নিজস্ব প্রতিনিধি : এখন খালি পায়ে মানুষ দেখা যায় না, ছেঁড়া কাপড় পরা মানুষ দেখা যায় না, আকাশ থেকে কুঁড়েঘর দেখা যায় না। এগুলো হচ্ছে বাস্তবতা, কেউ স্বীকার করুক আর না করুক।বাংলাদেশ আজ বদলে গেছে। ১২ বছর আগে যে ছেলেটি বিদেশ গেছে সে এখন দেশে এলে তার গ্রাম চিনতে পারে না। কেউ উন্নয়ন দেখতে পাক বা না পাক এটাই বাস্তবতা। মঙ্গলবার (৩০ মার্চ) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে ডিআরইউ আয়োজিত আলোচনা সভা ও সমসাময়িক প্রসঙ্গে বক্তব্যকালে তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ একথা বলেন। আলোচনা সভা শেষে সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত ‘সিটি ব্যাংক-ডিআরইউ ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট’ বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন তথ্যমন্ত্রী।গণমাধ্যমের স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের গণমাধ্যম যে পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করে অনেক উন্নত দেশেও এ পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করে না। যুক্তরাজ্যে একটি ভুল সংবাদ পরিবেশনের কারণে ১৬৭ বছরের পুরনো পত্রিকা নিউজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড, যেটি এক সময় বহুল প্রচারিত ইংরেজি দৈনিক ছিল, সেটি বন্ধ হয়ে যায়। বিবিসিকে পৃথিবীর প্রথম সারির গণমাধ্যম হিসেবে ধরা হয়, সেখানে একজন এমপির বিরুদ্ধে অসত্য সংবাদ পরিবেশনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলা হয়, সেজন্য বিবিসির প্রধান নির্বাহী থেকে শুরু করে পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। ‘যুক্তরাজ্যে প্রতিনিয়ত ভুল সংবাদ পরিবেশনের জন্য বিভিন্ন গণমাধ্যমকে মোটা অংকের জরিমানা দিতে হয়। আমাদের দেশে কোনো একজনের বিরুদ্ধে ভুল সংবাদ পরিবেশন করা হলে সংবাদটি প্রথম পেজে দিলেও প্রতিবাদটি ছাপা হয় তৃতীয় পেজে ছোট করে। আর টিভিতে কোনো অসত্য প্রতিবেদন হলে তার প্রতিবাদ তো কোনোভাবে সেখানে যায় না। ’ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন সারাদেশের সবার ডিজিটাল নিরাপত্তার জন্য, এটি কোনো একটা বিশেষ গোষ্ঠীর জন্য নয়। কোনো সাংবাদিকের চরিত্র হরণ করে বা তার পরিবারের বিরুদ্ধে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে লেখা হলে তিনি কোন আইনের বলে প্রতিকার পাবেন, ডিজিটাল আইনের মাধ্যমেই কিন্তু তিনি প্রতিকার পাবেন। ডিজিটাল যখন ছিল না তখন ডিজিটাল আইনের প্রয়োজনও ছিল না। তবে আইনের যেন অপপ্রয়োগ না হয়, আমিও আইনের অপপ্রয়োগের বিপক্ষে। এখানে যাতে সংবাদিক অহেতুক নিগৃহীত না হন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, গত ৫০ বছরে গণমাধ্যমে অনেক বিকাশ ঘটেছে। ১২ বছর আগে বাংলাদেশের দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা ছিল সাড়ে ৪শ, এখন দৈনিক পত্রিকার সংখ্যা সাড়ে ১২শ। ১২ বছর আগে টেলিভিশনের সংখ্যা ছিল ১০টি, প্রাইভেট টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা প্রথমবার দায়িত্ব নেওয়ার পর। এখন অনএয়ারে আছে ৩৪টি টিভি চ্যানেল, আরো অনএয়ারে আসার অপেক্ষায় আছে ১১টি। ‘অনলাইন গণমাধ্যম ১২ বছর আগে হাতে গোনা কয়েকটি ছিল। এখন কয়শ কিংবা কয় হাজার সেটি দেখার বিষয়। তবে আমাদের কাছে ৫ হাজার আবেদন জমা পড়েছে নিবন্ধনের জন্য। আমরা ইতোমধ্যে দিয়েছি, আরো কয়েকশ দেওয়া হবে। অর্থাৎ নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চলছে। এভাবেই গণমাধ্যমের গ্রোথ হয়েছে। ’ ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ৫০ বছর আগে বাংলাদেশ যখন স্বাধীনতা অর্জন করে তখন এক কোটি মানুষ ভারতে শরণার্থী। দেশের অভ্যন্তরে আরো দুই কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত। সব যোগাযোগ ব্যবস্থা বিধ্বস্ত। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ শূন্য, এমন পরিস্থিতিতে দেশের যাত্রা শুরু হয়েছিল। কিছু প্যারামিটার অর্জন করায় বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশে উন্নীত করেছিলেন। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীতে এসে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার ঘোষণা এসেছে। এটি জাতির জন্য বড় অর্জন। আমরা খাদ্য ঘটতির দেশ ছিলাম। পঞ্চাশের দশকে দেশে জনসংখ্যা যখন সাড়ে ৪ কোটি, আজ জনসংখ্যা ১৭ কোটি। মাথাপিছু জমির পরিমাণ অনেক কমেছে। পৃথিবীতে বাংলাদেশের মাথাপিছু জমির পরিমাণ সবচেয়ে কম। সেই বাংলাদেশ বিশ্ব খাদ্য সংস্থাকে অবাক করে দিয়ে আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। আমরা খাদ্যে উদ্বৃত্ত দেশ হয়েছি।ডিআরইউ’র সভাপতি মুরসালিন নোমানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মসিউর রহমান খান। এসময় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক নেতা মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, শওকত মাহমুদ, রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সভাপতি শাখাওয়াত হোসেন বাদশা প্রমুখ।