আন্তর্জাতিক ডেস্ক : করোনা ভাইরাস মহামারিতে থমকে দাঁড়ানো আমেরিকাকে সচল করার অভিপ্রায়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন শুক্রবার (২৮ মে) ছয় ট্রিলিয়ন ডলার বাজেটের (এ বছরের ১ অক্টোবর থেকে সামনের বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর বাজেট বর্ষ ২০২২) প্রস্তাব উপস্থাপন করেছেন। বাজেট প্রস্তাবে খেটে খাওয়া মানুষ ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের আর্থিক স্বাচ্ছন্দ ফিরিয়ে দিতে বিত্তশালীদের ট্যাক্স বাড়ানোর প্রস্তাব রয়েছে।এটি কংগ্রেসের অনুমোদন পেলে ৩.৬ ট্রিলিয়ন ডলার ট্যাক্স খাতে আয় করা সম্ভব হবে বলে বিশ্লেষকরা উল্লেখ করেছেন। প্রস্তাবিত এ বাজেটে গত বছরের চেয়ে বিভিন্ন খাতে ব্যয়ের পরিমাণ কিছুটা কমানো হয়েছে।করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত আমেরিকানদের দিনাতিপাতের জন্য নগদ অর্থ (স্টিমুলাস চেক) ও সাপ্তাহিক বেকার ভাতা দেওয়া ছাড়াও ব্যবসা-বাণিজ্য সেক্টরকে ঘুরে দাঁড়াতেও জরুরিভাবে অর্থ (নামমাত্র সুদ) সহায়তা করা হয়েছে গত বছর এবং স্থানীয় সরকারের কোনো কোনো সেক্টরে এখনো সে সহায়তা অব্যাহত রয়েছে। এর ফলে ফেডারেল তহবিল ব্যয়ের ক্ষেত্রে নতুন উচ্চতা তৈরি হয়েছে। যা ২০৩১ সালের মধ্যে ৮.২ ট্রিলিয়ন ডলারে উঠবে বলে অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন। একইসঙ্গে সামনের দশকে যুক্তরাষ্ট্রের বাজেট ঘাটতির পরিমাণ বেড়ে ১.৩ ট্রিলিয়ন ডলারে উঠবে। বাইডেনের প্রস্তাবে আমেরিকানদের দৈনন্দিন জীবনমানের উন্নয়ন ঘটার পাশাপাশি দু’বছর মেয়াদি প্রি-কিন্ডারগার্টেন ও কমিউনিটি কলেজের চার বছরের কোর্সের দু’বছর ফ্রি দেওয়া হবে। শিশু পরিচর্যার ব্যয় ভারও কমবে এবং শ্রমজীবীরা বিশেষ বিশেষ কারণে সবেতন ছুটি পাবেন। সড়ক-মহাসড়কে ইলেক্ট্রিক কারের সংখ্যা বাড়বে পরিবেশ দুষণমুক্ত রাখার অঙ্গিকারের পরিপূরক হিসেবে। বাইডেনের উচ্চাভিলাষী এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যে ফেডারেল রিজার্ভ তহবিল থেকে মোটা অংকের অর্থ ধার নিতে হবে। এর বিকল্প নেই করোনা মহামারিতে নাজুক অবস্থায় নিপতিত আর্থিক কর্মকাণ্ড চাঙ্গা করতে এমন অভিমত পোষণ করেছেন শীর্ষস্থানীয় অর্থনীতিবিদরা।বাইডেনের প্রস্তাব অনুযায়ী, সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত ও আর্থিক অসমতা দূর করতে চলতি সালের শেষার্ধেই অধিক বেতনের এবং অধিক আয়ের ব্যবসায়ীদের ট্যাক্সের পরিমাণ ৩৭ থেকে ৩৯.৬ শতাংশ হবে।উচ্চ আয়ের কর্মকর্তা ও বিত্তশালীদের ট্যাক্সের পরিমাণ ডোনাল্ড ট্রাম্প কমিয়ে দিয়েছিলেন। এর ফলে জো বাইডেনের প্রতি ধনীরা ইতোমধ্যেই অসন্তোষের তীর ছুড়ে দিয়েছেন। ভেতরে ভেতরে তারা জোট বাধছেন পুনরায় ট্রাম্পকে ক্ষমতায় বসাতে। বাইডেনের প্রস্তাব কংগ্রেসের অনুমোদন পেলে স্বামী-স্ত্রী মিলে বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৯ হাজার ৩০০ ডলারের অধিক হলেই ৩৯.৬ শতাংশ হারে ট্যাক্স দিতে হবে বছর শেষে। আর একক (অবিবাহিত) আয় যদি ৪ লাখ ৫২ হাজার ৭০০ ডলারের অধিক হয়, তাহলেও ওই হারে ট্যাক্স গুনতে হবে বছর শেষে। একইভাবে কল-কারখানার ট্যাক্সও ২১ থেকে বেড়ে ২৮ শতাংশ হবে। ট্যাক্স বাড়ানোর এ প্রস্তাবকে আধুনিক যুগে সর্ববৃহৎ ঘটনা বলে মনে করা হচ্ছে। তবে অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে বিপুল অর্থ সংগ্রহে এ পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই বলেও অর্থনীতিবিদ ও রাজনীতিকরা মন্তব্য করেছেন।