নিজস্ব প্রতিবেদক : মানুষের চা পানের অভ্যাস বেড়ে যাওয়ায় চা-রপ্তানি করা কঠিন হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। তিনি বলেন, দিনে দিনে আমাদের চায়ের উৎপাদন বাড়বে।কিন্তু রপ্তানি করা কঠিন হবে। কারণ দেশের মানুষ চা খাওয়া বাড়িয়ে দিয়েছে। এর সঙ্গে আর একটি জিনিস উঠে এসেছে তা হলো আমাদের তৃণমূলের মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে।শুক্রবার (৪ জুন) সকাল রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় বাংলাদেশ চা-বোর্ডের উদ্যোগে ‘মুজিববর্ষের অঙ্গীকার, চা শিল্পের প্রসার’ স্লোগানে দেশে প্রথম জাতীয় চা দিবস এর উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি একথা বলেন। অনুষ্ঠান শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ চা বোর্ডের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিটিআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত উন্নতজাতের ক্লোন বিটি-২২ ও বিটি-২৩ চা অবমুক্ত করেন।অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, বঙ্গবন্ধুর স্পর্শে চা-শিল্প উজ্জীবিত হয়েছে। বঙ্গবন্ধু চা-বোর্ডের চেয়ারম্যানের দায়িত্বে থাকাকালীন এবং পরে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন শ্রমিক শ্রেণি ও বিভিন্ন শ্রেণির মানুষসহ বিভিন্ন বিষয়ে যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত তিনি নিয়েছে যা চা খাতকে সমাদৃত করেছে। বাজেট অধিবেশনের আগে কেবিনেট মিটিংয়ে প্রধানমন্ত্রী চা-রপ্তানির বিষয়েও কথা বলেছেন। একই সঙ্গে চা-পাতার নতুন নতুন আইটেম আনা, বাজেট বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।তিনি বলেন, আমরা সবাই চা-রপ্তানি করতে চাই। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, সেটা খুব কঠিন হবে। বৈজ্ঞানিক চিন্তা-চেতনা কাজ করছে, আমাদের সর্বাঙ্গীন প্রচেষ্টা সবকিছুই আছে। ৯৬ মিলিয়ন কেজি চা উৎপাদনের রেকর্ড করেছি। হয়তো এ বছর কিংবা আগামী বছর এটা ১০০ ছাড়িয়ে যাবে। বছর বছর হয়তো পাঁচ শতাংশ বা সাত শতাংশ উৎপাদন আমরা বাড়াতে পারবো। ধারণা দেওয়া হয়েছে আমরা হয়তো একসময় চাহিদা মিটিয়ে ১১ মিলিয়ন কেজি চা-রপ্তানি করতে পারবো। আমার ধারণা সেটা কঠিন হবে। কারণ আমাদের দেশের মানুষতো চা খেতে শুরু করেছে। এখন সাধারণ মানুষ চা খাচ্ছে। যে মানুষ কোনোদিন চা খেতেন না সেও এখন তিন কাপ চা খান। যে মানুষ বাড়ির বাইরে নাস্তা করতেন না তিনি এখন সকালে বাড়ির বাইরে মোড়ের দোকানে নাস্তা করে। এর সঙ্গে চা-পান করেন। টেলিভিশন দেখার সময়ও চা-পান করেন অনেকে। এর মাধ্যমে এটাও বোঝা যায় তৃণমূলের মানুষের অর্থনৈতিক পরিবর্তন হয়েছে।