নিজস্ব প্রতিবেদক : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কারণ দর্শানোর নোটিশের পরিপূর্ণ বা স্পষ্ট জবাব না দেওয়ায় ইভ্যালির বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে আগামী বুধবার (১১ আগস্ট) বৈঠকে বসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এলক্ষ্যে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমানকে প্রধান করে ৯ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটি গঠন করা হয়েছে।নতুন গঠিত কমিটির প্রথম বৈঠক বসছে বুধবার। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে ৯ সদস্যের আন্তঃমন্ত্রণালয় কমিটিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দুইটি ইউং, বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তথ্যপ্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রতিনিধিরা কমিটিতে থাকছেন। এছাড়া থাকছেন কোম্পানি আইন নিয়ে কাজ করা সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানজীব উল আলম। কমিটির কার্যপরিধির মধ্যে রয়েছে ইভ্যালির ব্যাপারে পরবর্তী সিদ্ধান্ত গ্রহণ, অন্যান্য ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান নিয়ে আলোচনা এবং বিবিধ।প্রসঙ্গত, ইভ্যালি কারণ দর্শানোর নোটিশের পরিপূর্ণ জবাব দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে ছয় মাস সময় চেয়ে ১ আগস্ট আবেদন করে।এ বিষয়ে কমিটির প্রধান বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক মো. হাফিজুর রহমান বলেন, আমরা ইভ্যালির ব্যাপারে আগামী বুধবার সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসবো। সম্ভবত বাণিজ্য সচিবের সভাপতিত্বে বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হতে পারে। বৈঠকে আলোচনার মাধ্যমে কমিটি যা সিদ্ধান্ত দেওয়ার দেবে। এখনই আমরা কিছু বলতে পারছি না। তবে, ইভ্যকলিকে নোটিশের পরিপূর্ণ জবাব দিতে কত দিন সময় দেওয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনার মাধ্যমেই নির্ধারণ করা হবে। তিনি বলেন, বৈঠকে প্রথমমতো ইভ্যালির বিষয়টা আসবে, এরপর ই-কমার্সের সার্বিক দিক নিয়েও আলোচনা করা হবে। তবে, ইভ্যালির বিষয়ে এ সিদ্ধান্ত আগেই নেওয়া ছিলো জবাব যেটাই আসুক সেটা একটা কমিটির মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকে ইভ্যালির যে অর্থের গরমিল আছে সেটা বিষয়ে ইভ্যালি স্পষ্ট জবাব দেয়নি। যা দিয়েছে সেটা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এরপর করণীয় কী হবে সে বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। জানা গেছে, ইভ্যালিকে গত ১৯ জুলাই কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলেছিল, গত ১৪ মার্চ পর্যন্ত গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে মোট ৪০৭ কোটি টাকা দায়ের বিপরীতে ইভ্যালির কাছে মাত্র ৬৫ কোটি টাকা চলতি সম্পদ কেন? বাকি টাকা ইভ্যালির কাছে থাকলে বিস্তারিত তথ্য দিতে হবে, না থাকলে দিতে হবে পরিপূর্ণ ব্যাখ্যা।আরও বলা হয়েছিল, ১৫ জুলাই পর্যন্ত গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছে দায় এবং তা পরিশোধের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, ব্যবসা শুরুর পর থেকে গ্রাহকদের কাছ থেকে ইভ্যালি কত টাকা নিয়েছে, মার্চেন্টদের কত টাকা পরিশোধ করেছে এবং প্রশাসনিক ও অন্যান্য খাতে কত ব্যয় করেছে, তার পূর্ণাঙ্গ বিবরণ জানাতে হবে।এছাড়া গ্রাহক ও মার্চেন্টদের সুরক্ষা এবং ডিজিটাল কমার্স খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব প্রতিরোধের লক্ষ্যে ইভ্যালির বিরুদ্ধে কেন আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছি নোটিশে। কোম্পানিটির ব্যবসা পদ্ধতিও জানতে চাওয়া হয়েছিল। এদিকে গত ৪ জুলাই ইভ্যালরি বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদক ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।চিঠিতে বলা হয়েছে, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে ইভ্যালি ডট কম নামের একটি ডিজিটাল কমার্সের বিষয়ে তদন্ত করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত মাসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দেওয়া এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে বাংলাদেশ ব্যাংক জানায় যে, ইভ্যালির মোট দায় ৪০৭ দশমিক ১৮ কোটি টাকা। গ্রাহকের কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ ২১৩ দশমিক ৯৪ কোটি টাকা এবং মার্চেন্টদের কাছ থেকে ১৮৯ দশমিক ৮৫ কোটি টাকার মালামাল বাকিতে গ্রহণের পর স্বাভাবিক নিয়মে প্রতিষ্ঠানটির কাছে কম পক্ষে ৪০৩ দশমিক ৮০ কোটি টাকার চলতি সম্পদ থাকার কথা থাকলেও রয়েছে মাত্র ৬৫ দশমিক ১৭ কোটি টাকা। যা দিয়ে মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ গ্রাহকদের বকেয়া মেটাতে পারবে। চিঠিতে আরো বলা হয়েছে, বাকি গ্রাহক ও মার্চেন্টদের পাওনা মেটানো ওই প্রতিষ্ঠানের জন্য সম্ভব নয়। তদুপরি গ্রাহক ও মার্চেন্টদের কাছ থেকে গ্রহন করা ৩৩৮ কোটি টাকার হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ধারণা করা হচ্ছে এই বিপুল অংকের টাকা আত্মসাৎ কিংবা সরিয়ে ফেলার আশংকা রয়েছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে দুদক চেয়ারম্যানকে বলা হয়েছে।