কড্ডার মোড় ও নলকা এলাকায় সরেজমিন দেখা যায়, কাঠফাটা রোদ মাথায় নিয়ে শত শত খোলা ট্রাকে হাজার হাজার মানুষ ঘরে ফিরছেন। দুর্ভোগ যেন এদের যাত্রাপথে কোনো প্রভাবই ফেলতে পারেনি।
কোথা থেকে আসছেন, জানতে চাইলে ট্রাকের যাত্রী মনির হোসেন হাসিমুখে চিৎকার করে বলেন, সাভার থেকে। অপর এক ট্রাকে নার্গিস খাতুন নামে এক নারী হাস্যোজ্জল মুখে তার ছবি তুলতে বলেন।
এমন অসংখ্য গার্মেন্টসকর্মীর মুখে ছিল বিজয়ের হাসি। দূরপাল্লার বাস বন্ধ থাকায় হতাশ ছিল তাদের। শেষে ট্রাকে করে হলেও বাড়ি যেতে পারছেন তারা। ঈদে স্বজনদের কাছে যেতে পারছেন, তাতেই শান্তি। তাই তাদের কাছে যাত্রাপথের দুর্ভোগ যেন কিছুই না।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন সাদ্দাম হোসেন। ট্রাকের এ যাত্রী বলেন, আমরা ভাবতেও পারিনি যে এবারের ঈদে বাড়িতে ফিরতে পারব। বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে ঈদ করব-এ চিন্তা করেই রাত ৩টার দিকে জিরানী বাজার থেকে ট্রাকে উঠেছি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নানা দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে-তবুও সান্ত্বনা বাড়ি তো ফিরতে পারছি।
নাটোরের বাসিন্দা রহমত আলী নামে বলেন, বাড়ির কাছাকাছি আসতে পেরেছি-এখন অনেক ভালো লাগছে। ভাড়া কিছুটা বেশি লাগছে। তাতেও সমস্যা নেই। বছরের একটি সময়ে স্বজনদের সঙ্গে এক হতে পারব-এটা যে কত আনন্দের, তা বলে বোঝানো যাবে না।
ঘরে ফেরা যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ট্রাকে ঢাকা থেকে সিরাজগঞ্জ ৫শ’ থেকে ৭শ’ টাকা, পাবনা, নাটোর ও বগুড়া ৬শ’ থেকে ৮শ’ টাকা পর্যন্ত ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। ঢাকার সাভার ও গাজীপুরে কালিয়াকৈরে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়েছে। গরমের পাশাপাশি যানজট যাত্রীদের একেবারে নাকাল করে ফেলেছে। যানজটের ফলে দুই ঘণ্টার রাস্তা ছয়/সাত ঘণ্টায় আসতে হয়েছে। এ কারণে যাত্রীদের কষ্টের মাত্রা আরও বেড়েছে।
বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোসাদ্দেক হোসেন বলেন, মহাসড়কে ঘরমুখো মানুষের ঢল নেমেছে। গাড়ির চাপ ধীরে ধীরে বাড়ছে। প্রচুর যাত্রী ট্রাক, মিনিট্রাকে আসছেন। বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপাড়ে যানজট থাকলেও পশ্চিমপাড়ে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের (বগুড়া অঞ্চল) পুলিশ সুপার মো. শামছুল আলম বলেন, মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু সেতু পশ্চিম মহাসড়ক দিয়ে ৫২ হাজার যানবাহন পার হয়েছে। আজও প্রচুর গাড়ির চাপ রয়েছে। তবে কোথাও কোনো যানজট নেই। ঢাকা থেকে কিছু কিছু বাস আসছে। ঈদের আগ মুহূর্তে সেগুলো ফিরিয়ে দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে উত্তরবঙ্গ থেকে কোনো বাস যাচ্ছে না।