যে কাজগুলো করতে চাই দ্রুত সেই কাজগুলো যেন বাস্তবায়ন হয় এবং যথাযথ মানসম্পন্ন হয়। সেটাই আমরা চাই। ’‘উন্নয়ন প্রকল্পগুলো যেন যথাযথভাবে কার্যকর হয়, বাস্তবায়ন হয়—এই বিষয়গুলো সবাইকে একটু দেখা দরকার। সেটা আপনারা বিশেষভাবে দেখবেন, সেটাই আমি আশা করি। ’সরকারপ্রধান বলেন, ‘এটাই চাই আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করবেন। …সমস্যা থাকলে সমস্যাগুলো সমাধান করে দেওয়া। সে বিষয়ে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখবেন। কোনো মতেই যেন কাজে স্থবিরতা না দেখা দেয়। ’বিগত বছরগুলোতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সবার বেতন আমরা বৃদ্ধি করে দিয়েছি। আবাসনের ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। যেন তারা ভালোভাবে বসবাস করে কাজ করতে পারেন। সুন্দরভাবে থাকতে পারলে কাজের সুবিধাটা হয়। ’‘আমরা উৎসব ভাতা দিচ্ছি। আমরা পহেলা বৈশাখ, আমাদের বাংলা নববর্ষ ভাতা দিয়ে যাচ্ছি। গৃহ নির্মাণের জন্য যাতে সহজে ঋণ পাওয়া যায় সেই ব্যবস্থা আমরা দিচ্ছি। গাড়ি কেনার ব্যবস্থা আমরা করে দিয়েছি। গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য আলাদা ভাতার ব্যবস্থা করে দিয়েছি। এই সুযোগগুলো আমরা সৃষ্টি করেছি। ’শেখ হাসিনা বলেন, ‘এক সরকারি কর্মকর্তা অবসরে গেলে বা পিআরএল-এ গেলে যেসব সুবিধা পেতেন আমরা অনেকগুণ সেসব সুবিধা বৃদ্ধি করে দিয়েছি। পেনশন সহজভাবে পাওয়ার ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। সমস্ত বেতন-ভাতা, পেনশন ডিজিটাল পদ্ধতিতে ইএফটি এর মাধ্যমে এখন প্রদান করা হচ্ছে। ঘরে বসে সবাই পেয়ে যাচ্ছেন। ’কৃষক-শ্রমিক, মেহনতি মানুষের সমস্যাগুলো গুরুত্ব সহকারে দেখার নির্দেশ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কৃষকের সমস্যা কী, তাদের কী সুবিধা আমরা দিতে পারি, সেটা আমাদের দেখতে হবে। যে শ্রমিক তার শ্রম দিয়ে উৎপাদন করে সেই শ্রমিক যেন উন্নত জীবন পায়, তারাও যেন কাজ করার সুন্দর একটা পরিবেশ পায়, তার ছেলে-মেয়েরা যেন কষ্ট না পায়। কৃষক-শ্রমিক-মেহনতি মানুষ তাদের কথাও আমাদের চিন্তা করতে হবে। ’সচিব সভায় স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) চ্যালেঞ্জ, ডেল্টা প্ল্যান, সবার জন্য টিকা নিশ্চিতকরণ, খাদ্য নিশ্চিতে গবেষণা, কৃষি ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ে সমন্বয় নিয়ে আলোচনা হয়। কৃষির যান্ত্রিকীকরণ নিয়েও সভায় আলোচনা হয়।প্রেক্ষিত পরিকল্পনা (২০২১-২০৪১) বাস্তবায়নে সচিবদের আরও আন্তরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। করোনা পরিস্থিতি ও প্রণোদনা দেওয়ার বিষয়েও সচিব সভায় বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের পরিকল্পনা বিভাগের এনইসি সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত সচিব সভায় গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।