বর্ষার ভারী বর্ষণে শরীর ধুয়ে নেয় প্রকৃতি। পরিচ্ছন্ন হয়, নতুন করে জেগে ওঠে। বেলী, বকুল, জুঁই, দোলনচাঁপা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনার ঘ্রাণে ভরে ওঠে চারপাশ। আর ‘বাদল দিনের প্রথম কদম ফুল’-এর হাসি তো ভুবন ভোলানো! কী গ্রাম, কী নগর, সর্বত্রই বর্ষার আগমনীবার্তা দেয় কদম। যেন একই কথার জানান দিতে পেখম মেলে ময়ূর। বৃষ্টির জল গায়ে নিয়ে নৃত্য করে তারা।বাঙালি মননে সবচেয়ে বেশি রোমান্টিকতা-আধ্যাত্মিকতার সুর বেজেছে বর্ষায়। সাহিত্যজুড়ে তারই তো প্রতিফলন। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বর্ষা ঋতুকে নিয়ে অসংখ্য কবিতা, গল্প, গান লিখেছেন। তাই তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কখনো কখনো বর্ষার কবিও বলা হয়। তিনি বর্ষাঋতু এবং বৃষ্টিকে তার কবিতায় সাজিয়েছেন বিচিত্রভাবে। বর্ষা কখনো প্রকৃতির রূপ বর্ণনার, কখনো নিরেট প্রেমের অনুঘটক। আবার কখনোবা বর্ষা স্বয়ং নারী।এত কিছুর পরও এই মুগ্ধকর ঋতুরও রয়েছে সর্বগ্রাসী রূপ। অতি বৃষ্টিতে বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা করে টিকে থাকতে হয়েছে এ জনপদের মানুষকে। তাই তো গবেষকদের কাছে বরাবরই মোহমুগ্ধ হয়ে উঠেছে নানা রূপের এ ঋতুটি। রিমঝিম বৃষ্টিতে বিরহে রোদন হয়। টুপ টাপ বৃষ্টির নুপুর সারা দুপুরজুড়ে খেলা করে মন জোয়ারের ঢেউয়ে। তাইতো ভাবুক মন এই বর্ষায় নিরভাবনায় বলে ওঠে- ‘ওগো, বর্ষা এলো। এই বর্ষায় ধুয়ে যাক জীবনের সব ক্লেদ। ভালবাসায় পূর্ণ হয়ে উঠুক প্রকৃতি আর মানব মন’। বর্ষাকে ঘিরে এমন প্রত্যাশা যেন সবখানে।