এলএসডি মাদক: উচ্চবিত্ত-শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে বাজার তৈরির চেষ্টা

এলএসডি মাদক: উচ্চবিত্ত-শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে বাজার তৈরির চেষ্টা
নিজস্ব প্রতিবেদক : ‘মরণ নেশা ইয়াবা থেকেও অনেক বেশি ভয়াবহ আগ্রাশন রয়েছে লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাই-ইথ্যালামাইডের (এলএসডি) নতুন এই মাদকে। পশ্চিমা বিশ্বে এই মাদক প্রচলনের কথা শোনা গেলেও বাংলাদেশে এটি একেবারেই নতুন।এলএসডি মাদক সেবনে কল্পনাশক্তি অনেকাংশে বেড়ে যায়। এর ফলে মানুষের মস্তিষ্কের অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রচণ্ড পরিমানে চাপ পড়ে এবং ভেঙে পড়ে’।পশ্চিমা বিশ্বের মত বাংলাদেশও এই মাদকের বাজার তৈরির চেষ্টা চালিয়ে আসছে কুচক্রি কয়েকটি গ্রুপ।  সম্প্রতি ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগ ও গোয়েন্দা (রমনা) বিভাগ দুটি অভিযান চালিয়ে এলএসডি মাদকের বাজার তৈরি, বিক্রি ও সেবসের দায়ের ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে। তবে, গ্রেফতার হওয়া সবাই বিভিন্ন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।মরণ নেশা ইয়াবা ট্যাবলেটের পর দেশে ‘খাট’ বা ‘মিরা’ নামের এই উদ্ভিদটি নিউ সাইকোট্রফিক সাবস্টেন্সেস বা এনপিএস মাদকের উদভাবন ঘটেছিলো। যা ইথুপিয়া দেশ থেকে বাংলাদেশে বাজর তৈরির উদ্দেশ্যে এসেছিলো একটি চক্র। এরপর আবির্ভাব হয়েছিলো আইস বা ক্রিস্টাল মেথের মাদক। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তৎপরতা ও বিভিন্ন অভিযানে মূলহোতাসহ চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতারের মাধ্যমে আইনের আওতায় আনায় কুচক্রি মাদক কারবারিরা ভয়াবহ এই দুটি মাদকের বাজার তৈরি করতে পারেনি।সম্প্রতি লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাই-ইথ্যালামাইডের (এলএসডি) নতুন এই মাদকে আবির্ভাব ঘটে।রোববার (৩০ মে) রাজধানীর শাহজাহানপুর, রামপুরা, বাড্ডা ও ভাটারা এলাকায় অভিযান চালিয়ে এলএসডি বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত এমন একটি গ্রুপের পাঁচ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির মতিঝিল বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে দুই হাজার মাইক্রোগ্রাম এলএসডি, আইস ও গাঁজা উদ্ধার করা হয়।গ্রেফতার কারবারিরা হলেন- সাইফুল ইসলাম সাইফ (২০), এসএম মনওয়ার আকিব (২০), নাজমুস সাকিব (২০), নাজমুল ইসলাম (২৪) ও বিএম সিরাজুস সালেকীন (২৪)।এর আগে গত ২৬ মে (বুধবার) রাতে রাজধানীর ধানমন্ডি ও লালমাটিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে এলএসডিসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে ডিবি রমনা বিভাগ। এ সময় তাদের কাছ থেকে ২০০ ব্লট এলএসডি উদ্ধার করা হয়। গ্রেফতার কারবারিরা হলেন- সাদমান সাকিব ওরফে রূপল (২৫), আসহাব ওয়াদুদ ওরফে সূর্য (২২) ও আদিব আশরাফ (২৩)। যারা প্রত্যেকেই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তদন্ত সংশ্লিষ্টরা বলছে, বাংলাদেশে এলএসডি মাদকের বাজার তৈরি করতে অন্তত ১৫টি গ্রুপ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা সামাজিক যোগযোগমাধ্যম ফেসবুকে গ্রুপ খুলে এই মাদক বিক্রির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। শুরুতে এসব গ্রুপের সদস্যরা নিজেরা সেবনের পাশাপাশি বন্ধুদেরকেও এই মাদক সেবনে উদ্বুদ্ধ করছে।  তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানায়, নতুন এই মাদক এলএসডি বাংলাদেশে খুব বেশি পরিচিত নয়। তবে, এই মাদকটি অধিক দামি হওয়ায় এখনও উচ্চবিত্তদের নাগালে রয়েছে।ধারণা করা যাচ্ছে, এলএসডি দামি মাদক হওয়ায় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বা কলেজ পড়ুয়াদের টার্গেট করে এর বাজার তৈরির চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে গ্রুপগুলোর সদস্যরা। তদন্তেই একটি ফেসবুক গ্রুপ পর্যালোচনা করে সেখানে প্রায় এক হাজারের মত সদস্য সংখ্যা থাকতে দেখা গেছে।ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) আ. আহাদ  বলেন, আটক আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পারি, এই মাদকের বাজার তৈরি করতে ১৪-১৫টি গ্রুপ দেশে সক্রিয় রয়েছে। বাকি গ্রুপগুলোর সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চলছে। আশা করি, সব গ্রুপগুলোকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।
এলএসডি আসলে কী?
লাইসার্জিক অ্যাসিড ডাই-ইথ্যালামাইড বা এলএসডি এক ধরনের তরল। সাধারণত ব্লটিং পেপারের ওপরে এই তরল মাদক ফেলে সেই কাগজ শুঁকে নেশা করেন মাদকাসক্তরা। এলএসডি মাখা কাগজের এক-একটি ছোট টুকরো বা ব্লটিং পেপারের দাম কয়েক হাজার টাকা। ডিবির হাতে গ্রেফতাররা জানায়, প্রতিটি ব্লটিং পেপার তিন থেকে ৫ হাজার টাকায় বিক্রি হতো।
১৯৩৮ সালে সুইস রসায়নবিদ আলবার্ট হফম্যান প্যারাসাইটিক ফাঙ্গাস নিয়ে কাজ করতে গিয়ে এলএসডি আবিষ্কার করেন। আবিষ্কারের প্রথমদিকে এলএসডি ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হতো। তবে, ওষুধটি মস্তিষ্কের ক্ষতি করে বলে পরে এটিকে নিষিদ্ধ করা হয়।
এই মাদক এতটাই শক্তিশালী যে ডোজগুলো মাইক্রোগ্রাম পরিমাণে নিতে হয়। এটি গন্ধহীন, বর্ণহীন এবং কিছুটা তেতো স্বাদের হয়। আমেরিকার ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অন ড্রাগ এবিউজের (এনআইডিএ) তথ্যানুযায়ী, এলএসডি আমেরিকায় নিষিদ্ধ। এর কোনো মেডিক্যাল ব্যবহার নেই, অর্থাৎ নেশাদ্রব্য হিসেবেই এটি তৈরি হয়।

