পরীমনির প্রকৃত নাম শামসুন্নাহার স্মৃতি। সিনেমায় এসে তিনি পরীমনি নামে পরিচিতি পান। ১৯৯২ সালে নড়াইলে জন্ম তার। পরীর বাবা মনিরুল ইসলাম ও মা সালমা সুলতানা। মাত্র তিন বছর বয়সে মা মারা যাওয়ার পর নানাবাড়ি পিরোজপুরে বড় হোন পরীমনি। সেখানে নানা শামসুল হক গাজীর তত্ত্বাবধানে শৈশব কাটে তার।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পাস করার পর ২০১১ সালে ঢাকায় চলে আসেন পরীমনি। নাচ শিখতে শুরু করেন বুলবুল ললিতকলা একাডেমিতে (বাফা)।
নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে মডেলিং দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেন পরীমনি। বেশকিছু নাটকে তাকে চরিত্রাভিনেত্রী হিসেবে পাওয়া যায়। হুট করেই আলাদীনের প্রদীপ হাতে পেয়ে যান তিনি। চলে আসেন বড় পর্দায়। প্রথম সিনেমা মুক্তির আগেই ২৩টি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে হইচই ফেলে দেন। রাতারাতি তারকা বনে যান তিনি। এরপর শুরু হয় আলিশান ফ্ল্যাটে থাকা এবং কোটি টাকার গাড়িতে চড়া।
নায়িকা হওয়ার পর এক বিতর্কে জড়িয়েছেন পরীমনি। শুরুতেই এক চিত্রনির্মাতার স্ত্রীর সঙ্গে শুটিং সেটে হাতাহাতি করে সমালোচনার জন্ম দিয়েছেন তিনি।
এছাড়া বেশ কয়েকবার বিয়ে ও সংসার না করা, নির্মাতা-সহকর্মীদের সঙ্গে উচ্ছৃঙ্খল আচরণ, শুটিংয়ে অশিল্পীসুলভ আচরণ, সাংবাদিকদের সঙ্গে একাধিকবার বিবাদে জড়ানো, বিলাসবহুল গাড়ি কেনা, মদকাণ্ডসহ নানা বিষয়ে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন পরীমনি।
ক্যারিয়ারের পরতে পরতে সমালোচনার মালা গাথা পরীমনির। অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নামের সঙ্গে বিভিন্ন তকমা যুক্ত হয়। কিন্তু ঢাকাই সিনেমার এই নায়িকা বলতে গেলে ‘বিতর্কের রাণী’ হয়ে ওঠেছেন! যেখানে বিতর্ক বা সমালোচনা সেখানে তিনি!
চিত্রপরিচালক শাহ আলম মণ্ডল পরিচালিত ‘ভালোবাসা সীমাহীন’ সিনেমার মাধ্যমে ২০১৫ সালে ঢাকাই সিনেমায় অভিষেক ঘটে পরীমনির। এর আগে টুকটাক মডেলিং ও টিভি পর্দায় কাজ করেছেন। তবে পরীমনি নামটি আলোচনায় আসে নজরুল ইসলাম খান পরিচালিত ‘রানা প্লাজা’ সিনেমায় অভিনয়ের পর।
অভিনয় করেছেন নামজাদা বেশ কয়েকজন পরিচালকদের সঙ্গে। অভিনয় করেছেন ওয়াজেদ আলী সুমনের ‘পাগলা দিওয়ানা’ ও ‘রক্ত, এস এ হক অলীকের ‘আরো ভালোবাসবো তোমায়’, মালেক আফসারীর ‘অন্তর জ্বালা’সহ বেশ কিছু সিনেমায়।
পরী অভিনীত অন্য সিনেমাগুলো হলো ‘মন জুড়ে তুই’, ‘লাভার নাম্বার ওয়ান’, ‘নগর মাস্তান’, ‘মহুয়া সুন্দরী’, ‘মন জানে না মনের ঠিকানা’, ‘পুড়ে যায় মন’, ‘ধূমকেতু’, ‘কত স্বপ্ন কত আশা’, ‘আপন মানুষ’, ‘সোনা বন্ধু’, ‘ইনোসেন্ট লাভ’, ‘মন জ্বলে’, ‘নদীর বুকে চাঁদ’, ‘বুকের মাঝে প্রেমের আগুন’, ‘স্বপ্নজাল’ ইত্যাদি। কিন্তু কোনো সিনেমায় সাফল্যের মুখ দেখেননি তিনি। তবে সবগুলো সিনেমা শেষ পর্যন্ত মুক্তির আলো দেখেনি।
পরীমনি নায়ক হিসেবে পেয়েছেন শাকিব খান, বাপ্পী চৌধুরী, সায়মন সাদিক, জায়েদ খানসহ বেশ কয়েকজনেক।
সেখানে একজন শিল্পী হতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয় সেখানে একের পর এক সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেননি পরীমনি। ব্যর্থতায় ভরা তার ক্যারিয়ার। তার অভিনীত কোনো সিনেমা সেভাবে ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি।
প্রেম, বাগদান, ভাঙন, নতুন প্রেম, বিয়ে এসব নিয়ে বারবার সংবাদের শিরোনামে এসেছেন পরীমনি। বার বার তিনি মন ভাসিয়েছেন প্রেমের জোয়ারে। প্রেমিকদের নিয়ে প্রকাশ্যে এসেছেন, তাদের রোম্যান্স নজর কেড়েছে ভক্তদের। আবার সম্পর্ক ভাঙতেও সময় নেননি তিনি।
পরীমনি তিন টাকার কাবিনে বিয়ে করেছিলেন নাট্যকর্মী কামরুজ্জামান রনিকে। সেই সংসার ভাঙে তিন মাসেই। এর আগে এক বিনোদন সাংবাদিকের সঙ্গে পরীর প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তার সঙ্গে বাগদানও হয় পরীর। কিন্তু বিয়ের আগেই তা ভেঙে যায়। এর আগেও নাকি বিয়ে হয়েছিল পরীমনির, ক্যারিয়ারের জন্যই নাকি সেই সংসার ছেড়ে এসেছিলেন উচ্চাবিলাসী এই তরুণী।
এর বাইরেও পরীমনির বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়েও আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। চলচ্চিত্রে সাফল্যহীন পরীর ধন-সম্পদ নিয়েও মানুষের মনে নানা প্রশ্ন রয়েছে। বনানীর ১৯/এ সড়কের একটি বাড়িতে বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে বসবাস করেন পরীমনি। ধারণা করা হয় এই ফ্লাটের আনুমানিক মূল্য ১০ কোটি টাকা। এছাড়াও তার রয়েছে কয়েক কোটি টাকা মূল্যের গাড়ি। যে অর্থ তার অভিনয় ক্যারিয়ারের সবগুলো সিনেমার পারিশ্রমিক যোগ করলেও হবে না।
পরীমনি বরাবরই উচ্ছৃঙ্খল জীবনযাপন করেন। তার বিরুদ্ধে মদ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে। মাতাল অবস্থায় বিভিন্ন ক্লাব ও বারে ভাঙচুরের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। সম্প্রতি সেই অভিযোগগুলো নতুন করে উঠে এসেছে।
নানা অভিযোগের ভিত্তিতে বুধবার (৪ আগস্ট) পরীমনির বনানীর বাসায় অভিযান চালায় র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)। অভিযানে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ পরীমনিকে আটক করা হয়। তার বিরুদ্ধে ব্ল্যাকমেইলিং, মাদক ব্যবসা ও পর্নোগ্রাফি’র অভিযোগও রয়েছে।