ঈদুল আজহায় দীর্ঘসময় নিয়ে ভিড় ঠেলে বাজারে গরু পছন্দ করা আর কেনাটাই যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এবার বাজারে গিয়ে গরু কেনা নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়। যদিও গরুর বাজার বসানোর ক্ষেত্রে বেঁধে দেওয়া হয়েছে বেশকিছু নিয়ম। কিন্তু কজনইবা এ নিয়ম মানেন। গত বছরও করোনার মধ্যে নগরের গরুর হাটগুলোতে অতিরিক্ত জনসমাগম হয়। উপেক্ষিত ছিল স্বাস্থ্যবিধি। এবারও যদি এমন অবস্থা হয়, তাহলে করোনার সংক্রমণ ছড়াবে ভয়াবহ আকারে। তাই অনলাইনে গরু কেনার পরামর্শ দিচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা।তারা বলছেন, যতই নিয়ম বেঁধে দেওয়া হোক না কেন মানুষ তা মানবে না। আর এত বড় একটা কর্মযজ্ঞ সামলানো কঠিন বিষয়। এজন্য অনলাইনে গরু কিনতে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। প্রয়োজনে অনলাইনে গরু পছন্দ করে পরিবারের দুই-তিনজন সদস্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরু দেখে আসতে পারেন। এছাড়াও বিভিন্ন অ্যাগ্রো ফার্মে গিয়ে গরু পছন্দ করা যায়।জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. বিদ্যুৎ বড়ুয়া বলেন, গরুর বাজারে আমরা যতই স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলি না কেন- সেখানে সেটা সম্ভব না। বাজার বসলে উৎসুক জনতা দেখতে যাবেই। এতে সেখানে অধিক হারে সংক্রমণ হবে। তবে, গরুর বাজার একেবারে বন্ধ রাখাও যাবে না। সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে কঠোর হয়ে খোলা রাখা যেতে পারে। এক্ষেত্রে সবাইকে অনলাইনে গরু কেনার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মো. রেয়াজুল হক বলেন, গত বছর খামারি থেকে গরু বিক্রি হয়েছে প্রায় ৯৫ হাজার। করোনার সংক্রমণ যদি আমরা কমাতে চাই, তাহলে অনলাইনে গরু বিক্রির ওপর জোর দিতে হবে। এখন অনলাইননে গরু কেনার প্রতি মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে, সেটি ধরে রাখতে হবে। তিনি বলেন, মানুষ খামার থেকেও গরু কিনছে। গরু কিনে ওই খামারেই রেখে দিচ্ছে। কোরবানির আগের দিন নিয়ে আসবে। এখন যে হারে গরু বিক্রি হচ্ছে, তাতে প্রায় ৬০ শতাংশ গরু বেচা-কেনা হয়ে যাবে। বাকি ৪০ শতাংশ বেচা-কেনা হবে বাজার থেকে। বাজারে ক্রেতা-বিক্রেতা যাতে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখে সেজন্য ইজারাদাররা মাইকিং করবে। ক্রেতাদের প্রতি পরামর্শ হলো, অতিরিক্ত লোক আনার দরকার নেই। যত দ্রুত সম্ভব গরু কিনে বাজার ত্যাগ করতে হবে।চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ড. তৌহিদ হোসেন বলেন, বড় পরিসরে বসা গরুর বাজারগুলোতে সম্পূর্ণরূপে কখনো স্বাস্থ্যবিধি মানা যায় না। সেজন্য স্বল্প পরিসরে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গরুর হাট বসানো যেতে পারে। পাশাপাশি অনলাইনে গরু কেনার বিষয়ে জোর দিতে হবে। কিভবে মানুষকে না ঘুরিয়ে, জনসমাগম এড়িয়ে গরু কেনা যায়- সেটা নিশ্চিত করতে হবে।একই পরামর্শ দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. তানিম জাবিদ হোসাইন। তিনি বলেন, কোরবানির পশু থেকে দাঁড়াতে হবে তিন থেকে চার ফুট দূরত্ব বজায় রেখে। ক্রেতা-বিক্রেতার মুখে মাস্ক নিশ্চিত করতে হবে। অনলাইনে এবং খামার থেকে গরু-ছাগল বিক্রির হার বাড়াতে হবে। তবেই সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আগামী ১২ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ১০ দিনের জন্য নগরে তিনটি অস্থায়ী বাজার বসবে। এছাড়া স্থায়ী তিনটি বাজারে সারাবছরই পশু বেচাকেনা হয়। গরুর বাজার অনুমোদনের ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন ১৭টি শর্ত দিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনকে ।