মামলার সূত্রমতে, বাংলাদেশের অখণ্ডতা, সংহতি, জন নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিন্যাস, জনসাধারণের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টির মাধ্যমে প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী ও সম্পত্তির ক্ষতি সাধনের উদ্দেশ্যে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি/ব্যক্তিরা ও জঙ্গিগোষ্ঠী এ বোমা ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে রাখে।
এর আগে এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার জায়েদুল আলম বলেন, পুলিশকে লক্ষ্য করে বোমা রাখা হয়েছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় নাশকতা সৃষ্টি করতে পারলে আলোচিত হবে সেই পরিকল্পনা থেকেই দুষ্কৃতকারী বা জঙ্গিগোষ্ঠী বোমাটি সেখানে রেখে থাকতে পারে। ওই দুষ্কৃতকারী বা জঙ্গিগোষ্ঠীকে শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।তিনি আরো বলেন, কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে সেখানে শক্তিশালী বোমাটি রেখেছিল, তা এখনো নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে।
তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে পুলিশ সুপার বলেন, ইতোমধ্যে মহাসড়কের আশপাশের সিসি ক্যামেরার কিছু ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা হচ্ছে। ডিএমপির বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিটও ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করেছে, তারাও বিষয়টি পর্যালোচনা করছে। জেলা পুলিশসহ বিভিন্ন সংস্থা এ ঘটনায় কাজ করছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আট লেন ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকায় বাস-বের অংশে (গাড়ি থামার সড়ক) দুটি ট্রাফিক পুলিশ বক্স রয়েছে। একটি ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শকের এবং অপরটি ট্রাফিক সার্জেন্ট ও ট্রাফিক পুলিশের সদস্যদের বসার জন্য। সোমবার বিকেলে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্টদের বক্সের সামনে প্লাস্টিকের ব্যাগে বোমাটি রাখা ছিল।
আট লেন মহাসড়কের অংশের ঢাকা ও চট্টগ্রামমুখী খুঁটিতে দুই দিকে দুটি সিসি ক্যামেরা লাগানো দেখা গেছে। তবে যে অংশে বোমা পাওয়া গেছে, সেই অংশে কোনো ক্যামেরা লাগানো নেই। ফলে কে বা কারা সেখানে বোমাটি নিয়ে রেখেছে, তা নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ।
সিদ্ধিরগঞ্জে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সাইনবোর্ড এলাকায় সোমবার (১৭ মে) বিকেল ৪টার দিকে ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে ব্যাগের ভেতর বোমাটি দেখতে পান ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট আসিফ হোসেন। পরে তিনি বিষয়টি জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান।খবর পেয়ে র্যাব ও পুলিশের সদস্যরা সাইনবোর্ডের ট্রাফিক পুলিশ বক্স ঘেরাও করে রাখে।
জনসাধারণকে ঘটনাস্থল এড়িয়ে চলাচলের নির্দেশ দেন। খবর দেওয়া হয় পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের (সিটিটিসি) বোমা ডিস্পোজাল ইউনিটকে।সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে বোমা ডিস্পোজাল ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। পরে রোবট পরীক্ষা করে তারা বস্তুটিকে বোমা বলে নিশ্চিত করেন। সন্ধ্যা ৭টার দিকে বোমাটির বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ধ্বংস করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, বোমাটি বিস্ফোরণের সময় ৩০ মিটারের ভেতরে কোনো স্থাপনা বা মানুষ থাকলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও প্রাণহানি ঘটতে পারত।এ বিষয়ে ট্রাফিক পুলিশের সার্জেন্ট মো. আসিফ হোসেন বলেন, সেখানে দায়িত্ব পালনকালে এক ব্যক্তি প্লাস্টিকের ব্যাগ পড়ে থাকার বিষয়টি জানান। তিনি কাছে গিয়ে দেখতে পান, ব্যাগের ওপর একটি ঝুটের কাপড় রাখা। ব্যাগের ওপর থেকে কাপড় সরাতেই সেখানে দেখতে পান, ম্যাচ লাইটারে গ্যাস ভরার মতো কয়েকটি বোতলের সঙ্গে স্কচটেপ মোড়ানো এবং তার প্যাঁচানো। তিনি বোমাসদৃশ বস্তু দেখতে পেয়ে ট্রাফিক বক্সের ভেতর থেকে সবাইকে সরিয়ে দেন এবং বিষয়টি পুলিশ কন্ট্রোল রুমকে জানান।