ঘরোয়া আয়োজনেই ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি রাজধানীবাসীর

ঘরোয়া আয়োজনেই ঈদ উদযাপনের প্রস্তুতি রাজধানীবাসীর
ঢাকা: ঈদুল ফিতরের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে যারা ঢাকা ছেড়ে গ্রামের বাড়ি যেতে পারেননি তারা প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজধানীতেই ঈদ উদযাপনের। ঘরোয়া আয়োজনের মাধ্যমেই ঈদ উদযাপন করবেন প্রায় ৫০ লক্ষাধিক রাজধানীবাসী। কেউ কেউ আবার ঈদের দিনেও নিয়োজিত থাকবেন পেশাগত দায়িত্ব পালনে। ঢাকা প্রায় দেড় কোটি মানুষের আবাসস্থল হলেও এদের অধিকাংশই স্থায়ীভাবে বাস করেন না এ মেগাসিটিতে। জীবন ও জীবিকার তাগিদে অনেকেই আসেন ঢাকা শহরে। আর তাদের কাছে ঈদের মতো ছুটির অবকাশ নাড়ির টানে বাড়িতে থাকা প্রিয়জনদের সান্নিধ্য লাভের অজুহাত মাত্র।

একটি গবেষণা মতে, প্রতি ঈদে ৫০ লাখেরও বেশি মানুষ রাজধানী ছেড়ে অন্য জেলাগুলোতে চলে যান প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের জন্য। এবারের করোনা পরিস্থিতিতেও ৬০ লাখ মানুষ রাজধানী ছেড়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। আর বাকিরা প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাজধানীতেই ঈদুল ফিতর উদযাপনের।

পেশায় ব্যবসায়ী ও রাজধানীর পান্থপথে বসবাসকারি মোজাহিদুল ইসলাম রিপন বলেন, আমাদের পৈতৃক নিবাস বরিশাল তবে ভাই-বোনসহ আমরা এখন ঢাকাতেই স্থায়ীভাবে বাস করি। ঈদে বা অন্য কোনো উপলক্ষে ছুটি পেলে গ্রামের বাড়িতে যাই আত্মীয়-স্বজনদের কাছে। তবে এবার আর যাওয়া হচ্ছে না। ঢাকার বাসাতেই ঈদ পালন করব। খুব বেশি হলে বোনদের বাসায় যাবো আর নয়তো ওদের বাসায় দাওয়াত দেব।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফজলুর রহমান বলেন, মাস খানেক বিয়ে করে নতুন সংসার জীবন শুরু করেছি। ইচ্ছে ছিল এবারের ঈদের প্রথম দিন গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে কাটিয়ে স্ত্রীকে নিয়ে কোথাও থেকে ঘুরে আসব। আমরা বেসরকারি চাকরি করি, সহজে ছুটি পাই না। এমন ঈদেই যা একটু ছুটি পাই। কিন্তু অবস্থা যা হয়েছে তাতে ইট-সিমেন্টের এ খাঁচাতেই টোনাটুনির প্রথম ঈদ উদযাপন হবে বলে মনে হচ্ছে।

রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোও বন্ধ থাকায় বাসায় বসেই ঈদ আয়োজনের অলস প্রস্তুতি নিচ্ছেন মিরপুর এলাকার বাসিন্দা ও গৃহিণী নায়েলা ইসলাম। তিনি বলেন, ছুটির দিন এলে বাচ্চাদের নিয়ে একটু বের হই। কোনো কিডস জোন বা সিনেপ্লেক্সে মুভি দেখতে যাই। এবার তো সেগুলোও বন্ধ। তাই ঘরেই থাকতে হবে। ঢাকায় তেমন কোনো নিকটাত্মীয় থাকে না যাদের সঙ্গে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা আছে।

তবে রান্নাঘরে অনেক গৃহিণীকেই ব্যস্ত সময় পার করতে হতে পারে। বনানী এলাকার বাসিন্দা ও গৃহিণী স্বর্ণা আক্তার বলেন, এবার আউটিংয়ের তেমন কোনো পরিকল্পনা নেই, সুযোগও নেই বলা চলে। তাই কিছু বন্ধু-বান্ধব আর আমার স্বামীর অফিসের সহকর্মীদের ঈদের দিন রাতে বাসায় দাওয়াত দিয়েছি। ঈদের দিন সকাল থেকেই সবকিছু প্রস্তুত করতে ব্যস্ত থাকতে হবে। আগের দিন রাতেই আবার সকালের সেমাই ও অন্যান্য খাবার রান্না করে রাখতে হবে।

ঘরোয়া আয়োজনের বাইরেও অনেকেই আবার রাজধানীতে থাকছেন পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য। ঢাকা মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগে কর্মকর্ত ট্রাফিক সার্জেন্ট ঝোটন শিকদার বলেন, সরকার থেকে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য নির্দেশনা এসেছে নিজ নিজ কর্মস্থল ত্যাগ না করার। সেই আদেশ মেনে আমিও আমার বাড়ি শরিয়তপুর যাচ্ছি না। ঈদের সময়টা সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে পেশাগত দায়িত্বে নিয়োজিত থাকব।

সরকারি চাকরিজীবীদের পাশাপাশি অনেক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও এবারের ঈদে ঢাকাই থাকছেন পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য। এদের মধ্যে গণমাধ্যমকর্মী, ই-কমার্স খাতের কর্মী, টেলিযোগাযোগসহ বিভিন্ন খাতে কর্মরত পেশাজীবীরা আছেন।

দেশীয় ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির লজিস্টিক্স বিভাগের প্রধান জাহিদুল ইসলাম বলেন, রাজধানীসহ বিভিন্ন জেলায় যেখানে আমাদের ফুড ডেলিভারি সেবা কার্যক্রম চালু আছে সেখানে ঈদের সময়েও এ সেবা অব্যাহত থাকবে। এর জন্য প্রায় ছয় হাজার ইভ্যালি হিরো দেশজুড়ে কাজ করবেন, যাদের প্রায় অর্ধেকই ঢাকায় নিজেদের পেশাগত দায়িত্ব পালন করবেন।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

দুর্ঘটনার আশঙ্কায় জনমনে উদ্বগে বীরগঞ্জের সড়কগুলো দাপিয়ে বড়োচ্ছে কিশোর চালকরা

সন্দ্বীপে কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনা উদ্বোধন