লাখ নয়, টিকার হিসাব করতে হবে কোটিতে: ডা. জাফরুল্লাহ

লাখ নয়, টিকার হিসাব করতে হবে কোটিতে: ডা. জাফরুল্লাহ
নিজস্ব প্রতিবেদক : লাখ টিকার হিসাব করে এখন আর হবে না, হিসাব করতে হবে কোটির। ১৩ কোটি মানুষের জন্য আমাদের ২৬ কোটি টিকা চাই।সেখানে লাখের হিসাব করে এগোনো যাবে না। তাই টিকা সংগ্রহ এ মুহূর্তে সরকারের প্রধান কাজ।ক্রয়ের স্বচ্ছতা আমরা চাই, কিন্তু যে দামেই টিকা পাওয়া যাক, তাতেই আমাদের টিকা ক্রয় করা উচিত। কেননা ‘লকডাউনের’ আর্থিক ক্ষতি টিকার আপাতত উচ্চ দামের চেয়ে অনেক বহুগুণ বেশি। সরকারের যে টাকা নেই তা তো নয়! কিন্তু ফ্রি টিকা নিতে গিয়ে লাখের হিসাবে পড়ে থাকলে চলবে না। এখন টিকার হিসাব করতে হবে কোটিতে।শনিবার (১ আগস্ট) দুপুরে এসব কথা বলেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। করোনা মোকাবিলা, শ্রমিকদের হয়রানি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে জরুরি নাগরিক সংবাদ সম্মেলনে সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।এছাড়া সরকারের অনুমতি পেলে রাশিয়ার স্পুটনিক টিকার দুই কোটি ডোজ দ্রুত গতিতে দেশে আনা সম্ভব বলেও জানান তিনি।এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন- নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম, ভাসানী অনুসারী পরিষদের মহাসচিব শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ডাকসুর সাবেক ভিপি নূরুল হক নূর। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন গণস্বাস্থ্যের মিডিয়া উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম মিন্টু।কলকারখানা খোলার ব্যাপারে দ্বিমত নেই উল্লেখ করে ডা. জাফরুল্লাহ বলেন, কলকারখানা খোলার ব্যাপারে কতগুলো নিয়ম আছে। শ্রমিকদের টিকা দিতে হবে। টিকা দেওয়া কঠিন কোনো কাজ না। গার্মেন্টস মালিকদেরও দায়িত্ব আছে। তারা যে এতদিন এত লুটপাট করেছে, বেগমপাড়া করেছেন, মালয়েশিয়ায় বাড়ি করেছেন, টাকা পাচার করেছেন। যে শ্রমিকদের কাঁধে ভর করে এতকিছু করেছেন, সেই শ্রমিকদের তো টিকা দিয়েই কারখানা চালাতে পারেন। টিকার টাকা তারাই জোগাড় করে দিতে পারেন।তিনি বলেন, ৬৪ জেলায় ৬৪টি অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্র স্থাপান করা দরকার। অক্সিজেন উৎপাদনের সবচেয়ে উন্নত টেকনোলজির মাধ্যমে মাসে ৫০ টন অক্সিজেন উৎপাদন করা সম্ভব। এ টেকনোলজির দাম মাত্র ৬ কোটি টাকা। বহু ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান আছে যারা এটা করতে পারে। ৬৪ জেলায় ৬৪টি অক্সিজেন উৎপাদন কেন্দ্র করতে পারলে আমাদের কেউ অক্সিজেনের অভাবে মারা যাবে না।মাহামুদুর রহমান মান্না বলেন, আপনারা দেখছেন গত শনিবার (৩১ জুলাই) থেকে কী একটা তুঘলকি কাণ্ড ঘটছে। হাজার হাজার লোক আসছে। কোনো একটা রেসপন্সবল গভর্নমেন্ট এটা পারে। এদিক থেকে বলা হয়েছে আপনারা যদি না আসতে পারেন কোনো সমস্যা নেই, আপনাদের চাকরি যাবে না। অন্যদিকে মালিকপক্ষ থেকে শ্রমিকদের টেলিফোনে করা হয়েছে চাকরিতে যোগ দিতে হবে, নইলে চাকরি থাকবে না। তুঘলকও তো জনগণের কথা ভাবতো, এখানে তো সেটাও নেই।বক্তারা বলেন, আন্তর্জাতিক সাপ্লাই চেইন হওয়ায় প্রতিযোগিতার কারণে যদি পোশাকশিল্প খুলতেই হয় সেক্ষেত্রে পোশাক কারখানা শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দিয়ে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া প্রয়োজনীয় পরিবহনের ব্যবস্থা করেই সরকারের কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। এখন কোনো শ্রমিক যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যায় তাহলে সেই শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। কেউ আক্রান্ত হলে তার চিকিৎসার ব্যয় মালিককে নিতে হবে।তারা বলেন, আমরা আরেকটি বিষয়ে গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার ব্যাপারে লাগাতার টালবাহানা করে যাচ্ছে। সরকারের বিবেচনাহীন এ সিদ্ধান্ত কোটি কোটি শিক্ষার্থীদের জীবনই কেবল ক্ষতিগ্রস্ত করেনি, গোটা শিক্ষা ব্যবস্থাকেই এখন প্রায় ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে এসেছে। আমরা অবিলম্বে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার দাবি জানাই। প্রয়োজনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাসের সময়সীমা এবং কর্মদিন কমিয়ে এনে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে, এর কোনো বিকল্প নেই।সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, আগামী ৬ আগস্ট বিকেল ৩টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক নাগরিক সমাবেশ ও পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এ কর্মসূচি থেকে সবার কাছে খাদ্য পৌঁছানো, শ্রমিক-শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া, স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় ঘাটতি পূরণ করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আদালত ও গণপরিবহন খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হবে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

ঈদগাঁও–ঈদগড় সড়কে গুম ও ডাকাতি দমনে প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি

শিবচরে মাদক রোধে ইউএনও’র কাছে স্মারকলিপি দিল উপজেলা বিএনপি