সাভার প্রতিনিধি : ভোর থেকেই চলছিল মুষলধারে বৃষ্টি। বৃষ্টি থেমে গেছে কিন্তু এর পরবর্তী সময়ে বৃষ্টির পানি বের হতে না পেরে শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ায় জলাবদ্ধতা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।রাজধানী প্রবেশের গুরুত্বপূর্ণ টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কসহ এ সড়কের সঙ্গে সংযুক্ত বিভিন্ন শাখা সড়ক ও অধিকাংশ দোকান, বাজার এবং অলিগলিতে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। ডুবে গেছে আশুলিয়ার বাইপাইল, জামগড়া, পলাশবাড়ি, ভাদাইল, ইউনিক, ইপিজেড, ছয়তলা ও শিমুলতলা এলাকা। মঙ্গলবার (০১ জুন) সকাল ৯টার দিকে আশুলিয়ার টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক দিয়ে নরশিংহপুর থেকে বাইপাইল ত্রীমোড় যাওয়ার সময় ছয়তলা থেকে বাইপাইল পর্যন্ত পানিতে ডুবে যাওয়ার এমন চিত্র দেখা গেছে। পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় বৃষ্টি হলেই এই চিত্র দেখা মেলে এ সড়কটির বিভিন্নস্থানে।সড়কটিতে দেখা গেছে, পোশাক শ্রমিকরা খুব কষ্ট করে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। তাদের প্রায় কোমড় পর্যন্ত পানি হয়ে গেছে। আর পরিবহনগুলোর চাকা পানিতে ডুবে যাওয়ায় খুব ধীর গতিতে চলছে। সৃষ্টি হয়েছে প্রায় আড়াই কিলোমিটার রাস্তায় ব্যাপক যানজট। শুধু তাই নয় বৃষ্টিতে রাস্তাঘাটে, অলিগলিতে পানি জমে গেছে। তৈরি হয়েছে ভোগান্তির।সড়কটির পানিতে হেটে চলা শ্রমিকদের ছবি তুলতে গেলে ক্ষোভে তারা বলে উঠেন, রাস্তা না ঠিক করে শুধু ছবি তুলতে আসেন। আমাদের এই কষ্ট কেউ দেখার নেই। আমাদের বাসায় পানি উঠেছে সেখানে গিয়ে ছবি তোলেন।নারী পোশাক শ্রমিক মেহেনাজ। তিনি জামগড়ার একটি কারখানায় কাজ করেন। প্রতিদিন সকালে কারখানায় যান ও সন্ধ্যায় বাসায় ফিরেন। তিনি বলেন, একটু বৃষ্টি হলেই এই রাস্তায় পানি উঠে। আর এই ময়লা পনির ভিতর দিয়েই আমাদের সকাল-সন্ধ্যায় যাতায়াত করতে হয়। অফিস যাওয়ার সময় আমাদের কাপড় ভিজে যায় আর এই ভেজা কাপড় নিয়েই আমাদের কাজ করতে হয়। কোনো কোনো সময় অসুস্থ হয়ে পড়ি আমরা।লাব্বাইক বাসের চালক বাবু বলেন, একটু বৃষ্টিতেই এই রাস্তায় পানি উঠে যায়। এর কারণে রাস্তার খানাখন্দ আমরা দেখতে পাই না। তাছাড়া গতি বাড়িয়ে গাড়ি চালালে হেঁটে যাওয়া পথচারীদের শরীর ভিজে যাওয়ার সম্ভবনা থাকে। তাই গাড়ি ধীর গতিতে চালাতে হয়। ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়।জামগড়ায় রাস্তা পাশে টং চায়রে দোকান রহমতের। তার দোকানের নিচের অংশে পানি উঠে গেছে। তিনি বলেন, অল্প বৃষ্টিতেই দোকানের সামনে পর্যন্ত পানি চলে আসে। কখনো কখনো দোকানের ভেতরে পানি উঠে যেমন আজ উঠেছে। আমি আমাদের রাস্তা কর্তৃপক্ষকে এই বিষয়টি দেখার অনুরোধ জানাচ্ছি।এই সড়কে পানি নিষ্কাশনের জন্য ঈদের আগে থেকে কাজ করছে সড়ক ও জনপথের এসএস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক মো. লায়ন ইমামের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাকে পাওয়া যায়নি।সড়ক ও জনপথের ঢাকা বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী বদিউজ্জামান বলেন, আমরা ঈদের আগে থেকে কাজ করছি। গতকাল রাত তিনটা থেকে আমাদের শ্রমিকরা এখন পর্যন্ত কাজ করছেন। তিনি আরও বলেন, এক একটি কারখানা ঘণ্টায় ১০০ লিটার পর্যন্ত পানি ছাড়ে। সেই পানি সরাসরি সড়কে এসে পড়ে। আমাদের সড়কের পানি নির্গমনের জন্য যে পথ বের করা হয়েছিল সেই পথ দিয়ে সড়কের পানি সুন্দর করে যেতে পারবে। কিন্তু যখন এলাকা ও কারখানার পানি সড়কের পানির সঙ্গে মিশে যায় তখন আর সেই পথ দিয়ে পানি যেতে দেরি হয় এবং সড়কে জলবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। তবুও আমরা চেষ্টা করছি যেন সড়ক থেকে পানি নামিয়ে ফেলা যায়। বাইপাইল ট্রাফিক পুলিশের ইন্সপেক্টর খসরু পারভেজ বলেন, রাতে বৃষ্টির পর সকালে অনেক বৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যস্ততম এই সড়কটির কিছু জায়গা পানিতে তলিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও কোমড় সমান পানি জমেছে। এতে করে গাড়িগুলো একেবারেই ধীর গতিতে চলছে। রাস্তার দুই পাশে ড্রেন না থাকার কারণে মাঝে মধ্যেই এই সমস্যার সৃষ্টি হয়। যানজট নিরসনে আমাদের ট্রাফিক পুলিশ অনেক কষ্ট করছে। এখানে পানি জমার বিষয়টি আমরা লিখিতভাবে সওজকে জানিয়েছি। আমাদের এখানে ড্রেনেজ সিস্টেম করার দরকার এটা তাদের জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি।