বিনয় কৃষ্ণ মুখোপাধ্যায় লিখতেন যাযাবর নামে। অসাধারণ সেই কলমের গাঁথুনী এখনো ঝাঁকি দেয় আমাদের।যাযাবরের দৃষ্টিপাতের দুটি লাইন এখনো মনে গেঁথে আছে- ‘প্রেম জীবনকে দেয় ঐশ্বর্য, মৃত্যুকে দেয় মহিমা। কিন্তু প্রবঞ্চিতকে দেয় কী? তাকে দেয় দাহ। যে আগুন আলো দেয় না অথচ দহন করে, সেই দীপ্তিহীন অগ্নির নির্দয় দাহনে পলে পলে দগ্ধ হলেন কান্ডজ্ঞানহীন হতভাগ্য চারুদত্ত আধারকার। ’মানুষের জীবনে কত আক্ষেপ থেকে যায়। অভিনেত্রী কবরীরও আক্ষেপ ছিল। সে আক্ষেপটা তিনি চলে যাওয়ার পর সামনে আসে। তিনি বলেছেন, ‘আমার একটা দুঃখ রয়ে গেল, জীবনে আমি একজন ভালো বন্ধু পেলাম না, ভালো স্বামী পেলাম না। সন্তানরা অনেকটা যার যার মতো করে আছে। কিন্তু সঙ্গ দেওয়ার মতো একজন ভালো মানুষ আমি পাইনি, যাকে বলতে পারি, এসো, এক কাপ চা খাই, একটু গল্প করি। এটাই হয়তো মানুষের জীবন। তবে মানুষের চাওয়ার তো শেষ নেই। মনে হয়, একজন বন্ধু যদি থাকত, তাহলে যখন-তখন তার সঙ্গ পেতাম। এই আনন্দটুকু আমি পাইনি। এটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় আফসোস। ’ মতিউর রহমানকে দেওয়া তাঁর সাক্ষাৎকারটি পড়েছিলাম। নিজের অজান্তে হয়তো অনেক কথা বলে গেছেন। সুখ-দুঃখ শেয়ার করেছেন। এভাবে সবাই পারে না। সবাই বলে না। কবরী জীবনের আরেকটি বড় ঘটনাও সাক্ষাৎকারে নিয়ে আসেন। কিশোরী বেলায় তাঁকে ভালোবাসতেন একজন। কবরী জানতেন। কিন্তু তাদের সেই ভালোবাসার আর প্রকাশ ঘটেনি। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে বিশাল অবস্থান পাওয়া কবরীকে একবার চট্টগ্রামের ফরিদাবাদ এলাকার একটি অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করা হয়। তিনি সে অনুষ্ঠানে যোগ দিলেন। যোগদানের কারণও ছিল। প্রথম জীবনের সেই ভদ্রলোক থাকতেন পরিবার-পরিজনের সঙ্গে সেই এলাকায়। কবরী ভাবলেন তাদের দেখা হবে। তিনি গেলেন। কিন্তু অবাক হলেন অনুষ্ঠানে সেই ভদ্রলোককে না দেখে। অনুষ্ঠান শেষে একটি ছেলে এসে বলল, আপনি আমার বাবাকে চিনতে পারেন। তার নাম অমুক। তিনি খুব অসুস্থ। অনুরোধ করেছেন আপনি যদি একবার তাকে দেখতে যান। কবরী দেখতে গেলেন সেই ভদ্রলোককে। দীর্ঘদিন বিছানায় শুয়ে থাকা মানুষটি স্বাভাবিকভাবে কথা বললেন, মজাও করলেন পুরনো স্মৃতিগুলো নিয়ে। কবরী ঢাকা ফিরলেন। কিছু দিন পরই সেই ভদ্রলোকের মেয়ের ফোন পান। মেয়েটি জানায়, কবরীর সঙ্গে সাক্ষাতের কয়েক দিন পরই মারা গেছেন ভদ্রলোক। হয়তো এত দিন অসুস্থ হয়ে বেঁচেছিলেন যৌবনের প্রথম ভালোবাসার মানুষটির সঙ্গে শেষ সাক্ষাতের অপেক্ষায়।লড়াই করে বেঁচে থাকা মানুষের জীবন বড় অদ্ভুত। অনেক হিসাব-নিকাশ মেলানো যায় না। করোনাকালের শুরুতে বেশ কয়েকটি মৃত্যুর কথা জানি। ঢাকার বিত্তবান পরিবার। সন্তানরা থাকেন আমেরিকায়। করোনা হয়ে মারা গেলেন বাবা-মা। সন্তানরা কেউই আসতে পারলেন না শেষ মুহূর্তে। অংশ নিতে পারেননি দাফন, জানাজায়। শেষ দেখাটাও হয়নি। বড় কষ্টকর চারপাশের সব খবর। করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের এ মুহূর্তে প্রতিদিন ফোন ধরতে ভয় করে। ফেসবুক খুলি মনের মাঝে অজানা আশঙ্কা নিয়ে। চারদিকে শুধু মৃত্যুর সংবাদ। কোনো ভালো খবর নেই। প্রিয় মানুষরা চলে যাচ্ছেন। জন্মের পর মৃত্যু অবশ্যই হবে। দাদি বলতেন, বিধির বিধান কে করিবে খন্ডন! বিধি যা সিদ্ধান্ত নিয়ে রেখেছেন তাই তো হবে। কিন্তু সবকিছু এমন কেন হবে? সেদিনের আরেকটি খবরে মনটা ভেঙে যায়। একাকিত্বকে সহ্য করতে না পেরে মুগদা হাসপাতালে একজন করোনা রোগী আত্মহত্যা করেছেন। নিজের সব ছিল। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা ছিলেন পরবাসে। আক্রান্তের পর দেখেছেন পাশে আপনজন কেউ নেই। আইসিইউতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিজেকে নিতে হচ্ছে। আল্লাহ নেওয়ার আগে নিজেই চলে গেলেন।রাজধানীতে অনেক মানুষ একাকী থাকেন। আগে সময় কাটাতে কেউ যেতেন মসজিদ, মন্দিরে। কেউ যেতেন ক্লাবে। শেষ বয়সে স্বামী স্ত্রীর নিঃসঙ্গ জীবন। সন্তানরা থাকেন বিদেশ। অধ্যাপক ড. তারেক শামসুর রেহমানের বেলায়ও তাই হয়েছিল। বুকভরা একাকিত্ব নিয়েই চলে গেছেন। স্ত্রী ও মেয়ে থাকতেন আমেরিকায়। অনেক দিন থেকে ভদ্রলোককে জানি। ঘনিষ্ঠতা তৈরি হয় ২০০০ সালে এটিএন বাংলায় কাজ করার সময়। তখনো এটিএনে নিউজ চালু হয়নি। তিনি একটা টক শো করতেন। আমি করতাম আরেকটা। মাঝে অনেক দিন সাক্ষাৎ নেই। বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে দেখা হতো। কথা হতো। কিছু দিন আগে হঠাৎ মনে পড়ল। নিউজ টোয়েন্টিফোরের মেহমুদকে বললাম তারেক শামসুর রেহমানকে ফোন দাও। মোদি ইস্যুতে টক শোয় আনো। মেহমুদ ফোন করে অনুরোধ করলেন। আমার কথাও বললেন। তিনি আপাতত কোনো অনুষ্ঠানে আসতে অপারগতা প্রকাশ করেন। পরে আসবেন বলে জানান। সেই মানুষটি হুট করে চলে গেলেন। উত্তরায় থাকতেন একাকী। পুলিশ তালা ভেঙে লাশ উদ্ধার করেছে। হায়রে মানুষের জীবন! এমন মৃত্যু কাম্য নয়।যা কাম্য নয় এখন তাই হচ্ছে। করোনাকাল আমাদের সবকিছু বদলে দিয়েছে। জানিয়ে দিয়েছে এ অসুখটি হলে কেউ পাশে থাকবে না। সবাই সরে যাবে। মৃত্যুর সময় অসুস্থ মানুষটি দেখবেন তিনি একা। প্রিয়জনদের কেউ হাতটি ধরে বসে নেই। আইসিইউতে যাওয়ার মুহূর্তে কেউ পাশে নেই। অবস্থার আরও অবনতি হলে একাকী যেতে হবে লাইফ সাপোর্টে। চিকিৎসক, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ যোগাযোগ করবেন আত্মীয়-পরিজনের সঙ্গে। তারা বলে দেবেন লাইফ সাপোর্ট খুলে নিন। তারপর দায়সারা দাফন-কাফন। করোনা আক্রান্তদের দাফনে অনেক প্রতিষ্ঠান হয়েছে। লাশটি নিয়ে যায় বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন। তারপর দাফনকাজ সম্পন্ন করে। আপনজন কেউ থাকে না। জীবনের শেষ আক্ষেপ শোনানোর মতো কেউ থাকে না। অনেক দাপুটে মানুষ নীরবে চলে গেছেন। দেখা গেল, হাঁটতে হাঁটতে হাসপাতালে প্রবেশ করছেন। বের হচ্ছেন লাশ হয়ে। মৃত্যুর পর স্বজনদের হিসাব-নিকাশ সম্পদের ভাগাভাগি। সেরা চিকিৎসকরা এখন অসহায়। তারাও জীবন দিচ্ছেন। আল্লাহর দুনিয়ায় কোনো কিছুরই স্থায়িত্ব নেই। হুটহাট করে শুধুই শেষ বিদায়ের খবর। সারাক্ষণই মৃত্যুসংবাদ।গেল বছর এমন সময়ে আক্রান্ত ছিলাম। তখন করোনা মানে ভয়াবহ আতঙ্কের বিষয়। কেউ কারও নয়। হাসপাতালে চিকিৎসা নেই। আপনজনদের সহানুভূতি নেই। সন্তান ফেলে দিচ্ছেন করোনা আক্রান্ত মাকে। পাড়া-পড়শি পিটিয়ে মারছে রোগীকে। বাজে একটা অবস্থা। শুধু মুগদা আর কুর্মিটোলা হাসপাতাল রোগী নিত। কারও বাড়িতে করোনা হলে লাল পতাকা টানিয়ে দেওয়া হতো। গ্রামে কেউ কোয়ারেন্টাইনে গেলে ১০ গ্রামের মানুষ ভিড় জমাত কোয়ারেন্টাইন দেখতে। এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তখনকার মহাপরিচালক বলেছিলেন, সহজে করোনা যাবে না। মুহূর্তে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম তাকে তুলাধোনা করল। তাই ভয়ে ভয়ে পরিবার আর দু-চার জন বন্ধুবান্ধব-সহকর্মী ছাড়া কাউকে প্রথম করোনার খবর জানালাম না। অফিস সহকর্মীরা অনুমান করলেন। আমি হোম অফিস করছিলাম। ভাবখানা এমন আমার কিছু হয়নি। অদ্ভুত আঁধারে দেশ। এক কঠিন ভয়াবহ পরিস্থিতি। আমরা সে পরিস্থিতি পার করেছি। দেখতে দেখতে দিন চলে যায়।মানুষ বুঝে গেছে মহামারীর সঙ্গে লড়াই করে বাঁচতে হবে। জীবনের সঙ্গে চলবে জীবিকার লড়াই। এ লড়াইতেও তৈরি হচ্ছে নানামুখী জটিলতা। সে জটিলতায় তিনজন দায়িত্ববান মানুষকে রাজপথে ক্ষমতার দম্ভ করতে দেখলাম। কার কত ক্ষমতা সবাই নিজেরটার জানান দিচ্ছিলেন। সবার বাবাই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। সবাই সরকারি কর্মকর্তা। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হওয়া অবশ্যই গর্বের বিষয়। এ নিয়ে কারও কারও ট্রল করাটা বাজে মনে হয়েছে। আবার সেই তিন কর্মকর্তাও এভাবে চিৎকার না করলেও পারতেন। মানুষের সামনে সম্মানিত অবস্থানে থেকে নিজেদের এভাবে ছোট কেন করবেন? সম্মান ও মর্যাদা কাজের ওপরই নির্ভরশীল। অন্য কোনোভাবে নয়। এ আমলে অনেকে অকারণে নিজেদের জাহির করেন। বিশেষ করে ২০১৯ সালের ভোটের পর এ প্রক্রিয়াটা বেশি দেখছি। এ ধরনের কার্যক্রম গ্রহণযোগ্য নয়। ক্ষমতা দুই দিনের। মহামারী জানিয়ে দিয়েছে দুনিয়াটা আসলেই ক্ষণস্থায়ী। ক্ষমতার বড়াই করে কী হবে? পেশাগত জীবনে অনেক মন্ত্রী, এমপি, দাপুটে সচিব, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ক্ষমতাধর, আমলা কামলা দেখেছি। ক্ষমতায় থাকাকালে কথা বলতে পারেন না অহংকারে। ক্ষমতা শেষ হলে বিড়ালের মতো চুপসে যান। কথাও বলেন চোরা চোরা চোখে। বছর তিন আগের কথা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপকের সঙ্গে কথা হচ্ছিল। তিনি আধুনিক মানুষ। চিন্তা-চেতনায় প্রগতিশীল। টক শোয় বড় বড় কথা বলেন। তিনিই আমাকে প্রথম বললেন হেফাজত ক্ষমতার স্বপ্ন দেখে। সংসদে যেতে চায়। তিনিসহ অনেক শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে। আগামী নির্বাচন ঘিরে তাদের একটা স্বপ্ন আছে। বুঝতে পারলাম হেফাজত একদল সাদাকালো বুদ্ধিজীবীর কবলে পড়েছে। সর্বনাশা বুদ্ধি নিয়ে বারোটা বাজাবে নিজেদের এবং দেশের। কিছু মিডিয়ার পন্ডিত ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেই অধ্যাপক সাহেবরা কী পরামর্শ দিয়েছিলেন জানি না। রাজনৈতিক দলের একটা স্বচ্ছতা থাকে। অরাজনৈতিক জঙ্গি ধ্বংসাত্মক চিন্তায় দেশের জন্য কিছু করা যায় না। তারা ভেবেছিল সমঝোতার ভাবে থেকে যা খুশি তা করতে পারবে। সরকার উচ্ছেদের ঘোষণা দিতে পারবে, মিডিয়ার গাড়ি ভাঙচুর, সাংবাদিকদের ওপর হামলা, নারী সাংবাদিককে হেনস্তা, ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁর স্মৃতিচিহ্ন পোড়াতে পারবে। কেউ কিছু বলবে না। কুষ্টিয়ায় বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্যের ওপর প্রথম আঘাত হেনে ঔদ্ধত্যের সূচনা। বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণ হলে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেওয়ার ঘোষণাসহ অনেক কান্ড ঘটিয়েছেন। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন। ভেবেছেন সমঝোতার নামে সরকারের কাছ থেকে অনেক নিয়েছেন। হুমকি-ধামকি তান্ডব করে ক্ষমতা নেবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে শেখ হাসিনা লাগাম টেনেছেন। হেফাজত এখন টের পাচ্ছে বাস্তবতা কঠিন। প্রয়াত সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত বলেছেন, ‘বাঘে ধরলে ছাড়ে, শেখ হাসিনা ধরলে ছাড়েন না। ’সেদিন এক বন্ধু ফোন করলেন। বললেন, কান্ড দেখেছেন, মামুনুল হক আটকের পর সারা দেশে কোনো সভা-সমাবেশ হয়নি। অথচ সে রাতেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম সয়লাব মিছিল বিক্ষোভের ভিডিও আর ছবি দিয়ে। কী কারণে এ মিথ্যাচার জানি না। সরকার প্রথম দুই দিন ঘুমিয়ে ছিল। পরে অবশ্য র্যাব-পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে গুজব ছড়ানোর দায়ে। ডিজিটাল দুনিয়া এখন আওয়ামী লীগের বিরোধী শিবিরের হাতে। যা খুশি তা হচ্ছে, দেখার কেউ নেই। এমনকি পাল্টা জবাবও নেই। আইসিটির টপ আমাকে বার্তা দিলেন, এসব দেখার দায়িত্ব তাঁর নয়, অন্যদের। যৌক্তিক কথা। রাজনৈতিক সরকারের মন্ত্রীদের কাজটা কী? কিছু দিন আগে জিটিভিতে ধারাবাহিক রিপোর্ট দেখছিলাম আইসিটি মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে লুটপাট কীভাবে হয়। কাজ না করেই ভুয়া ঠিকানা ব্যবহার করে কীভাবে বিল নিয়ে যায়। রিপোর্টার সংশ্লিষ্ট ঠিকানা ঘুরে ঘুরে কাজ না করে বিল নেওয়া কাউকে পাননি। এ রিপোর্ট দেখার পর বুঝতে পারলাম আইসিটির কাজ কী! ভালো। আদবকায়দা দেখিয়ে সবাইকে বিমোহিত করে রাখাও একটা বড় সাফল্য।অনেক দিন পর ’৯৬ সালের সরকারের তথ্য প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক আবু সাইয়িদের কথা মনে পড়ছে। দাপট আর ক্ষমতার শেষ ছিল না। চোখের সামনে দেখেছি নাঙ্গলকোটের এমপি জয়নাল আবেদীন ভূইয়া আর মির্জা আজম তথ্য প্রতিমন্ত্রীর অফিসে গেলেন। তিনি অফিসে থেকেও দুই এমপিকে ঢুকতে দেননি। সে সময় তিনি অন্য গল্পগুজবে ছিলেন। সরকারের মেয়াদ শেষে বিএনপি বানাল ‘শাবাশ বাংলাদেশ’। আওয়ামী লীগবিরোধী সর্বোচ্চ ভিজুয়াল প্রচারণা। কাজ করতাম এটিএন বাংলায়। একদিন আমার কাছে এলেন সাবেক কূটনীতিক মাহমুদ আলী (গত মেয়াদে পররাষ্ট্রমন্ত্রী) ও যুগ্মসচিব আজিবুর রহমান (পরে তথ্য কমিশনার)। দুজনই বললেন, নেত্রী পাঠিয়েছেন শাবাশ বাংলাদেশের পাল্টা কিছু করার জন্য। আমার পরামর্শ চান তারা। বললাম, সাইয়িদ সাহেবের কাছে যান। তিনি মন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। জবাবে দুজনই বললেন, তিনি কিছু করেননি। ভোট করতে গেছেন এলাকায়। সে ভোটে অবশ্য হেরেছিলেন। তাদের নিয়ে গেলাম সৈয়দ বোরহান কবীরের অফিসে। বানানো হলো ‘জয় বাংলার জয়’। এটিএন বাংলায় দুটি অনুষ্ঠানই প্রচার হয়। কিন্তু ‘শাবাশ বাংলাদেশ’ অনুষ্ঠানটি দীর্ঘ প্রস্তুতি নিয়ে নির্মাণ করা। হঠাৎ তৈরি করা ‘জয় বাংলার জয়’ কোনো অবস্থানই পেল না দর্শকের কাছে। এখনকার মন্ত্রী সাহেবরা দায়িত্ব নেন না। তারা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ নীতিতে আছেন। সবাই তাকিয়ে থাকেন একজনের দিকে। তারা বোঝেন না দায়িত্ব দিলে পালন করতে হয়। তাদের আগেও অতীতে অনেকে দায়িত্ব পেয়েছিলেন। আর দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করার কারণেই ছিটকে পড়েছেন। ’৯৬ সালের দিকে গেলাম না। ২০০৯ সালের পর থেকে কত মন্ত্রী এলেন-গেলেন হিসাব নেই।বঙ্গবন্ধুর মেয়েকে কাছ থেকে দেখেছি। তাঁর মন্ত্রীরা দায়িত্ব না নিলেও তিনি সবকিছুরই দায়িত্ব নেন। কোনো কিছু পাশ কাটিয়ে যান না। সংকট-সমস্যা, জীবন-মৃত্যু কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করেন না। এ মুহূর্তে মহামারীর কারণে হয়তো তিনি বের হন না। কিন্তু সবকিছুই মনিটর করেন কঠোরভাবে। প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন নির্ভীকচিত্তে। একটা নিজস্ব ক্যারিশমা ও স্টাইল নিয়ে তিনি এগিয়ে চলেছেন। ধরে রেখেছেন সবকিছু। তাঁর পথচলা হাজার কিলোমিটার গতির। জানেন বঙ্গবন্ধুর আদর্শে উজ্জীবিত কর্মী বাহিনী তাঁর পাশে আছে, থাকবে। বিপদ দেখলে সবাই ভিতরের হতাশা কাটিয়ে তাঁর প্রশ্নে আরও আপসহীন হবেন।