এলএসডির প্রতিক্রিয়া

বিজ্ঞানীরা জানান, সাধারণত এলএসডি নেওয়ার পর একজন মানুষ চোখ বন্ধ করেও দেখতে পায়। তার দেখা এসব দৃশ্য সবসময় বাইরের পৃথিবী বা স্মৃতি থেকে আসে না বরং তাদের কল্পনাশক্তি অনেক বেড়ে যায়। এলএসডির প্রভাবে মস্তিষ্কের অন্যান্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। এলএসডি নেওয়ার পর প্রকৃতি ও বাইরের জগতের সঙ্গে এমন এক সম্পর্ক অনুভূত হয় যাকে অনেকটা ধর্মীয় বা আধ্যাত্মিক রূপ দেওয়া হয়ে থাকে। এই মাদকের প্রভাব কেটে গেলেও ওই রকম অনুভূতি থেকে যেতে পারে। এলএসডি ব্যবহার করলে মানুষের স্মৃতির ভাণ্ডার খুলে যায়। শোনা যায়, নেশার চূড়ান্ত পর্যায়ে কেউ কেউ মাতৃগর্ভের স্মৃতিও মনে করতে পারেন। তবে, সেসব স্মৃতির ভার অধিকাংশ মানুষই সহ্য করতে পারেন না। ফলে মস্তিষ্ক বিকৃতির প্রবল সম্ভাবনা থাকে। এছাড়া অধিকাংশ মাদকগ্রহণকারীই স্মৃতির চূড়ান্ত স্তরে প্রবেশের আগে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন। তবে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, হ্যালুসিনেশনই এসব অনুভূতির মূল কারণ।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন