সাধন চন্দ্র মণ্ডল : সারাবছর বিক্ষিপ্তভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালানো হলেও ভোক্তা অধিকার রক্ষায় এবার আগ্রাসী মনোভাব নিয়ে মাঠে নেমেছে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর রাজধানীসহ সারাদেশে ইটভাঁটি ও ফার্মেসিসহ নিত্যপণ্যের বাজারে অভিযান শুরু করেছে। ওই অভিযানের প্রথমদিনেই ভোক্তা স্বার্থবিরোধী কর্মকাণ্ডের অপরাধে ৮২টি প্রতিষ্ঠানকে ১৩ লাখ ৩৬ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। পাশাপাশি র্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটও রাজধানীর বিভিন্ন নকল কারখানায় অভিযান চালিয়েছে। রমজানকে সামনে রেখে এবার আগেভাগেই রাজধানীসহ দেশব্যাপী একযোগে এমন ধরনের অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম ও মান নিয়ে অব্যাহত অরাজকতার লাগাম টানাতেই এবারের অভিযান। তার বাইরে এবার ইটের ভাঁটি ও করোনা মহামারীতে স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি মেনে চলার বিষয়টিও অভিযানের আওতাভুক্ত রয়েছে। তাছাড়া রমজানে বিভিন্ন সংস্থার উদ্যোগে একযোগে সমন্বিত অভিযান চালানোরও প্রস্তুতি চলছে। অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইতিপূবে দেশব্যাপী অভিযান চালানো হলেও সেগুলোর পরিধি সীমিত ছিল। কিন্তু এবার নতুন কয়েকটি খাত যোগ করে ব্যাপক আকারে অভিযান চালানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিশেষ করে ইটের ভাঁটির বিষয়টি আগে থাকলেও এবার তার ওপর আরো জোর দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি করোনা মহামারীতে স্বাস্থ্যবিধি সঠিকভাবে মেনে চলার লক্ষ্যও অভিযানের আওতাভুক্ত করা হয়েছে। যারা সঠিকভাবে মাস্ক না পরে বাইরে ঘোরাফেরা করবে তাদের তাৎক্ষণিক জরিমানা করার মতো শাস্তির বিধান রয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার সময় বিজ্ঞ ম্যাজিস্ট্রেট যেখানেই অনিয়ম, অস্বাভাবিকতা দেখতে পাবে, সেখানেই হানা দেবে। কোন ধরনের তদ্বির-সুপারিশ করার সুযোগ থাকবে না।
সূত্র জানায়, সাম্প্রতিক সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান কিছুটা স্তিমিত হওয়ায় ভেজালকারীরা হঠাৎ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান শুধু র্যাবই করে না। সিটি কর্পোরেশন, বিএসটিআই, বিআরটিএ, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরসহ আরও কয়েকটি সংস্থার উদ্যোগেও ভেজাল বিরোধী ও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণে অভিযান চালানো হয়। বর্তমানে সময়ের দাবির প্রেক্ষিতে সেক্টর ভিত্তিক ভ্রাম্যমাণ আদালত নিজ নিজ উদ্যোগে পরিচালনা করা হলেও এখন সমন্বিত উদ্যোগে অভিযান চালানো। কিন্তু মাঝে মাঝে অভিযান জোরদার করা হয়, আবার মাঝে মাঝে স্তিমিত হয়ে পড়ায় ওসব অভিযানের সঠিকভাবে সুফল মিলছে না। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের বাজার তদারকিকালে মাস্কসহ আলু, চাল, পেঁয়াজ, ভোজ্য তেল, আদাসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনী পণ্য যৌক্তিক মূল্যে বিক্রি হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করা হয়। ওই সময় পণ্যের মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, মূল্য তালিকার সঙ্গে বিক্রয় রশিদের গরমিল, পণ্যের ক্রয় রসিদ সংরক্ষণ না করা, অনিবন্ধিত ওষুধ, মেয়াদ উত্তীর্ণ ওষুধ ও পণ্য, নকল পণ্য, ওজনে কারচুপিসহ ভোক্তা স্বার্থবিরোধী বিভিন্ন অপরাধে সারাদেশে বিপুলসংখ্যক প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা আরোপ ও আদায় করা হয়। পাশাপাশি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় র্যাবেরও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চলে। ওসব অভিযানে নকল সিরামিক, ওয়াশিং পাউডার ও ভেজাল খাবারের ওপর র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালতে ৭ লাখ টাকা জরিমানা ও দুটি কারখানা সিলগালা করা হয়। র্যাব সদর দফতরের একটি আভিযানিক দল নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ এবং রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানা এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত কার্যক্রম সম্পন্ন করে। ওই সময় ভ্রাম্যমাণ আদালত নারায়ণগঞ্জ জেলার সিদ্ধিরগঞ্জ এবং যাত্রাবাড়ী ও ডেমরা থানা এলাকার ৫টি নকল সিরামিক, নকল ওয়াশিং পাউডার ও ভেজাল খাবার তৈরির কারখানায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে বিভিন্ন নামীদামী কোম্পানির নাম ব্যবহার করে বিএসটিআইএর অনুমোদনহীন নকল ওয়াশিং পাউডার ও ভেজাল খাবার উৎপাদন, মজুদ ও বিক্রয়ের দায়ে ৫টি প্রতিষ্ঠানকে মোট ৭ লাখ টাকা জরিমানা করে। তাছাড়া বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে মোবাইল কোর্টে প্রায় ২০ লাখ টাকার প্রায় ১৬ টন সিরামিক এবং ৮০০ কেজি ওয়াশিং পাউডার ধ্বংস করা হয় এবং কারখানা সিলগালা করা হয়।
এদিকে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা প্রসঙ্গে র্যাবের মুখপাত্র (পরিচালক) লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, আগের মতো হয়তো অভিযান চোখে পড়ছে না। কিন্তু প্রতিদিনই অভিযান চলছে। বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালানো হচ্ছে। সবই আগের মতো।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক বাবুল কুমার সাহা ভোক্তা ও ব্যবসাবান্ধব একটি সুশৃঙ্খল বাজারব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি মাস্ক পরার প্রতি গুরুত্বারোপ করে সংশ্লিষ্ট সকলকে মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের অনুরোধ জানান। রমজানকে সামনে রেখে এ অভিযান আরো জোরদার করা হবে বলেও তিনি জানান।