টিপু মুনশি বলেন, সাধারণ মানুষ চা খাওয়ার ব্যয় বহন করতে পারছে। ভাত, রুটি খাওয়ার অভ্যাস তো মানুষের আগেই ছিল। এখন চা খাওয়ার অভ্যাসটা গড়ে উঠেছে। তারা এখন তিন টাকা বা পাঁচ টাকা বা ১০ টাকায় চা খাচ্ছে। ফলে চায়ের ব্যবহারের পরিধি বাড়ছে। তাই সময় যত যাবে চা উৎপাদন বাড়বে, আবার ভোক্তাও বাড়বে। তাহলে রপ্তানি করবো কি করে। তবে আমাদের চা রপ্তানির চেষ্টা করতে হবে। এখানে শুধু টাকা ফ্যাক্ট না, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে আমাদের চা গেলে আমাদের জন্য গর্বের হবে। আমাদের দেশের পরিচিতি বাড়বে ও ব্র্যান্ডিং হবে। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ বলেন, আমি জন্ম থেকেই চায়ের সঙ্গে আছি। বাবার চা বাগান ছিল, এরপর চা খাতে চাকরি, এছাড়াও সবসময় চায়ের সঙ্গেই আছি, কখনো বিচ্ছিন্ন হইনি। চা-শিল্প নিয়ে সুদূর প্রসারী চিন্তা করেছিলেন বঙ্গবন্ধু। মাঝে কিছুদিন গ্যাপ ছিল, বঙ্গবন্ধু কন্যা ক্ষমতায় আসার পর আবার নতুন করে গতি পেয়েছে চা খাতে। চা খাত নিয়ে নতুন উদ্যোগ নিতে হবে, নতুনভাবে চিন্তা ভাবনা করতে হবে। চা শিল্পের সঙ্গে যুক্ত সবার প্রচেষ্টায় এ শিল্প আরো প্রসারিত হবে। এজন্য বাংলাদেশ চা বোর্ডকে গতিশীল করতে হবে বলে মনে করেন তিনি।বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ চা-বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল মো. জহিরুল ইসলাম। এছাড়া অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান এম শাহ আলম, টি ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের চেয়ারম্যান শাহ মঈনুদ্দীন হাসান ও এফবিসিসিআই এর সভাপতি মো. জসিম উদ্দীন।অনুষ্ঠানে বঙ্গবন্ধু ও চা শিল্পের উন্নয়ন শীর্ষক একটি ডকুমেন্টারি এবং বঙ্গবন্ধু ও চা শিল্প শিরোনামে একটি লেজার-শো প্রদর্শন করা হয়। এছাড়া ইন্টারন্যাশনাল টি কমিটির চেয়ারম্যান, শ্রীলঙ্কা টি বোর্ডের চেয়ারম্যান, চাইনিজ টি রিসার্স ইনস্টিটিউটের পরিচালক, টি অ্যাসোসিয়েশন অব ইউএসএ-এর সভাপতির শুভেচ্ছা ভিডিও বার্তা প্রচার করা হয়। শেষে বাণিজ্যমন্ত্রীসহ অন্যান্য অতিথিরা চা প্রদর্শনী পরিদর্শন করেন। প্রদর্শনীতে বঙ্গবন্ধু প্যাভেলিয়ন, শ্রীমঙ্গলস্থ টি মিউজিয়ামে রক্ষিত চা শিল্পের দুর্লভ জিনিসপত্র প্রদর্শন, চা-শ্রমিকদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি উপস্থাপন করা হয়। এছাড়া বাংলাদেশ চা বোর্ডের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বিটিআরআই কর্তৃক বিভিন্ন ভ্যালু অ্যাডেড টি প্রদর্শন করা হয়। দেশের শীর্ষ স্থানীয় চা-কোম্পানিগুলো ও তাদের চায়ের ব্র্যান্ড প্রদর্শনীতে উপস্থাপন করে।প্রসঙ্গত, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৫৭ সালের ৪ জুন থেকে ১৯৫৮ সালের ২৩ অক্টোবর পর্যন্ত চা বোর্ডের চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান-এর জন্মশতবার্ষিকীতে চা শিল্পে তার অসামান্য অবদান ও চা বোর্ডের চেয়ারম্যান হিসেবে তার যোগদানের তারিখকে স্মরণীয় করে রাখতে এবং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে চা শিল্পের ভূমিকা বিবেচনায় গত বছরের ২০ জুলাই মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৪ জুনকে ‘জাতীয় চা দিবস’ ঘোষণা করা হয়েছে।