নিজস্ব প্রতিবেদক : আজ ১২ মার্চ। একাত্তরের এ দিনে আগের কয়েক দিনের মতো বাংলাদেশ ছিল স্বাধীনতা লাভের আকাক্সক্ষায় আন্দোলন সংগ্রামে উত্তাল। বাংলাদেশের সব কিছুই চলছে বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে। প্রতিটি দিনই দেশের মানুষকে এগিয়ে নিচ্ছে স্বাধীনতার দিকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঘোষিত অসহযোগ আন্দোলন আজও অব্যাহত থাকে। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে সরকারি-আধাসরকারি কর্মচারীরা আজও স্বতঃস্ফূর্তভাবে কর্মস্থল বর্জন করেন। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তালা ঝোলে। সরকারি-বেসরকারি ভবন, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসগৃহ এবং যানবাহনে কালো পতাকা ওড়ে। সারাদেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক, ছাত্র-শ্রমিক ও পেশাজীবী সংগঠনের উদ্যোগে সভা, সমাবেশ ও শোভাযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। সারা বাংলায় সংগ্রাম পরিষদ গঠনের মাধ্যমে স্বাধীনতা আন্দোলনের জন্য দুর্জয় শপথ নেয়া হয়।
জাতীয় পরিষদ সদস্য মোহাম্মদ জহির উদ্দিন পাকিস্তান সরকার প্রদত্ত খেতাব বর্জন করেন। রাওয়ালপিণ্ডিতে এক সরকারি ঘোষণায় আগামী ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবসের নির্ধারিত সম্মিলিত সশস্ত্র বাহিনীর কুচকাওয়াজ, খেতাব বিতরণ ও অন্য অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়।
চলচ্চিত্র প্রদর্শকরা আজ বঙ্গবন্ধুর অসহযোগ আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ঢাকাসহ সারাদেশে অনির্দিষ্টকাল প্রেক্ষাগৃহ বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেন।
ময়মনসিংহে এক জনসভায় ন্যাপ প্রধান মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানী ৭ কোটি বাঙালির মুক্তি সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বের প্রতি তার সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করে বলেন, আমি জানি শেখ মুজিবুর রহমান কখনই জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করতে পারে না। আপনারা শেখ মুজিবের ওপর সর্ম্পূণ ভরসা রাখুন। মওলানা ভাসানী পশ্চিম পাকিস্তানি প্রতিক্রিয়াশীল নেতাদের উদ্দেশে জনসভায় বলেন, আল্লাহর ওয়াস্তে আপনারা বাঙালিদের ব্যাপারে নাক গলাবেন না।
লাহোরে স্থানীয় বুদ্ধিজীবী, রাজনৈতিকসহ ছাত্র, শ্রমিক ও পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা এক যুক্ত বিবৃতিতে অবিলম্বে বঙ্গবন্ধুর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের দাবি জানান।
রেডিও পাকিস্তান করাচি কেন্দ্রের খ্যাতনামা বাংলা খবর পাঠক সরকার কবীর উদ্দিন বেতারে বঙ্গবন্ধুর খবর প্রচারে নিয়ন্ত্রণ আরোপের প্রতিবাদে রেডিও পাকিস্তান বর্জন করেন। বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের এক বিবৃতিতে স্বাধীনতা সংগ্রাম বানচাল প্রয়াসী বৃহৎ ব্যবসায়ী ও মজুদদারদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়। ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের অন্য এক বিবৃতিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ব্যবহারের জন্য কোন জ্বালানি সরবরাহ না করতে সংশ্লিষ্ট সরবরাহকারীদের নির্দেশ দিয়ে বলা হয়, গণদুশমনদের কোনভাবে সাহায্য করা হলে তেল কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে চরম ব্যবস্থা নেয়া হবে।