প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের সঙ্গে মর্যাদাও ফিরে পেয়েছি’

প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের সঙ্গে মর্যাদাও ফিরে পেয়েছি’
স্বামী ভ্যানচালক শহিদুল গাজী (৫০), দুই সন্তান নিয়ে সরকারি খাস জমিতে গোলপাতার ঝুঁপড়ি ঘরে থাকতেন। রোদ, বৃষ্টি ও ঝড়ের সঙ্গে লড়াই করে কষ্টের জীবন পার করছিলেন তারা।  গেল জানুয়ারিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় খুলনার ডুমুরিয়ার কাঁঠালতলা বাজার সংলগ্ন পুনর্বাসন কেন্দ্রে একটি জমি ও ঘর পেয়েছেন আনার বেগম ও তার স্বামী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের এ জমি ও ঘর পেয়ে খুশি আনার বেগমের পরিবার।আনার বেগমের স্বামী শহিদুল গাজী বলেন, ‘আগে বসতভিটাও ছিল না। ঘর করব কেমনে। সরকারি জায়গায় গোলপাতার ঘর বেঁধে থাকতাম। রোদ বৃষ্টি ঝড়ে কষ্ট করতাম। ’আনার বেগম বলেন, ‘সরকারি জায়গায় আগে যে ঘরে থাকতাম, বৃষ্টি হলে ঘরে পানি পড়তো। বর্ষায়-বৃষ্টিতে রাতে ঘুমাতে পারতাম না, উঠে বসে থাকতাম। প্রধানমন্ত্রী আমাদের একটা জমি, একটা ঘর (সেমি পাকা) দিয়েছেন। এখন নিশ্চিন্তে ঘরে ঘুমাতে পারি। ’আনার বেগম বলেন, ‘এর ঘর পাওয়ার আগে গোলপাতার ঘরে থাকতাম তখন আমাদের কোন মর্যাদা ছিল না, নিরাপত্তা ছিল না। সবাই আমাদের অবহেলা করতো, করুণা চোখে দেখতো, অসম্মানের চোখে দেখতো। প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘরের সঙ্গে আমরা মানুষ হিসেবে মর্যাদাও ফিরে পেয়েছি। এখন সবাই আমাদের মূল্যায়ন করে। ’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু কামনা করে তিনি আরও বলেন, ‘নিজেদের এমন একটা ঘর হবে স্বপ্নেও ভাবিনি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের ঘর দিয়েছেন, এ ভীষণ আনন্দের। নামাজ পড়ে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করি, তিনি যেন আমাদের মত অসহায় মানুষের জন্য আরও কাজ করতে পারেন। আল্লাহ ওনাকে সুস্থ রাখুন, হায়াত বাড়িয়ে দিন। ’আনার বেগমের পরিবারের মত গত জানুয়ারি মাসে কাঁঠালতলার আশ্রয় কেন্দ্রে ঘর পেয়েছেন বাবুল দাস (৪২)। তিনি এখানে বেশ কয়েক মাস দুই মেয়ে, এক ছেলে, স্ত্রী নিয়ে বসবাস করছেন।

বাবুল দাস বাংলানিউজকে বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকার আমাদের ঘর দিয়েছে। আগের আমাদের কোনো ঠিকানা ছিল না। কষ্ট করে ঝুঁপড়ি ঘরে থাকতাম। এখন সুন্দর পাকা ঘরে থাকি। সুখে আছি। ’প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় বাবুল দাস, শহিদুল গাজীর মতো আরও ৬০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার আশ্রয় পেয়েছেন খুলনার ডুমুরিয়া কাঁঠালতলার এ পুনর্বাসন কেন্দ্রে।দেশের সব নাগরিকের আবাসন নিশ্চিত করতে কাজ করছে সরকার। প্রথম ধাপে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের ঘর করে দিচ্ছে সরকার। গত জানুয়ারি মাসে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের অধীনে চলমান কর্মসূচির প্রথম পর্যায়ে সারাদেশে একসঙ্গে ৬৯ হাজার ৯০৪ ভূমিহীন-গৃহহীন পরিবারকে জমি ও ঘর দিয়েছে সরকার।

প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস জানান, আগামী রোববার (২০ জুন) দ্বিতীয় পর্যায়ে একসঙ্গে আরও প্রায় ৫৩ হাজার ৩৪০টি অসহায় পরিবারকে জমি ও ঘর দেবে সরকার। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভিডিও কনফারেন্সে এ জমি ও ঘর প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করবেন।আগামী ডিসেম্বর মাসের মধ্যে আরও এক লাখ ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবারকে বিনামূল্যে জমিসহ ঘর দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব।একসঙ্গে এত মানুষকে বিনামূল্যে বাড়ি-ঘর দেওয়ার ঘটনা পৃথিবীতে নজিরবিহীন মন্তব্য করে আহমদ কায়কাউস বলেন, ‘বিভিন্ন দেশে ভূমিহীন, গৃহহীনদের ঘর-বাড়ি নির্মাণের জন্য সুদবিহীন ঋণ দেওয়ার নজির থাকলেও ভূমিহীন-গৃহহীনদের ডেকে তাদের বাড়ি-ঘর দেওয়ার নজির আর নেই। ’

আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন জানান, সারা বাংলাদেশে ঘরও নেই, জমিও নেই এমন পরিবারের সংখ্যা দুই লাখ ৯৩ হাজার ৩৬১। ভিটেমাটি আছে, ঘর জরাজীর্ণ কিংবা ঘর নেই এমন পরিবারের সংখ্যা পাঁচ লাখ ৯২ হাজার ২৬১। গৃহনির্মাণের মাধ্যমে পুনর্বাসন করতে সারা বাংলাদেশে সব মিলিয়ে আট লাখ ৮৫ হাজার ৬২২টি পরিবারকে তালিকাভুক্ত করেছে সরকার।দেশে ভূমিহীন ও গৃহহীন অসহায় মানুষদের মধ্যে যাদের ভূমি নেই, তাদের সরকারের খাস জমি থেকে দুই শতাংশ ভিটে এবং ঘর দিচ্ছে সরকার। যাদের ভিটে আছে ঘর নেই, তাদের ঘর দিচ্ছে সরকার। প্রতিটি ঘর দুই কক্ষ বিশিষ্ট। এতে দু’টি করে কক্ষ ছাড়াও সামনে একটি বারান্দা, একটি টয়লেট, একটি রান্নাঘর এবং কিছুটা খোলা জায়গা থাকবে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো- ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন, ঋণ প্রদান ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহে সক্ষম করে তোলা এবং আয় বাড়ে এমন কার্যক্রম সৃষ্টির মাধ্যমে দারিদ্র্য দূরীকরণ।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

সীতাকুণ্ড উপজেলা সাবেক চেয়ারম্যান রাজু আটক

শ্রমিক নেতা থেকে গুন্ডা বাহিনীর প্রধান হয়েছে শাজাহান খান: আব্দুল মোনায়েম মুন্না