মোস্তাকিম ফারুকী : করোনা সংকটে জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে প্রায় ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেট পেশ করতে যাচ্ছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। আজ বেলা ৩টায় অর্থমন্ত্রী জাতীয় সংসদে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করবেন। এটি হবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদের তৃতীয় বাজেট।
গতকাল বুধবার অর্থমন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামী বাজেটে প্রাধিকার পাবে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। ‘জীবন-জীবিকায় প্রাধান্য দিয়ে সুদৃঢ় আগামীর পথে বাংলাদেশ’ শিরোনামে এবারের বাজেট প্রস্তুত হয়েছে। সরকারের অতীতের অর্জন এবং উদ্ভূত বর্তমান পরিস্থিতির সমন্বয়ে এবারের বাজেটে সঙ্গত কারণেই সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য খাতে।
পাশাপাশি কোভিড-১৯ মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত প্রণোদনা প্রাকেজসমূহের বাস্তবায়ন, কৃষি খাত, খাদ্য উৎপাদন ও ব্যবস্থাপনাকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। অর্থবছরের পুরো সময়জুড়েই থাকবে সরকারের নানা ধরনের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, বাড়ানো হবে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতা।
বাজেটকে অধিকতর অংশগ্রহণমূলক করার লক্ষ্যে অর্থ বিভাগের ওয়েবসাইট িি.িসড়ভ.মড়া.নফ-এ বাজেটের সব তথ্যাদি ও গুরুত্বপূর্ণ দলিল যেকোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান পাঠ ও ডাউনলোড করতে পারবে এবং দেশ বা বিদেশ থেকে ওই ওয়েবসাইটের মাধ্যমে ফিডব্যাক ফরম পূরণ করে বাজেট সম্পর্কে মতামত ও সুপারিশ পাঠানো যাবে। প্রাপ্ত সব মতামত ও সুপারিশ বিবেচনা করা হবে। জাতীয় সংসদ কর্তৃক বাজেট অনুমোদনের সময়ে ও পরে তা কার্যকর করা হবে।
দেশের ইতিহাসে এটা বড় ঘাটতির বাজেট। মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) তুলনায় ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৬ দশমিক ৫ শতাংশের মতো। ছয় লাখ কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করতে যাচ্ছে সরকার। এই ব্যয় মেটানো তথা বাজেট বাস্তবায়নের জন্য দুই লাখ কোটি টাকার বেশি ধার নিতে হবে। করোনাভাইরাসের অভিঘাতে দেশে রাজস্ব আদায় কম হওয়ার কারণেই সরকারকে এ পথে যেতে হচ্ছে বলে জানান বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে যুক্ত কর্মকর্তারা।
২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার এডিপি
এবারের বাজেটে ২ লাখ ২৫ হাজার ৩২৪ কোটি টাকার বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) রাখা হয়েছে। এছাড়াও স্বায়ত্তশাসিত সংস্থা বা কর্পোরেশনের প্রায় ১১ হাজার ৪৬৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকাও অনুমোদন পেয়েছে।
অন্যান্য বছরের মতো এবারও দেশজ সম্পদ, বৈদেশিক অর্থায়ন, সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের মাধ্যমে মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দারিদ্র্য হ্রাস তথা জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের লক্ষ্যে দীর্ঘ ও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা কৌশল এবং লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের জন্য ২০২১-২০২২ অর্থ বছরের এডিপি প্রণয়ন করা হয়েছে।
এডিপিতে দারিদ্র্য বিমোচন, জিডিপির প্রবৃদ্ধি ত্বরান্তিতকরণ, কর্মসংস্থান সৃজন ও মানব সম্পদ উন্নয়ন সংশ্লিষ্ট প্রকল্পসমূহকে অগ্রাধিকার বিবেচনায় রেখে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে কৃষি, শিল্প ও সেবাখাত প্রবৃদ্ধি, বিদ্যুৎ উৎপাদন, আইসিটি শিক্ষার উন্নয়ন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্ষয়ক্ষতি পুনর্বাসন সংক্রান্ত প্রকল্প, সুষম উন্নয়নের লক্ষ্যে এলাকাভিত্তিক প্রকল্প ও সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের ভিত্তিতে (পিপিপি) বাস্তবায়িত নতুন প্রকল্পসমূহকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির সফল বাস্তবায়ন দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য সেবার মানোন্নয়ন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, দারিদ্র্য বিমোচন তথা দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
নতুন এডিপিতে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে পরিবহন ও যোগাযোগ খাতে ৬১ হাজার ৬৩১ কোটি টাকা যা মোট এডিপির ২৭ দশমিক ৪৭ শতাংশ। এরপরেই বিদ্যুৎখাতে গুরুত্ব দিয়ে ৪৫ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২৩ হাজার ৪২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে গৃহায়ণ খাতে। নতুন এডিপিতে বরাদ্দ দেওয়ার ক্ষেত্রে চতুর্থ স্থানে শিক্ষা ২৩ হাজার ৩২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, যা মোট এডিপির ১০ দশমিক ৪০ শতাংশ।
এছাড়া স্থানীয় সরকার বিভাগে ১৪ হাজার ২৭৪, পরিবেশ ও পানি উন্নয়নে ৮ হাজার ৪৭০, কৃষিতে ৭ হাজার ৬৪৬,শিল্পখাতে ৪ হাজার ৬৪৩, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাতে ৩ হাজার ২০৪ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। পাবলিক অর্ডার অ্যান্ড সেফটি খাতে ৩ হাজার ২০৪, সাধারণ সেবা খাতে ২ হাজার ৯২৩, সাংস্কৃতিক খাতে ২ হাজার ১৯০, সামাজিক নিরাপত্তা খাতে ১ হাজার ৬৪৮ কোটি এবং ডিফেন্স খাতে ৮৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ ১৭ হাজার ৩০২ কোটি
করোনায় সংকট মোকাবিলায় উন্নয়ন বাজেট বা বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে স্বাস্থ্য খাত। এ খাতে ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট বরাদ্দ বাড়ছে ৩২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, যা টাকার অংকে ১৭ হাজার ৩০২ কোটি টাকা।
অন্যদিকে ২০২০-২১ অর্থবছরের এডিপিতে মোট বরাদ্দ ছিল ১৩ হাজার ৩২ কোটি টাকা। ১৫টি খাতে মোট এডিপি ব্যয় হবে। খাতওয়ারি স্বাস্থ্য খাত বরাদ্দের দিক থেকে পঞ্চম নম্বরে উঠে এসেছে।