খুলনার ৮ নারীর নারী দিবসের ভাবনা

খুলনার ৮ নারীর নারী দিবসের ভাবনা
খুলনা: প্রতিবছর নারী দিবস ৮ মার্চ এলেই নারীর অধিকার, ক্ষমতায়ন, পদায়নসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হয়। নারীদের জন্য নিবেদিত গোটা একটা দিন।এদিনটিকে নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠার দিন হিসেবে বিশ্বজুড়ে চিহ্নিত করা হয়।নারী দিবস নিয়ে খুলনার নারী নেত্রী ও উদ্যোক্তাদের রয়েছে নানা ভাবনা। অনেক চড়াই-উৎরাই পার করে স্বনামে প্রতিষ্ঠিত ৮ নারী কি ভাবছেন তা তুলে ধরা হলো ।অ্যাডভোকেট শামীমা সুলতানা শীলু, বাংলাদেশ ওমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিডব্লিউসিসিআই) খুলনা বিভাগীয় প্রধান।বর্তমান সরকার নারীদের এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছেন। আমাদের দেশের অর্ধেক নারী। নারীদের এগিয়ে আনতে না পারলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো না। আমরা যে উন্নত দেশের দিকে ধাপিত হচ্ছি সে কথা মাথায় রেখে প্রতিটি ঘরে ঘরে নারীদের অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নে আসতে হবে। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ই নারী মুক্তির পূর্ব শর্ত। নারীদের যেমন কৌশলী হতে হবে। নারীকে ঘর-সংসার ঠিক রেখে সমান তালে এগিয়ে যেতে হবে। তেমনি ঘরের কাজে তাদের সহযোগিতায় পুরুষকে এগিয়ে আসতে হবে। নারী যে মানুষ এটা যদি আমরা ধারণ করি তাহলেই নারীরা এগিয়ে যেতে পারবে। দেশে নারীদের মর্যাদা বেড়েছে সন্দেহ নেই। অথচ তারপরও দেশে নারীরা ঘরে-বাইরে, পথেঘাটে নির্যাতিত হচ্ছে। ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হচ্ছে। চাকরিতে হচ্ছে বৈষম্যের শিকার। এবারের নারী দিবসে প্রত্যাশা থাকবে নারীর প্রতি এসব অন্যায় অবিচার বন্ধ হোক।মুর্শিদা আক্তার রনি, জাহানাবাদ সি-ফুডের চেয়ারপার্সন।তিনি বলেন, নারীরা অদম্য মনোবল নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। নারী আজ ঘর-সংসার সামলিয়ে পুরুষের সঙ্গে সমান তালে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি পুরুষের জীবনে নারীর অবদান অনেক। নারী জীবনে কতখানি সফল সেটা নিরূপণের মাপকাঠি সময়ই বলে দেবে, বলে দেবে তার কর্ম। নারীকে সংসার সামলিয়ে জীবিকার প্রয়োজনে অনেকের সঙ্গে চলতে হয়, অফিস বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সামলাতে হয়। এ চিত্র আধুনিক শিক্ষিত সমাজে যেমন আছে, তেমনি আছে খেটে খাওয়া তৃণমূল নারীর সমাজেও। চলার পথে নারীরা বিভিন্নভাবে বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন। এবারের নারী দিবসে নারীর জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মস্থল সর্বস্থানেই একটি স্বাভাবিক পরিবেশ প্রত্যাশা করছি।কানিজ সুলতানা, এক্সক্লুসিভ কানিজ হেয়ার অ্যান্ড বিউটি পার্লারের স্বত্বাধিকারী।তিনি বলেন, আমাদের দেশে নারীর অবস্থান আগের থেকে কিছুটা উন্নত হয়েছে। শিক্ষা-দীক্ষায় নারী এখন অনেক এগিয়ে যাচ্ছে। একটা ছেলেকে নিয়ে পরিবার যত বিব্রত হয়, মেয়েকে নিয়ে কিন্তু ততটুকু নয়। মেয়েরা যেভাবে মা-বাবার দুঃখ-কষ্ট বোঝে ছেলেরা অনেক ক্ষেত্রে ততটা বোঝে না। আগে আমাদের যেকোনো নাগরিকের পরিচয় ছিল বাবার নামে। এখন আইন করে বাবা এবং মা উভয়ের নামের পরিচয়ে আমরা পরিচিত। তারপরও নারীর নিরাপত্তার অভাব, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নারীর অবমাননা ও শারীরিক নির্যাতন নিত্যদিনের ঘটনা। আমি মনে করি, নারীরা যেদিন পরনির্ভরতা কমিয়ে মানসিকভাবে সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে, সেদিন নারী দিবসের আর প্রয়োজন হবে না।

আয়শা আক্তার কেয়া, কো-ফাউন্ডার এবং প্রেসিডেন্ট ইয়ুথ ফর চেঞ্জ বাংলাদেশ।তিনি বলেন, নারী দিবসে আমার প্রত্যাশা নারীর মূল্যায়ন হোক তার কর্মে, জ্ঞানে, বুদ্ধির প্রসারতায়, দূরদর্শিতায়, অর্থনীতিতে অবদানে, চিন্তার উৎকর্ষতায়, মননে-মগজে, সৃষ্টিশীলতায়। নারী আলোকিত হোক তার অনন্য স্বকীয়তায়, সম্মান, ভালবাসা, সফলতায় বিজয়ী হোক তার আপন সত্তায়। অহংকার থেকে দূরে থেকে বিনয়ী মুকুটে নারী জয় করুক ভুবন। নারী দিবসে সব নারীর প্রতি শ্রদ্ধা।খুলনা বিভাগীয় অনলাইন বিজনেস গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা লিন্ডা ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, আমি চাই নারী স্বাধীনতা। নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেই কেবল ৮ মার্চের প্রকৃত তাৎপর্য আমরা অনুধাবন করতে পারবো। নারী দিবসে সেই চেতনা যেন জোরালো ভূমিকা পালন করে সেই স্বপ্নই বাংলাদেশের নারী সমাজ দেখবে বলে আশা করছি। মূল বিষয় হলো নারী মানুষ। এটি সবাইকে উপলব্ধি করতে হবে। স্বল্পপুঁজি নিয়েও নারীরা এখন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে এমন অনেক নজির আছে খুলনায়। নারীদের প্রতিষ্ঠিত হয়ে দাঁড়ানোর খুব ভালো মাধ্যম হতে পারে অনলাইন ব্যবসা।ফাতেমা আফরোজ, ওনার অফ খুলনা অনলাইন শপিং। নানা ক্ষেত্রে খুলনার নারীর অংশগ্রহণ বাড়ছে। ঘরে বসে ব্যবসা করে স্বাবলম্বী হওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন তারা। তাই অনলাইন ব্যবসায়ের দিকে ঝুঁকছেন নারী উদ্যোক্তারা। সংসার সামলানোর পাশাপাশি স্বাধীনভাবে এ ব্যবসায় করতে পারা যায় বলে আগ্রহ বাড়ছে সাধারণ নারীদের। তবে, সব শ্রেণির নারীর ক্ষমতায়ন এখনো হয়নি। নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখছেন নারীরা।সময় এসেছে নারীকে নিজ পরিচয়ে পরিচিত হওয়ার। নারীর উন্নয়নের যেসব সমস্যা, এর সমাধানে দারিদ্র্য বিমোচন, শিক্ষা, অর্থনৈতিক মুক্তি ও মানসিকতা পরিবর্তন প্রয়োজন। আমাদের সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে হবে নারী অধিকার রক্ষায়। যাতে কোনো নারী পিছিয়ে না পড়ে।জ্যোতি ফুড গার্ডেনের স্বত্বাধিকারী ফাতেমা জ্যোতি  বলেন, আমি একজন নারী উদ্যোক্তা। আমি আমার কাজের মধ্য দিয়ে যেমন আমার স্বপ্নকে পৌঁছে নিতে চাই আমার কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে, ঠিক তেমনি আমি চাই আজকের দিনে সব নারীই সুশিক্ষায় শিক্ষিত হোক। একজন শিক্ষিত সচেতন নারীই যেমন পারেন সংসার টাকে সুন্দর করে সাজাতে, ঠিক তেমনি বদলে দিতে পারেন সমাজের চিত্র। তাই এগিয়ে আসতে হবে সব শ্রেণী-পেশার নারীদের। আজ নারী বোঝা নয়, সমাজ উন্নয়নের কারিগর।যেসব ক্ষেত্রে নারী শুধুমাত্র প্রতিবন্ধকতার জন্য পিছিয়ে রয়েছে সেখানে উপযুক্ত পদক্ষেপ নিতে হবে। সব ধরনের পৃষ্টপোষকতা দিয়ে নারীর চলার পথ সুগম করতে হবে। তবেই নারীরা নিজের যোগ্যতায় প্রকৃত নারী হয়ে উঠবে এটাই আমার প্রত্যাশা।তানিয়া সুলতানা তানি, ফ্যাশন ডিজাইনার ও বিউটিশিয়ান ওমেন্স মেকওভার।ওই ডিজাইনার বলেন, নারীবাদী হওয়া মানে মেয়েদের শক্তিশালী করা নয়, তারা এমনিতেই শক্তিশালী। এই পৃথিবী আমার বিষয়ে কি ভাবছে আমি জানি না। আমি ভাবছি আমি সেরা আর সেটাই সত্যি। মেয়েরা যখন শক্তিরূপা হয়ে ওঠে তখন পৃথিবীতে অনেক বড় পরিবর্তন আসে। ধাপে ধাপে উন্নয়নের মাধ্যমেই আজ নারী এখানে এসেছে। পুরুষের ওপর বাড়তি চাপ কমাতে অনেক নারীই এখন ব্যবসা বাণিজ্যে ঝুঁকছেন। নারী দিবসের প্রত্যাশা নারীর উপর সব ধরনের সহিংসতা বন্ধ হোক।  ধর্ষণ, গণধর্ষণ, যৌন নিপীড়ন, যৌতুকের জন্য নির্যাতন,  হত্যা, নারীকে নৃশংসভাবে হত্যা বন্ধ হোক চিরতরে।

Leave a reply

Minimum length: 20 characters ::

More News...

ফ্যাসিবাদের কারখানা ছিল মাদারীপুর: নাছির উদ্দিন নাছির

মাদকের টাকার জন্য মা’কে হত্যা: নিজেই পুলিশের হাতে ধরা দিলেন ছেলে